ঢাকা ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভে ৮ মাসের সন্তান নিয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন মা, দরকার এক লাখ টাকা

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

মাত্র এক লাখ টাকার প্রয়োজন, তাহলেই গর্ভের বাচ্চা আর গর্ভবতী মা দু’জনই বেঁচে যেতে পারেন। ঢাকায় নিয়ে অস্ত্রপচার করাতে হবে। চিকিৎসকের এমন পরামর্শের পরও অর্থের অভাবে গর্ভবর্তী ওই নারীকে ঢাকায় নেওয়ার পরিবর্তে রোববার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন শুকতারা বেগম (২৮)। তার বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকায়।

শুকতারা’র স্বামী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তার স্ত্রী’র গর্ভে ৮ মাস বয়সের যে বাচ্চা রয়েছে তা স্বাভাবিক নয়। তাকে দ্রুত অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ভুমিষ্ট করা প্রয়োজন। তাহলে গর্ভবতী মা আর বাচ্চা উভয়ই বেঁচে যেতে পারে, অন্যথায় তারা উভয়ই জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে তারা নিতে পারছেন না।

রবিউল ইসলাম জানান, হতদরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। নিজে অন্যের পানের বরজে কামলার কাজ করে সংসার চালান। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম ও তিনি একসঙ্গেই কাজ করেন এবং বসবাস করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার আদর্শ-আন্দুলিয়ায়। ৫ শতক জমির উপর সেখানে ভিটাবাড়ি রয়েছে। যেখানে টিনের ছাপড়ায় তারা বসবাস করতেন। আনুমানিক ৫ মাস হলো কাজের প্রয়োজনে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠেছেন। এখান থেকে বাবা-ছেলে মিলে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান।

রবিউল ইসলাম আরো জানান, আনুমানিক ১০ বছর পূর্বে তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এলাকায় বিয়ে করেন। ৮ বছর পূর্বে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। যার নাম রেখেছেন শিফাত। এরপর ৮ মাস পূর্বে তার স্ত্রী শুকতারা’র গর্ভে আবারো সন্তান আসে। এ পর্যন্ত ভালোই ছিল গর্ভবর্তী নারী ও গর্ভের সন্তান। কিন্তু এক মাস পূর্বে একদিন আলট্রাসনো করানোর সময় চিকিৎসকরা কিছুটা সমস্যা আছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তার স্ত্রীর তেমন কোনো সমস্যা না দেখা দেওয়ায় তারা অনেকটা চিন্তামুক্ত অবস্থায় দিন পার করেছেন।

রবিউল ইসলাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার হঠাৎ করে তার স্ত্রী শুকতারা যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। এ সময় তারা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসারা করানোর পর চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষার পর শুক্রবার ফরিদপুর ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠান। সেখানে দুইদিন চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন বাচ্চাটি গর্ভে অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এখনও বেঁচে আছে। দ্রুত অস্ত্রপচার না করলে বাচ্চাটি গর্ভেই মারা যেতে পারে। আবার এই অবস্থায় বেশিদিন থাকলে মায়ের জীবনেরও ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য তারা ঢাকায় শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসকরা ধারনা দিয়েছেন ঢাকায় নিয়ে অস্ত্রপচার করানোর জন্য তাদের সবমিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে।

শুকতারা বেগমের শশুর সিরাজুল ইসলাম জানান, ভিটাবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। এ পর্যন্ত নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা আর ঔষধপত্রে প্রায় ২০ হাজার খরচ হয়েছে। যা ধার দেনা করে করতে হয়েছে। এখন এক লাখ টাকার জোগাড় তারা কিভাবে করবেন। এই টাকা জোগাড় করতে না পারাই তারা রোগিকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু রোগিকে দেখে কোনো ভাবেই স্বাভাবিক থাকতে পারছেন না। তার যন্ত্রনা দেখে গোটা পরিবার ভেঙ্গে পড়েছেন। তারপরও ভার্গের উপর অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। আশা করছেন অন্তত মা বেচেঁ থাকলে সংসারটা থাকবে। অবশ্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শামীমা সুলতানা জানান, তিনি রোগির কাগজপত্র দেখে বুঝেছেন বাচ্চা ও মা উভয়কে বাঁচাতে হলে তাকে ঢাকায় যেতে হবে। অন্যথায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বাচ্চা-মা উভয়ই জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
১২১৫ Time View

