কোলকাতার বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখলেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হাসান
সবুজদেশ ডেক্সঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই বাংলার প্রেরণা। ভারতের কোলকাতায় অবস্থিত মাওলানা আজাদ কলেজের বেকার হোস্টেল থেকে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর দাবি করেছিল সে রাজ্যের উগ্রবাদী সংগঠনগুলো। ঠিক তখন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ন-আহবায়ক নাজমুল হাসান বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়ীত কোলকাতা বেকার হোস্টেলে থেকে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে ইন্ডিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কিছু সংখ্যাক ব্যাক্তি কোলকাতা ইসলামীয়া কলেজ, যা বর্তমানে (মাওলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত) বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভাস্কর্য ও যাদুঘর অপসারণ এর দাবীতে আন্দোলন করছে, তখন তিনি ভারতের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী আল্লামা রুহুল আমীন (রহঃ) এর উত্তরসুরী দীর্ঘদিনের শ্রদ্ধাভাজন বিশ্বস্ত বন্ধু উত্তর ২৪পরগুনা জেলার বসিরহাটের আল্লামা রুহুল আমীন(রহঃ) ফাউন্ডেশন (আরাফ) এর পরিচালক পীরজাদা খোবায়ের আমীন এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন।
তিনি তাকে বলেন, ইন্ডিয়া আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করেছে। রাষ্ট্রয়ী ভাবে ভারত -বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যেবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক রয়েছে। বাংলাদেশে আপনাদের লক্ষ লক্ষ মুসলিম ভক্ত ও অনুসারী রয়েছে। মুসলিম ধর্মের মানুষ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। তিনি নিজে একজন মুসলিম হিসাবে বলেন, কোলকাতা ইসলামীয়া কলেজ কোনও মসজিদ বা ধর্মীয় উপসনালয় নয়, তাছাড়া বঙ্গবন্ধু ঐ কলেজের ছাত্র নেতা ছিলেন। সেখানে কেনো স্মৃৃতি যাদুঘর রাখা যাবেনা ? ইসলামীয়া কলেজ যেহেতু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইন্ডিয়া সরকার কর্তৃক কোলকাতা বেকার হোস্টেল এর ২৩ ও ২৪ নম্বর রুমকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি যাদুঘর হিসাবে ঘোষনা দিয়েছেন, তাই আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমগণ এটা মেনে নিতে পারিনা। মুসলিমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। বেকার হোস্টেলকে কেন্দ্র করে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থান জানতে চান। তখন পীরজাদা খোবায়েব আমিন তাকে বলেন, হ্যাঁ আমরা মুসলিম সম্প্রদায় অবশ্যই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, আর এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে পীরজাদা রুহুল আমিন নাজমুল হাসানকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাবেন বলে আশ^াস দেন। ঠিক দুইদিন পর ২০ শে মার্চ ২০১৭ তারিখে, নাজমুল আবার ফোন করে পীরজাদা রুহুল আমিনের কাছে। তখন পীরজাদা খোবায়েব আমিন বলেন, আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছি। দূতাবাস থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে, আমরা আপনাদেরকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাবো ও আমাদের মোবাইল নম্বর রেখে দিয়েছে। এর পর নাজমুল হাসান ইন্ডিয়া যান এবং ইন্ডিয়া পৌঁছায়ে জানতে পারেন, বাংলাদেশ দূতাবাস তাদেরকে ২৮ মার্চ ২০১৭ যাবার কথা বলেছে, তখন নাজমুল হাসানসহ ‘আল্লাহমা রুহুল আমিন (রহঃ) ফাউন্ডেশন (আরাফ)’ ২৮ মার্চ ২০১৭ তারিখে কোলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখার পক্ষে (আরাফ) এর পরিচালক পীরজাদা খোবায়েব আমিন ও তার সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে স্বারকলিপি প্রদান করেন।
উল্লেক্ষ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র জীবনের এক স্মৃতি বিজড়িত কোলকাতার মাওলানা আজাদ কলেজের বেকার হোস্টেলে স্থাপিত তার ভাস্কর্যটি সরানোর দাবি তুলেছিল হোস্টেলের ছাত্রদের একাংশ। বেকার হোস্টেলটিতে শুধু মুসলমান ছাত্ররাই থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই ভাস্কর্যটি সরানোর দাবি নিয়ে কোলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে যাওয়ার চেষ্টা করে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যলঘু যুব ফেডারেশনের ব্যনারে হোস্টেলটির ছাত্রদের একাংশ। তবে মাঝ রাস্তায় তাদের গতিরোধ করে ভারতীয় পুলিশ। শুধু বাধায় নয় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস কতৃপক্ষ তাদের দাবিপত্র গ্রহন করতে অস্বিকার করে। ছাত্রজীবনে বেকার হোস্টেলের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু থাকতেন সেই কক্ষটিতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ওই সংগ্রহশালার প্রবেশ মুখে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি তার মেয়াদকালে এটি উদে¦াধন করেন। গত ১৭মার্চ’১৮ তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে ওই ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে করে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশ মনে করে ফুল দিয়ে ভাস্কর্যে পূজা করা হচ্ছে। ফেডারেশন জানায় হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে সংগ্রহশালা হয়েছে তাতে তাদের কোন আপত্তি নেই। এরপরই মূলত হোস্টেলের ছাত্ররা ভাস্কর্যটিকে সরিয়ে নেবার দাবি তোলেন। এঘটনায় ক্ষুদ্ব প্রতিক্রিয়া জানান পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপধ্যায় বলেন ‘ ঐতিহ্যের কোন ইজারা হয়না। বঙ্গবন্ধু দুই বাংলার কাছেই শ্রদ্ধেয় স্বরনীয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণা। তার স্মৃতি শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করাই আমাদের কর্তব্য। এর কোন রকম বিরোধিতা বরদাশত করা হবেন্।া কেউ প্রতিরোধ তৈরি করতে চাইলে তা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরকারি ছাত্রাবাস হিসাবে বেকার হোস্টেল ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় কোলকাতার তালতলায় এই বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। ইসলামিয়া কলেজের নাম পাল্টে এখন করা হয়েছে মাওলানা আজাদ কলেজ। এই স্মৃতি কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট,চেয়ার,টেবিল ও আলমারি। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষটির পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটি যুক্ত করে স্মৃতি কক্ষ গড়ার উদ্যোগ নেন । ১৯৯৮ সালের ৩১জুলাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি কক্ষের আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সত্যসাধন চক্রবর্তী।
এ বিষয়ে নাজমুল হাসান জানান,আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে বলতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সু-যোগ্য কন্যা,দেশরতœ, গণতন্ত্রের মানষ কন্যা, মাদার অফ হিউম্যানিটি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড, তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল নেতা ও কর্মী প্রত্যেকের স্ব স্ব অবস্থান থেকে যেখানেই ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা, অপপ্রচার, মিথ্যাচার, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী,স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি, জঙ্গিবাদ, মানবতার শত্রু, ধর্ম ব্যবসায়ী, দূর্নীতিবাজ, থাকবে সেখানেই প্রতিবাদ/ প্রতিরোধ/প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র প্রত্যেক মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বাধীন সার্বভৌম, উন্নত সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলা গড়তে কোন অপশক্তিই বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।