সবুজদেশ ডেস্কঃ
সাম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে নেমে আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ ‘টিকটকের’ মাধ্যমে প্রথমে তরুণীদের টার্গেট করে। পরে চাকরির প্রলোভনে তাদের বিদেশে পাচার করা হয়। সেখানে নেয়ার পর তাদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে চক্রটি। কুরুচিপূর্ণ ভিডিও বানিয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে কয়েকশ টিকটকারকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
জানা যায়, টিকটক গ্রুপ খুলে সেখানে পোস্ট করা হতো অশ্লীল ভিডিও। সেই ভিডিওতে যেসব নারী লাইক-কমেন্ট বা শেয়ার করতেন প্রথমে তাদের টার্গেট করা হতো। যারা টার্গেট করতেন তাদের টিকটক আইডিতে লাখ লাখ ফলোয়ার থাকত। পরে দেখানো হতো ভিডিও তৈরি করে টিকটকে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রলোভন।
জানা যায়, টিকটক গ্রুপ খুলে সেখানে পোস্ট করা হতো অশ্লীল ভিডিও। সেই ভিডিওতে যেসব নারী লাইক-কমেন্ট বা শেয়ার করতেন প্রথমে তাদের টার্গেট করা হতো। যারা টার্গেট করতেন তাদের টিকটক আইডিতে লাখ লাখ ফলোয়ার থাকত। পরে দেখানো হতো ভিডিও তৈরি করে টিকটকে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রলোভন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে পুলিশের সাইবার ইউনিট। কুরুচিপূর্ণ ভিডিও বানিয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে কয়েকশ টিকটকারকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সম্প্রতি ভারতে এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তদন্তে নেমে এসব টিকটকারকে চিহ্নিত করা হয়। ‘টিকটকের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এই পাচারকেন্দ্রিক অপচেষ্টা শুরু হয়। উঠতি বয়সী কিশোরী-তরুণীদের মডেল বা স্টার বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে পাচার করছে একটি চক্র। এজন্য আমরা টিকটককে নেগেটিভলি দেখছি। টিকটক-কেন্দ্রিক অপচেষ্টা বন্ধে আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘পাচারের শিকার ও পাচারকারীরা অবৈধভাবে ভারতে যায়। তাদের কাছে ভিসা-পাসপোর্ট বা কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এরপর চক্রের ভারতীয়দের সহায়তায় সে দেশের আধার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। সেই কার্ড ব্যবহার করে তারা ভারতে চলাফেরা করে থাকেন। তদন্তের এ পর্যায়ে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আরও কিছুদূর অগ্রসর হলে সংখ্যাটি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব।’
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা) উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘পাচারকারীদের ধরতে ঢাকাসহ সারাদেশে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। র্যাব একটি চক্রকে ধরেছে যারা ইতোমধ্যে ভারতে প্রায় ৫০০ নারী পাচার করেছে। ওই চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নারীদের সুবিধাজনক সময়ে কলকাতার সেফ হাউজে প্রেরণ করা হতো। এর পরের ধাপে কলকাতা থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বেঙ্গালুরু পাঠানো হতো। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর গ্রেফতার বস রাফি তাদের গ্রহণ করে বিভিন্ন সেফ হাউজে অবস্থান করাত। পরে ব্ল্যাকমেইল ও মাদকে অভ্যস্তকরণ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে যৌন পেশায় বাধ্য করানো হতো। ভারতের এজেন্ট প্রত্যেক খদ্দের প্রতি তরুণীদের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিত। ক্ষেত্রবিশেষে নারীদের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হতো।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূলহোতা বস রাফিসহ চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের চক্রে আরও যারা রয়েছে এবং অন্য চক্রের সদস্যদেরও র্যাবের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘ভারতে নারী পাচার ঠেকাতে সবাইকে সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষ করে মেয়েটির পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে নারী পাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক সংগঠন, মসজিদ, মন্দিরসহ সভা সেমিনারে নারী পাচার রোধে আলোচনা করতে হবে।’ পাচারকারী সন্দেহ মনে হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি।