ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষোভে উত্তাল ভারত, পুলিশের গুলিতে নিহত বেড়ে ২০

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আইনটি বাতিলের দাবিতে নতুন করে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে এসেছেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।

দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর উত্তর প্রদেশে শুক্রবার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে হাতহতের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। রাজ্যটিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে আট বছর বয়সী একটি শিশুও মারা গেছে।

শনিবার তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই ও বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাটনাসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার লোক নতুন করে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

রাজধানী নয়াদিল্লিতেও সড়কে ব্যাপক জমায়েত দেখা গেছে। ধর্মভিত্তিক এই আইনটি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে আইনটি পাশ করে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনটি থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে বাদ দেয়া হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যেপূর্ণ ও নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ। যদিও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তা অস্বীকার করে আসছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ২০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ২০ শতাংশের বসবাস উত্তর প্রদেশে। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র শিরীষ চন্দ্র বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন নিহত হন। অন্যান্য ঘটনাবলীও আমরা তদন্ত করে দেখছি।

বারাণসী জেলা পুলিশ প্রধান প্রভাকর চৌধুরী বলেন, পবিত্র শহরটিতে শিশুসহ আড়াই হাজার লোক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এসময় ওই বালকটি নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ যখন বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন, লোকজন পালানোর জন্য দৌড়াচ্ছিলেন। এতে পদদলিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই সময় বালকটি নিহত হয়েছেন।

তার মতে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে ওই শিশুটি একটি গলির ভেতর খেলছিল, এসময় বিক্ষোভকারীদের পায়ে দলিত হয়ে সে মারা যায়।

উত্তর প্রদেশেও বিক্ষোভে একজন ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকেও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামেও গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ছয়জন নিহত হয়েছেন।

শনিবার মধ্যদিল্লির যন্তরমন্তরে বেড়িকেড স্থাপন করেছে পুলিশ। সাম্প্রতিক এই রাজপথটি বিক্ষোভের কিন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। জরুরি অবস্থা আরোপ করে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাগুলেতে দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিক্ষোভে এলোপাতাড়ি গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। লাঠিপেটা ছাড়াও শত শত লোককে আটক করা হয়েছে।

আইনটি বাতিলের আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানীর মূলকেন্দ্রে সড়কে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান ব্যবহার ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।

পুলিশ লোকজনকে লাঠিপেটা করছে বলে দেখেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির প্রতিবেদক। এছাড়া শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় চালানো হচ্ছে।

পুলিশ শনিবার এএফপিকে বলছে, ৪০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত আটজনের বয়স ১৮ বছর বয়সের নিচে। তবে তাদের অধিকাংশকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
৩২১ Time View

ক্ষোভে উত্তাল ভারত, পুলিশের গুলিতে নিহত বেড়ে ২০

আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আইনটি বাতিলের দাবিতে নতুন করে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে এসেছেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।

দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর উত্তর প্রদেশে শুক্রবার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে হাতহতের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। রাজ্যটিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে আট বছর বয়সী একটি শিশুও মারা গেছে।

শনিবার তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই ও বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাটনাসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার লোক নতুন করে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

রাজধানী নয়াদিল্লিতেও সড়কে ব্যাপক জমায়েত দেখা গেছে। ধর্মভিত্তিক এই আইনটি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে আইনটি পাশ করে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনটি থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে বাদ দেয়া হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যেপূর্ণ ও নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ। যদিও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তা অস্বীকার করে আসছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ২০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ২০ শতাংশের বসবাস উত্তর প্রদেশে। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র শিরীষ চন্দ্র বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন নিহত হন। অন্যান্য ঘটনাবলীও আমরা তদন্ত করে দেখছি।

বারাণসী জেলা পুলিশ প্রধান প্রভাকর চৌধুরী বলেন, পবিত্র শহরটিতে শিশুসহ আড়াই হাজার লোক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এসময় ওই বালকটি নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ যখন বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন, লোকজন পালানোর জন্য দৌড়াচ্ছিলেন। এতে পদদলিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই সময় বালকটি নিহত হয়েছেন।

তার মতে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে ওই শিশুটি একটি গলির ভেতর খেলছিল, এসময় বিক্ষোভকারীদের পায়ে দলিত হয়ে সে মারা যায়।

উত্তর প্রদেশেও বিক্ষোভে একজন ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকেও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামেও গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ছয়জন নিহত হয়েছেন।

শনিবার মধ্যদিল্লির যন্তরমন্তরে বেড়িকেড স্থাপন করেছে পুলিশ। সাম্প্রতিক এই রাজপথটি বিক্ষোভের কিন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। জরুরি অবস্থা আরোপ করে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাগুলেতে দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিক্ষোভে এলোপাতাড়ি গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। লাঠিপেটা ছাড়াও শত শত লোককে আটক করা হয়েছে।

আইনটি বাতিলের আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানীর মূলকেন্দ্রে সড়কে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান ব্যবহার ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।

পুলিশ লোকজনকে লাঠিপেটা করছে বলে দেখেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির প্রতিবেদক। এছাড়া শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় চালানো হচ্ছে।

পুলিশ শনিবার এএফপিকে বলছে, ৪০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত আটজনের বয়স ১৮ বছর বয়সের নিচে। তবে তাদের অধিকাংশকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।