কুয়েতি মডেলের এ কী কাণ্ড!
ফিলিপাইনের নারী গৃহকর্মীদের নিয়ে বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন কুয়েতের মডেল সুনদুস আলকাত্তান। তিনি পেশায় নারীদের রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ ও মডেল। আরবীয় অঞ্চলের নারীদের রূপচর্চা ও ফ্যাশন নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
গত মার্চ মাসে ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর সম্প্রতি ওই দেশের গৃহকর্মীদের ব্যাপারে বিশেষ বিধিমালা ঘোষণা করেছে কুয়েতের শ্রম কর্তৃপক্ষ। ওই বিধিমালায় বলা হয়েছে, কুয়েতে কর্মরত ফিলিপাইনের গৃহকর্মীরা সাপ্তাহিক ছুটি পাবেন। কুয়েতে ফিলিপাইনের কোনো গৃহকর্মীর পাসপোর্ট গৃহকর্তা আটকে রাখতে পারবেন না। যদিও কুয়েতের আইনে অন্য গৃহকর্মীদের ব্যাপারে তাঁদের পাসপোর্ট গৃহকর্তার কাছে রাখার কথা বলা হয়েছে।
ফিলিপাইনের গৃহকর্মীদের এই সুযোগ-সুবিধা মেনে নিতে পারেননি সুনদুস। ২০ জুলাই তিনি এই বিধিমালা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং স্ন্যাপচ্যাটে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এ নিয়ে সমালোচনাও করেন। তিনি এই বিধিমালাকে ‘একধরনের মশকরা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সুনদুস ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব যে আপনার বাড়িতে একজন গৃহকর্মী থাকবেন আর তাঁর পাসপোর্ট তিনি নিজের কাছে রাখবেন! এর চেয়েও অদ্ভুত বিষয়, প্রতি সপ্তাহে তাঁদের এক দিন ডে-অফ দিতে হবে! মাসের চার দিন তিনি নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াবেন পাসপোর্ট নিয়ে। তিনি পালিয়ে গেলে আমার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? আর কী বাকি থাকল তবে? নতুন এই আইনের পর আমার ফিলিপাইনের আর কোনো গৃহকর্মীই লাগবে না।’
সুনসুদের এমন মন্তব্যকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে আরবের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুনদুসের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক রূপচর্চা সামগ্রীর প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাক্স ফ্যাক্টর আরাবিয়া’।
পরে এ বিষয়ে সুনদুস বলেন, এখনো তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্র্যান্ড থেকে কিছু জানানো হয়নি। আর এমনটি হয়ে থাকলে তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে কুয়েত, ইসলাম ও হিজাবকে টার্গেট করা হচ্ছে।
নিজের মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এই মডেল বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট নিজেদের কাছে থাকে না, বরং একজনের কাছে জমা থাকে। আর গৃহকর্মীরা আমাদের সঙ্গে বাইরে যাওয়া-আসা করছে, ফলে সপ্তাহে আলাদা করে এক দিন ছুটি লাগবে কেন!’
চলতি বছর কুয়েতে ফ্রিজে ফিলিপাইনের একজন গৃহকর্মীর লাশ পাওয়া যায়। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি মাসে কুয়েতে গৃহকর্মী পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ফিলিপাইন সরকার। পরে মার্চ মাসে একটি সমঝোতা স্মারকে একমত হয় দুই দেশ।
ফিলিপাইন সরকারের মতে, বিভিন্ন দেশে ফিলিপাইনে ২৪ লাখের বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৬ দশমিক ৪ ভাগ বা আড়াই লাখ কর্মী কুয়েতে, যাঁদের অধিকাংশই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।