মিরপুরে এক বাড়ির নিচে গুপ্তধন আছে এমন খবর সাড়া ফেলেছিল সারা দেশে। এ নিয়ে পুলিশও ২৪ ঘণ্টা সেই বাড়ি পাহারা দিয়েছিল। প্রথমে চেষ্টা করা হয়েছিল মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন বের করা হবে। কিন্তু কয়েক ফুট খেড়ে তা বন্ধ রাখা হয় বাড়ি ধসে পড়বে বলে। পরে সিদ্ধান্ত হয় স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করার।
আজ বৃহস্পতিবার মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে নেমেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা। চার ঘণ্টা ধরে বাড়িতে স্ক্যানার দিয়ে খোঁজা হলো গুপ্তধন।
সরেজমিনে মিরপুর ১০ নম্বর সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর সেই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে পুলিশ, বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি ছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
সেখানে থাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজোয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বাড়ি খোঁড়ার পর কিছু না পেয়ে বুয়েট ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাহায্য নেওয়া হয়। আজ বুয়েটের প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল বাকি খান মজলিশ আলাদা আলাদা স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। দুটি আলাদা আলাদা স্ক্যানার। দুটি স্কানারের আলাদা আলাদা মনিটর আছে। পরীক্ষাও করা হয় আলাদা করে। মাটির নিচে কিছু আছে কি না জানতে দফায় দফায় পরীক্ষা চালানো হয়। কিছু থাকলে মনিটরে উঠে আসত। কিন্তু কিছুই মিলল না।
তাজোয়ার আকরাম বলেন, কিছু পাওয়া যায় নি। তাই এখন আমরা কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করছি। এখানে আর পুলিশ পাহারা দেবে না। এটি মালিকের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
বাড়িটির মালিক মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আমি আমার বাসা বুঝে পেয়েছি। এই বাড়িতে গুপ্তধন আছে এমন একটি গুজব ছিল সেটি এখন ভুল প্রমাণিত হল। কে কি কারণে এই গুজব ছড়িয়েছে জানি না। তবে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে মিরপুর-১০-এর সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধনের সন্ধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানসহ মিরপুর থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে মাটি খননকাজ শুরু করেন ২০ জন শ্রমিক। টিনশেডের ওই বাড়ির সাতটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট গভীর পর্যন্ত শাবল, কোদাল দিয়ে খনন করেন তাঁরা। কিন্তু ছয় ঘণ্টার খননকাজ চলার পর সেখান থেকে গুপ্তধন বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায়নি।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে এই মর্মে এই মাসের ১০ তারিখ সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন টেকনাফের বাসিন্দা আবু তৈয়ব। পরে বাড়ির মালিক মনিরুল আলমও সাধারণ ডায়েরি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাড়িটি খোঁড়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করি।
খননকাজ বন্ধ করার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির অবকাঠামো বেশ দুর্বল। মজবুত কাঠামোর ওপর এই বাড়ির ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়নি। এখানে খননকাজ করা হলে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ খননকাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাড়ির মালিক মনিরুল আলম বলেন, সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১০ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। বাড়ির দেখাশোনার জন্য দুজন তত্ত্বাবধায়ক রাখা হয়। এ ছাড়া বাড়িটির কয়েকটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হবে জানিয়ে ভাড়াটেদের চলে যেতে বলা হয়। এরপর ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুজন লোক বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়কদের ঢোকার জন্য আর্থিক প্রলোভনও দেখান। পরে তাঁরা এই বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে জানান। তাঁদের মধ্যে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি ছিলেন।