ফেনীঃ

ফেনীতে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুজন চন্দ্র দাসকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে থানা থেকে ফেনী পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়।

ফেনীর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল) সাইফুল আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের অপরাধ বিভাগের পুলিশ সুপার হাসান মাহমুদ তদন্ত করছেন।

তবে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ওই গৃহবধূর জমিজমা-সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া হোসেনের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ওই গৃহবধূ। আদালতকে তিনি জানান, অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে এএসআই সুজন কুমারও তাকে ধর্ষণ করেছে। তবে পুলিশের ভয়ে তিনি মামলার এজাহারে তাকে আসামি করেননি।

ওই গৃহবধূ জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর তাকেসহ তার পালক বাবা-মাকে চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে মারধর করে আহত করে। ওই ঘটনায় ওইদিন তিনি বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই সুজন চন্দ্র দাস যাতায়াত খরচ চাইলে তিনি দিতে পারেননি। অভিযোগ দিয়ে নিরাস হয়ে বের হওয়ার সময় থানার মাঠে দেখা মিলে রহিমা সুন্দরী নামে নারীর। তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে তার বাসায় নিয়ে যান। পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে তাকে বোন ডেকে বাসায় রেখে দেন।

তিনি আরও জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে রহিমা সুন্দরী এএসআই সুজনকে দিয়ে তাকে ধর্ষণ করান। একই রাত ১২টার দিকে শম্ভু শিকদার, আলফাছসহ পাঁচজন যুবককে পুলিশের লোক বলে তার ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সুজন তাকে ধর্ষণ করেছে বিষয়টি জেনে গেছে বলে তারাও তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, ৮ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। সকালে জ্ঞান ফিরলে রহিমা সুন্দরী নামে ওই নারীর কাছে গৃহবধূ তার ওপর এই নির্যাতনের কারণে জানতে চাইলে তিনি সঞ্জু শিকদার ও আলফাছ নামের দুই যুবককে এনে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করান। তারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন।

ওই গৃহবধূ জানান, ঘটনাটি জানাতে তিনি থানায় গেলে কর্তব্যরত এএসআই সুজন চন্দ্র দাস রহিমা সুন্দরীকে মুঠোফোনে জানিয়ে দেন তোমার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। খবর পেয়ে রহিমা সুন্দরী তাৎক্ষণিক থানায় এসে তার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধমক দিয়ে ঘটনাটি সামাজিকভাবে সমাধান করতে বলে তাড়িয়ে দেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি বাদী হয়ে সঞ্জু শিকদার, রহিমা সুন্দরী ও আলফাছ হোসেনসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার পর সঞ্জু শিকদার (৩৫) ও রহিমা সুন্দরীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here