গর্ভে ৮ মাসের সন্তান নিয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন মা, দরকার এক লাখ টাকা

আপডেট সময় : ০৯:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ঝিনাইদহঃ

মাত্র এক লাখ টাকার প্রয়োজন, তাহলেই গর্ভের বাচ্চা আর গর্ভবতী মা দু’জনই বেঁচে যেতে পারেন। ঢাকায় নিয়ে অস্ত্রপচার করাতে হবে। চিকিৎসকের এমন পরামর্শের পরও অর্থের অভাবে গর্ভবর্তী ওই নারীকে ঢাকায় নেওয়ার পরিবর্তে রোববার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন শুকতারা বেগম (২৮)। তার বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকায়।

শুকতারা’র স্বামী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তার স্ত্রী’র গর্ভে ৮ মাস বয়সের যে বাচ্চা রয়েছে তা স্বাভাবিক নয়। তাকে দ্রুত অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ভুমিষ্ট করা প্রয়োজন। তাহলে গর্ভবতী মা আর বাচ্চা উভয়ই বেঁচে যেতে পারে, অন্যথায় তারা উভয়ই জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে তারা নিতে পারছেন না।

রবিউল ইসলাম জানান, হতদরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। নিজে অন্যের পানের বরজে কামলার কাজ করে সংসার চালান। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম ও তিনি একসঙ্গেই কাজ করেন এবং বসবাস করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার আদর্শ-আন্দুলিয়ায়। ৫ শতক জমির উপর সেখানে ভিটাবাড়ি রয়েছে। যেখানে টিনের ছাপড়ায় তারা বসবাস করতেন। আনুমানিক ৫ মাস হলো কাজের প্রয়োজনে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠেছেন। এখান থেকে বাবা-ছেলে মিলে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান।

রবিউল ইসলাম আরো জানান, আনুমানিক ১০ বছর পূর্বে তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এলাকায় বিয়ে করেন। ৮ বছর পূর্বে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। যার নাম রেখেছেন শিফাত। এরপর ৮ মাস পূর্বে তার স্ত্রী শুকতারা’র গর্ভে আবারো সন্তান আসে। এ পর্যন্ত ভালোই ছিল গর্ভবর্তী নারী ও গর্ভের সন্তান। কিন্তু এক মাস পূর্বে একদিন আলট্রাসনো করানোর সময় চিকিৎসকরা কিছুটা সমস্যা আছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তার স্ত্রীর তেমন কোনো সমস্যা না দেখা দেওয়ায় তারা অনেকটা চিন্তামুক্ত অবস্থায় দিন পার করেছেন।

রবিউল ইসলাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার হঠাৎ করে তার স্ত্রী শুকতারা যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। এ সময় তারা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসারা করানোর পর চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষার পর শুক্রবার ফরিদপুর ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠান। সেখানে দুইদিন চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন বাচ্চাটি গর্ভে অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এখনও বেঁচে আছে। দ্রুত অস্ত্রপচার না করলে বাচ্চাটি গর্ভেই মারা যেতে পারে। আবার এই অবস্থায় বেশিদিন থাকলে মায়ের জীবনেরও ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য তারা ঢাকায় শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসকরা ধারনা দিয়েছেন ঢাকায় নিয়ে অস্ত্রপচার করানোর জন্য তাদের সবমিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে।

শুকতারা বেগমের শশুর সিরাজুল ইসলাম জানান, ভিটাবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। এ পর্যন্ত নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা আর ঔষধপত্রে প্রায় ২০ হাজার খরচ হয়েছে। যা ধার দেনা করে করতে হয়েছে। এখন এক লাখ টাকার জোগাড় তারা কিভাবে করবেন। এই টাকা জোগাড় করতে না পারাই তারা রোগিকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু রোগিকে দেখে কোনো ভাবেই স্বাভাবিক থাকতে পারছেন না। তার যন্ত্রনা দেখে গোটা পরিবার ভেঙ্গে পড়েছেন। তারপরও ভার্গের উপর অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। আশা করছেন অন্তত মা বেচেঁ থাকলে সংসারটা থাকবে। অবশ্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শামীমা সুলতানা জানান, তিনি রোগির কাগজপত্র দেখে বুঝেছেন বাচ্চা ও মা উভয়কে বাঁচাতে হলে তাকে ঢাকায় যেতে হবে। অন্যথায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বাচ্চা-মা উভয়ই জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।