সবুজদেশ ডেস্কঃ

উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া বা গরম জলীয় বাষ্পযুক্ত আবহাওয়া কি করোনা থেকে রক্ষা করবে?- এই প্রশ্ন অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে। সোমবার দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলো ও যুগান্তর এই বিষয়ে দুটি স্টোরি প্রকাশ করেছে তাদের অনলাইন সংস্করণে। প্রথম আলোর স্টোরিটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। আর যুগান্তরের লেখাটি একজন ডাক্তারের।

প্রথম আলো
উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের রাশ টেনে ধরতে পারে। একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এশিয়ার যে দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম রয়েছে, সে দেশগুলোয় এই ভাইরাস হয়তো কিছুটা কম ছড়াতে পারে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষক কাশিম বুখারিসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং আবহাওয়ার দুটি মানদণ্ড তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভিত্তিতে পরিস্থিতি যাচাই করেছেন।
এসএসআরএনএ এই গবেষণার যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের যে যে অঞ্চলে সার্স-কোভ-২ ছড়িয়েছে, সেসব অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৩ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। গবেষকেরা আরও বলছেন, ওই অঞ্চলে প্রতি ঘনমিটারে ওই আবহাওয়ায় আর্দ্রতা ছিল ৪ থেকে ৯ গ্রাম। এমআইটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, আক্রান্ত দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এশিয়ার যে দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম আছে, সে দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কম হবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোয় প্রতি ঘনমিটারে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ গ্রাম পর্যন্ত।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও উত্তর-দক্ষিণে ফারাক আছে। উত্তরের দিকের রাজ্যগুলোর তাপমাত্রা কম এবং সেখানে সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি। টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো ও অ্যারিজোনায় সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত কম। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়া যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জলবায়ু অঞ্চল, সেখানেও দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে আক্রান্ত প্রায় দ্বিগুণ।

যুগান্তর
অনেকেই আশাবাদী এই কারণে যে পূর্বের অভিজ্ঞতা ও গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভাইরাস সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় বিস্তার করতে পারে না। করোনা যেসব দেশে বেশী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সেসব দেশে কম তাপমাত্রা চলছিল বা চলছে। দুই দু গুণে পাঁচের মত অবস্থা।
মনে রাখতে হবে, এই ভাইরাসটি একেবারেই নতুন। আর সেই কারণে বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর নাম দিয়েছিলেন নোভেল, পরবর্তীতে নামকরন বদল হয় COVID-19 আর রোগের নাম হয় SARS-CoV 2.
২ কেন দেওয়া হলো এই প্রশ্নটি মাথায় আসতেই পারে, আসাটাই স্বাভাবিক। করোনা পরিবারের দ্বারা আক্রান্ত যে রোগ ইতিমধ্যে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল তার প্রথমটির নাম ছিল SARS-CoV, তাই কাছাকাছি লক্ষণের কারণে দ্বিতীয়টির নাম দেওয়া হয়েছে
দ্বিতীয়ত, যেহেতু সময় অনেক গড়িয়েছে, তাই প্রথমটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়টি এমনভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়েছে যে গবেষণা এখনও সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি কোনও দেশের পক্ষে।
SARS-CoV আর SARS-CoV 2 এর মাঝে বেশ কয়েকটি জায়গায়, আবার অমিলও রয়েছে। প্রথমটিতে আক্রান্তের সময় মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল প্রথম থেকেই। দ্বিতীয়টির সংখ্যা ইদানিংকালে বাড়ছে তাও কয়েকটি দেশের হিসাবের প্রেক্ষাপটে।
প্রথমটি শুধুমাত্র লক্ষণ যারা প্রকাশ করেছিল তাদের দ্বারা ছড়িয়েছিল; কিন্তু দ্বিতীয়টি করেছে সর্বনাশ। লক্ষণ প্রকাশ না করলেও ছড়াচ্ছে। আর এতেই হিসাবেই গণ্ডগোল।
যেকোনো ভাইরাসের শত্রু হলো তিনটি- সূর্য, তাপমাত্রা ও আদ্রতা পরিমাণ। দিনের বেলায় ভাইরাস যেখানে আড়াই মিনিটের বেশী কার্যকর থাকতে পারে না সেখানে রাতের বেলায় কার্যকর থাকে ১৩ মিনিটের মত। মানে অধিক সময় কার্যকরী বিধায় বংশ বিস্তারের সুযোগ বেশি তৈরি করতে সক্ষম।
তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির বেশি আর আদ্রতা ৯৫% এর বেশি হলে ভাইরাস কার্যকর থাকে না। এইসব জিনিস মাথায় রেখেই অনেকেই আশাব্যক্ত করছেন যেসব দেশে গরম শুরু হয়ে গেছে তারা বেঁচে গেল!
ঘটনা এতটুকু থাকলে তো ভালোই হত অনেক দেশের জন্য। ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়াসহ অনেক দেশে ভাইরাসবিরোধী তিনটি জিনিস থাকা সত্ত্বেও রোগ ছড়াচ্ছে। এর কারণ কী?
প্রথম কারণ হলো রোগের লক্ষণ না থাকলেও অনেকেই আরেকজনকে ভাইরাস দিয়ে দিচ্ছেন, দ্বিতীয় হলো আমরা তো সবসময় ঘরের বাইরে থাকি না। ঘরের তাপমাত্রা তো ভাইরাস উপযোগী হয়ে থাকে বেশীশিরভাগ সময় এসি, ভারী পর্দা, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অনেক ঘরে আলোটাও প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভাইরাস তো টিকে যাচ্ছে। আর মানুষের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা তো ভাইরাসে জন্য সবসময় উপযোগী। তাই রোগ সুনির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে ২০৩টি দেশে। সব দেশ তো শীতপ্রধান নয়।
তাই বিজ্ঞানীরা বারবার সাবধান করছেন যেন একে অবহেলা না করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট। আর বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রটেকশন, প্রটেকশন, আর প্রটেকশন। ঘরে থাকি বা বাইরে, নিরাপত্তার বিকল্প নেই।
সড়কের নিরাপত্তার মত বিষয়টা, আমি নিরাপদে গাড়ি চালালেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয় সবাইকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here