ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের গ্রুপিং এর দ্বন্দ্বে এ বছর হলো না ঐতিহ্যবাহী একুশে বই মেলা। যা গত ২২ বছরের ধারাবাহিকতা ভাঙলো ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করে ২০২৫ সালে এসে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলা না হওয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমে কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেশের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে অনুমতি না পাওয়ায় মেলা করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি আয়োজক কমিটির।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ২০০২ সাল থেকে কোটচাঁদপুর মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্টিত হয় একুশে বই মেলা। ওই সময় বই মেলার আয়োজন করেন প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ নামের একটি সংগঠন। যার সভাপতি ছিলেন কমরেড তবিবর রহমান। সেই থেকে দীর্ঘ ২২ বছর একুশে বই মেলাটি হয়ে আসছিল কোটচাঁদপুরে। মাঝে ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। তারপরও মেলা বন্ধ হয়নি কোনদিন। যার ধারাবাহিকতা ভাঙলো নতুন স্বাধীনতা লাভের পর ২০২৫ সালে এসে। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল।
এ ব্যাপারে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য ও জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক কমিটির সদস্য আলী হাসান সবুজদেশ নিউজকে বলেন, প্রথম আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মৌখিক ভাবে অনুমতি পেয়েছিলাম। পরে প্রতিপক্ষরা মেলা প্রসঙ্গে নেগেটিভ কিছু বলায় অনুমতি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি সরকারি কে এম এইচ কলেজের পক্ষ থেকে রোভার স্কাউটের টিম নিয়ে সিরাজগঞ্জ অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ফিরে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কোটচাঁদপুর বাসীর কাছে পরিস্কার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোটচাঁদপুরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক পক্ষের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান হৃদয় বলেন, যারা মেলার আয়োজক তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ না। তাদের উত্থান ৫ই আগস্টের পরে। তারা মেলার আয়োজক হতে পারে না।
প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের সাবেক সভাপতি কবি ও ছড়াকার আক্তারুজ্জামান রকিব বলেন, অনেক বছর ধরে মেলাটি হয়ে আসছে কোটচাঁদপুরে। মেলা উপলক্ষ্যে ৭ দিন ধরে চলে বই মেলা। মেলায় বইয়ের স্টোলের পাশাপাশি বসতো বিভিন্ন ধরনের খাবার ও মনোহারির দোকান। মেলার ৭ দিন আলোচনা ভাষা শহীদদের নিয়ে। অনুষ্ঠিত হত নৃত্য, গান ও নাটক। এ বছর মেলা না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর ধারাবাহিক ধরে এ মেলা বসে কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। যার ব্যতিক্রম ঘটলো ২০২৫ সালে এসে।
প্রেসক্লাব কোটচাঁদপুরের সভাপতি কাজী মৃদুল সবুজদেশ নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বই মেলা হয়ে আসছিল। মেলাটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ আমরা। মেলা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতো। ৭ দিন ব্যাপী মেলায় থাকতো ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচনা। যা থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল।
কোটচাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি সভাপতি এসকেএম সালাহউদ্দিন বুলবুল সিডল সবুজদেশ নিউজকে বলেন, এ বছর মেলার দায়িত্ব নিয়েছিল সমন্বয়করা। তাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দের কারনে মেলাটি বন্ধ হয়েছে। এটা খুব খারাপ হয়েছে। মেলাটি অবশ্যই প্রয়োজন ছিল।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলাম সবুজদেশ নিউজকে বলেন, আয়োজক কমিটি মেলার কোন অনুমতি আমাকে দেখাতে পারেনি। এ কারনে মেলা করতে দেয়া হয়নি।
বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের মুঠোফোন কল দিয়ে রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সবুজদেশ/এসএএস