কেরানীগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহ কারাগারে মিন্টু
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আনা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তায় একটি প্রিজন ভ্যানে বেলা পৌনে ২টার দিকে আনা হয় তাকে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় সাইদুল করিম মিন্টুকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ১১ জুন (২০২৪) রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে। এরপর তিন দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। সেই থেকে ওই কারাগারে ছিলেন তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের একটি সূত্র খবর নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পরে মিন্টুর বিরুদ্ধে আরও ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষক আ. সালাম হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে তাকে। এ মামলায় আগামী ৩ ডিসেম্বর ঝিনাইদহের আদালতে হাজির করার জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আনা হয়েছে তাকে।
এর আগে ২৭ আগস্ট আমলি আদালত ঝিনাইদহ সদর থেকে মিন্টুকে হাজির করার জন্য পিডব্লিউডি (প্রডাকশন ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেছেন নিহত আ. সালামের শ্বশুর ঝিনাইদহ জেলা শহরের মহিলা কলেজ রোডের আবু বক্কর সিদ্দিক।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার দিকে সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে ওলামা মাশায়েখ ও মুসল্লিরা স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলা শহরের শেরেবাংলা সড়কে হাটের রাস্তায় ওই মিছিলে হামলা চালিয়ে আ. সালামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় ২৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ঝিনাইদহ থানায় মামলা দায়ের করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। মিন্টুকে ওই মামলায় ৬নং আসামি করা হয়েছে।
অপর হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মামুনুর রশীদ। ১ সেপ্টেম্বর হরিণাকুণ্ডু আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। হরিণাকুণ্ডু থানা মামলাটি রেকর্ড করে ৮ সেপ্টেম্বর।
এ মামলায় বাদীর পিতা মো. ইদ্রিস আলীকে (পান্না) ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট গ্রামের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ১২ আগস্ট উপজেলার জোড়াপুকুর এলাকার দমদমার মাঠ সংলগ্ন রাস্তা থেকে মো. ইদ্রিস আলীর (পান্না) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সাইদুল করিম মিন্টুকে এ মামলায় কুড়ি নম্বর আসামি করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২ জুলাই ইসলামি ছাত্রশিবির ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ইবনুল ইসলাম পারভেজকে পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট নিহতের পিতা জেলা শহরের হামদ এলাকার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে আমলি ম্যাজিস্ট্রেট সদর ঝিনাইদহ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ৩ সেপ্টেম্বর সদর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ মামলায় তৎকালীন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৩ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সাইদুল করিম মিন্টু এ মামলার ১২নং আসামি।
অপর হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন শৈলকূপা উপজেলার পুটিমারী গ্রামের লৎফর রহমান বিশ্বাস। তিনি ১১ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ সদর আমলি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বাদীর পুত্র ছাত্রশিবির নেতা সাইফুল ইসলামকে ২০১৬ সালের ৩ জুলাই জেলা শহরের পবহাটি সৃজনীর মোড় সংলগ্ন শাহ মেস থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এর ১৬ দিন পরে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের আড়ুয়াকান্দি এলাকা থেকে সাইফুলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। আদালতের নির্দেশে ১৫ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলাটি গ্রহণ করে সদর থানা। এ হত্যা মামলায় সাইদুল করিম মিন্টুকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও মিন্টুর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাদুটির একটি হলো- জামায়াত কর্মী মো. তারেক হাসান হত্যা। ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তারেককে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এবং ২৫ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে ঝিনাইদহ বাইবাস সড়ক সংলগ্ন ভুটিয়াগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।
নিহতের (তারেক) মা ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর গ্রামের মোছা. মাহফুজা খাতুন বাদী হয়ে ২ অক্টোবর ঝিনাইদহ সদর আমলি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সদর থানায় রেকর্ড করা হয়েছে ৬ অক্টোবর। এ মামলায় সাইদুল করিম মিন্টুকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এদিকে জেলার মনির হোসেন সাইদুল করিম মিন্টুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকার করেছেন।
তবে রাত ৭টার দিকে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে দায়ের করা ৬টি হত্যা মামলায় মিন্টুকে পর্যায়ক্রমে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে।