এজিএমের কক্ষের সামনের চেয়ারে বসার অপরাধে সুজন নামের ইলেকট্রিশিয়ানকে অফিস থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কোটচাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুনসুর আলীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ ) সকালে উপজেলার বিদ্যুৎ অফিসে ঘটে এ ঘটনা। তবে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মুনসুর আলী । এদিকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন এজিএম রাকিবুজ্জামান।
জানা যায়, কোটচাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের আওতায় সাত জন লাইসেন্সধারী ওয়েরিং ম্যান রয়েছে । তবে এর মধ্যে কাজ করেন ইখলাছুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, অরুন হোসেন ও আক্তারুজ্জামান। আর তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন চব্বিশ জন ওয়েরিংম্যান। এদের একজন সুজন হোসেন। সে মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের ওহেদুল ইসলামের ছেলে।
সুজন দীর্ঘ পনের বছর ধরে ওয়েরিংয়ের কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি আদমপুর গ্রামে দুই বাড়িতে ওয়েরিংয়ের কাজ করেছেন। কয়েক দিন হল অফিস থেকে সেই ওয়েরিংয়ের কাজ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন করে দুইটি কাজই ক্রুটিপূর্ন দেখিয়ে বন্ধ রাখতে বলেন। আসতে বলেন অফিসে। মঙ্গলবার সকালে অফিসে আসেন সুজন। এরপর সে এজিএমের কক্ষের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসেন। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুনসুর আলী তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বলে অভিযোগ ওয়েরিং ম্যান সুজন ইসলামের।
তিনি বলেন, আমি আশরাফুল ইসলামের সহকারি হিসেবে ওয়ারিং কাজ করি। সম্প্রতি দুইটি কাজ করার পর কাগজপত্র অফিসে জমা দিলে অফিস থেকে ওই কাজ পরিদর্শনে করে বন্ধ রাখতে বলেন। আর আমাকে ডাকেন অফিসে। মঙ্গলবার সকালে অফিসে এসে স্যারের রুমের চেয়ারের বসলে মনসুর আলী স্যার আমাকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। তবে কি কারনে ধাক্কা দেন তা আমার জানা নাই।
তিনি আরো বলেন, এই ভ্যানটি আমার যোগাযোগের ব্যবস্থা। ভ্যান থাকায় আমি প্রত্যন্ত গ্রামের গ্রাহকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের অনেকে সব সময় অফিসে আসতে পারেন না। তারা আমাদের মত মানুষের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সংযোগ সহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। আর আমরা ওই সব গ্রাম থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে আসি এ অফিসে। আজ সেই অফিস থেকে ঘাড় ধাক্কা খেতে হল।
সুজন ইসলাম বলেন, ভ্যান আমার যেমন যোগাযোগের মাধ্যম। তেমনি জীবিকারও বাহন। যে সময় ইলেট্রিকের কাজ না হয়, সে সময় ভ্যানে করে যাত্রী বহন করে জীবিকা চালায়। সে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত পূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই অফিসের ওয়েরিং পরিদর্শক ও লাইসেন্স ধারী ওয়েরিং ম্যানেরা। তারা বলেছেন, সুজনকে ওনি বুঝিয়ে বের হয়ে যেতে বলতে পারতেন। কাজটা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঠিক করেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।তবে তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ কোটচাঁদপুর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুনসুর আলী। তিনি বলেন, ওরা মূলত গ্রামে ওযারিংয়ের কাজ করে থাকেন। অফিস আদালতে আসেন না। একটা কাজের জন্য সুজনকে অফিসে ডাকা হয়েছিল। সে এসে সোজা এজিএমের কক্ষের চেয়ারে গিয়ে বসে আছেন। তাই নিষেধ করা হয়েছে। তাকে ঘাড়ে ধাক্কা দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এজিএমের কক্ষে থাকা সামনের চেয়ারে আমরাও অনেক সময় বসি না। এমনকি যারা এ অফিসে লাইসেন্স ধারী আছেন তারাও ওই চেয়ারে গিয়ে বসেন না। সেখানে ওই ছেলে মত মানুষ লাইসেন্স ধারীর সহকারী হয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে আছেন।
কোটচাঁদপুর পল্রী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম রাকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। আমি জানতে পারলাম মুনসুর সাহেব ওনাকে জোরে দমক দিয়ে কথা বলেছেন। তবে ঘাড় ধাক্কা দিয়েছেন কিনা আমার জানা নাই।
তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। মিটিং থেকে গিয়ে তদন্ত করে দেখবো। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সবুজদেশ/এসইউ