ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাগড়াছড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ৬

Reporter Name

খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় আজ শনিবার সকালে প্রকাশ্যে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, খাগড়াছড়ি শহরে প্রকাশ্যে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আজকের হামলার সময় দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ বক্সেও গুলি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত ছয়জনের মধ্যে তিনজনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তারা এ ঘটনার জন্য ‘সরকারি প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় জেএসএস (এমএন লারমা) এবং স্থানীয় একটি মুখোশ বাহিনীকে’ দায়ী করেছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হেডকোয়ার্টার (খাগড়াছড়ি) আবদুল আওয়াল বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

পুলিশ ও ইউপিডিএফ সূত্র জানায়, আজকের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহসম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাকি তিনজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী জিরাত চাকমা রয়েছেন।

খাগড়াছড়ির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন টিপু প্রথম আলোকে বলেন, খুন, গুম ও অপহরণের বিরুদ্ধে স্বনির্ভর বাজারে আজ ইউপিডিএফের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। সকালে সাড়ে সাতটার দিকে এই দলের কর্মীরা তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের কাছে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় অতর্কিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা ইউপিডিএফ কার্যালয় এবং স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডে একযোগে হামলা চালায়। এতে ছয়জন নিহত ও একজন আহত হন।

আজকের ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ করেছেন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। তিনি এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের সংগঠন জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে যাওয়া সংগঠন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের বক্স। তারপরও সেখানে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করে কীভাবে সন্ত্রাসীরা চলে যায়?’

ইউপিডিএফের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি সদরের ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এ অভিযোগ অমূলক। আজ আমাদের বক্সের ওপর হামলা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ মাত্র বক্সে এসে পৌঁছেছে। তখনই এ ঘটনা ঘটে।’

আজকের ঘটনায় জেএসএস (এমএন লারমা) জড়িত বলে ইউপিডিএফ যে অভিযোগ করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জেএসএসের (এমএন লারমা) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে।’

এর আগে গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি জেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। পরদিন তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় পাঁচজন নিহত হন। শেষকৃত্যস্থলে আসার পথে খালিয়াজুড়ি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত লোকজনের মধ্য একজন তপন জ্যোতি চাকমা। তিনি ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক ছিলেন। অন্য চারজন হলেন সুজন চাকমা, প্রণব চাকমা, সেতু চাকমা ও তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক মো. সজীব।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:০৮:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৮
৪৬৯ Time View

খাগড়াছড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ৬

আপডেট সময় : ০৬:০৮:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৮

খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় আজ শনিবার সকালে প্রকাশ্যে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, খাগড়াছড়ি শহরে প্রকাশ্যে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আজকের হামলার সময় দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ বক্সেও গুলি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত ছয়জনের মধ্যে তিনজনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তারা এ ঘটনার জন্য ‘সরকারি প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় জেএসএস (এমএন লারমা) এবং স্থানীয় একটি মুখোশ বাহিনীকে’ দায়ী করেছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হেডকোয়ার্টার (খাগড়াছড়ি) আবদুল আওয়াল বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

পুলিশ ও ইউপিডিএফ সূত্র জানায়, আজকের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহসম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাকি তিনজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী জিরাত চাকমা রয়েছেন।

খাগড়াছড়ির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন টিপু প্রথম আলোকে বলেন, খুন, গুম ও অপহরণের বিরুদ্ধে স্বনির্ভর বাজারে আজ ইউপিডিএফের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। সকালে সাড়ে সাতটার দিকে এই দলের কর্মীরা তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের কাছে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় অতর্কিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা ইউপিডিএফ কার্যালয় এবং স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডে একযোগে হামলা চালায়। এতে ছয়জন নিহত ও একজন আহত হন।

আজকের ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ করেছেন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। তিনি এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের সংগঠন জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে যাওয়া সংগঠন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের বক্স। তারপরও সেখানে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করে কীভাবে সন্ত্রাসীরা চলে যায়?’

ইউপিডিএফের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি সদরের ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এ অভিযোগ অমূলক। আজ আমাদের বক্সের ওপর হামলা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ মাত্র বক্সে এসে পৌঁছেছে। তখনই এ ঘটনা ঘটে।’

আজকের ঘটনায় জেএসএস (এমএন লারমা) জড়িত বলে ইউপিডিএফ যে অভিযোগ করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জেএসএসের (এমএন লারমা) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে।’

এর আগে গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি জেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। পরদিন তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় পাঁচজন নিহত হন। শেষকৃত্যস্থলে আসার পথে খালিয়াজুড়ি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত লোকজনের মধ্য একজন তপন জ্যোতি চাকমা। তিনি ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক ছিলেন। অন্য চারজন হলেন সুজন চাকমা, প্রণব চাকমা, সেতু চাকমা ও তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক মো. সজীব।