বিদেশে রপ্তানি যোগ্য করতে ব্যাগে ও গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ করছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের চাষিরা। এরপরও বিপুল সম্ভবনাময় ফলটি রপ্তানি করতে পারছে না।এ পণ্যটি রপ্তানি হলে যেমন লাভবান হতেন চাষি, তেমনি রাজস্ব পেতেন সরকার। তবে প্রকল্পের আওতায় না থাকায় রপ্তানির প্রধান অন্তরায় এই ফলটি বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম উৎপাদন খ্যাত অঞ্চল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর। সে অনুযায়ী বাজারও গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় পর্যায়।
এ অঞ্চলে নামি দামি অনেক ধরনের আমের উৎপাদন হয়। যার মধ্যে রয়েছে হিম সাগর, ল্যাংড়া, আম্রাপালী, গোবিন্দ, বানানা, হাড়ি ভাংঙ্গা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-৩, বিশ্বনাথ, মল্লিকা। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আটির আম। এর মধ্যে ৪ জাতের আম বিদেশে রপ্তানি যোগ্য করে ব্যাগ ও গ্যাপ পদ্ধতিতে চাষ করছেন কোটচাঁদপুরের আম চাষিরা। যার মধ্যে বানানা, কাটিমন, হিম সাগর ও আম্রপালি। তবে তিনটি আম ব্যাগে বেশি চাষ হয়ে থাকে। আর আম্রপালি চাষ হয় গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরন করে। এ জন্য ওই আমটিরও বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
গত ৪ বছর আগে কোটচাঁদপুরে আব্দুল আজিজ ব্যাগ পদ্ধতিতে আমের চাষ শুরু করেন। এখন ও চাষির অনুসরণ করে আরো চাষিরা ব্যাগে আম চাষ শুরু করেছেন। এরা হলেন কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের আবুল হোসেন, আব্দুল আজিজ, খোকা সর্দার, রশিদ সর্দার, জামাল সর্দার। এ বছর চাষিরা ৫০ হাজার ব্যাগে আম চাষ করেছেন। এ ছাড়া গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরন করেও চাষ করেছেন আম। এতে করে একশ থেকে দেড়শ টন আম কোটচাঁদপুর থেকে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আম চাষি আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, হিম সাগর, আমের চাষ করেছি। এর মধ্যে ২ টন হিম সাগর আর রুপালী ১০ টন রুপালি আম বিদেশে রপ্তানি যোগ্য করে ব্যাগ ও গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরন করে চাষ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যদিও আমে ব্যাগ প্রতি একটা টাকা ব্যয় হয়, তারপরও বাজারের আমের তুলনায় ৫০/৮০ দামের ব্যবধান থাকে এ আমের। আর বাজারে এই আমের চাহিদাও ভাল। কারন হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাগের আম ন্যাচারাল, বিষ ও পোকা মুক্ত হয়ে থাকে। এ জন্য বাজার চাহিদা ও ভাল।
তিনি আরো বলেন, এ আম যদি বিদেশে পাঠান যেত, তাহলে চাষিরা অনেক বেশি লাভবান হত। আর সরকারও লাভবান হতেন। অন্যদিকে সামনের দিনে চাষিরা এই চাষের দিকে ঝুকে পড়তেন। এতে করে বাজারে উঠত বিষমুক্ত আম। মানুষও পেতেন বিষ, পোকা ও ন্যাচারাল আম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন,এ বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩ শ হেক্টর। যা গেল বছরের তুলনায় বেশি।
তিনি বলেন, আমি শুনেছিলাম ১/২ বার বায়ারদের মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানি করা হয়েছিল কোটচাঁদপুর থেকে। এরপর থেকে আর রপ্তানি হয়নি। এ বছর কথা বার্তা চলছে বায়ারদের সঙ্গে। তারা আমাদের আম্রপালি কিনবে বলে জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, আমি বাজারে ঘুরে দেখলাম অনেক ভাল আম হয় এখানে। তবে আম রপ্তানিতে কিছু কাজ আছে। সে গুলো করতে হবে।
তিনি বলেন,বিদেশে আম রপ্তানির জন্য একটা প্রকল্প আছে। যার নাম” রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প ” এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ইতোমধ্যে মধ্যে এ বছর ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ টন আম চীনে রপ্তানি করা হয়েছে।তিনি আরো বলেন, আমাদের আম ওই প্রকল্পের আওতায় না থাকায় রপ্তানি হচ্ছে না। আগামীতে প্রকল্প ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
নিয়ে কথা বলতে মোবাইল যোগাযোগ করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলাম সঙ্গে। তবে ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সবুজদেশ/এসইউ