গৃহবধূকে প্রাইভেট কারেই ধর্ষণ করে ছাত্রলীগকর্মীরা
সিলেটঃ
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে প্রাইভেট কারেই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় তারা গৃহবধূর স্বামীকে ছাত্রাবাসের ৭নং ব্লকের ৫ তলা ভবনের একটি পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নানাভাবে ব্যস্ত রাখে। এই সময়ের মধ্যে কারের মধ্যেই মারধর করে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। এমনকি লাঠি দিয়ে তার পাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে ও স্বর্ণের চেইনও ছিনতাই করে তারা
মামলার বাদী গৃহবধূর স্বামী আক্ষেপের সঙ্গে জানান, প্রায় ৩ মাস পূর্বে বিয়ে হয়েছে তাদের। খুব সুখেই দিন যাচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে নিজেদের প্রাইভেট কারে করে ঘুরতে বের হন। শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করার পর দক্ষিণ সুরমার বাড়ি ফিরছেন তারা। এমসি কলেজের গেটের সামনে কার রেখে সিগারেট কিনতে যাওয়া তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রাবাসের ভেতরে ৫ম তলার একটি ভবনের সামনে নিয়ে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। আমি তাদের কোনও সময়ই দেখিনি। আমাকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এসময় কয়েকজন পাহারা দিচ্ছিলো। তখন ওই ভবনের ২য় তলা থেকে এক যুবক বারান্দায় বের হলে তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে ছাত্রলীগের কর্মীরা। দূর থেকে আমি বিষয়টি দেখতে পাই। এরপর তারা আমার প্রাইভেট কার রেখে আধঘণ্টার মধ্যে ৪৪ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে। তখন আমি বিধ্বস্ত অবস্থায় আমার স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের সামনে এসে সিএনজি অটোরিকশা করে টিলাগড়ে যাই। আর পেছন থেকে উল্লাস করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেখান থেকে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশকে নিয়ে ছাত্রাবাসে এসে কার উদ্ধার করলেও ছাত্রলীগের কর্মীরা পালিয়ে যায়। যত দ্রুত সম্ভব মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
ধর্ষণ মামলায় এজহার নামীয় আসামিরা হচ্ছে, বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), সুনামগঞ্জ সদর থানার উমেদনগর গ্রামের তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), বর্তমানে তারেক মেজরটিলা এলাকার দিপীকা আ/এ ৫নং বাসায় বসবাস করছে। এছাড়া হবিগঞ্জ সদর থানার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানাধীন বড়নগদীপুর (জাগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শাহপরাণ থানার এসআই মিল্টন সরকার বাদী হয়ে সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছে।
মামলা সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে প্রাইভেট কার নিয়ে শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে যান স্বামী-স্ত্রী। জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজের সামনে প্রাইভেট কার রেখে সিগারেট কিনতে যান ওই যুবক। এসময় গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসেন গৃহবধূর স্বামী। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাকে মারধর করে। এসময় মাহবুবুর রহমান রনি চালকের পাশের সিটে বসে প্রাইভেট কার চালিয়ে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ৭নং ব্লকের ৫ তলা ভবনের সামনের খালি জায়গায় কারটি দাঁড় করায়। পরে ওই স্থানে মোটরসাইকেলে করে আরও কয়েকজন আসে। এসময় মামলার ২নং আসামি তারেক ওই যুবকের মানিব্যাগ থেকে ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া অপর আসামি অর্জুন লস্কর গৃহবধূর গলা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর গৃহবধূর স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মামলার এজহার নামীয় আসামি সাইফুর, তারেক, রনি ও অর্জুন ওই ভবনের পশ্চিম পাশে নিয়ে যায়। তারপর রাত ৮টার দিকে প্রাইভেট কারের ভেতরে সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণকারীরা গৃহবধূর স্বামীকে জানায়, প্রাইভেট কার নিতে হলে আরও ৪০ হাজার টাকা আধঘণ্টার মধ্যে তাদের দিতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের গেট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা করে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশকে অবগত করেন। এরপর পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেট কার উদ্ধার করার পাশাপাশি একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক ধর্ষণের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু আসামিরা স্থান পরিবর্তন করায় পুলিশ তাদের খোঁজ পাচ্ছে না। তবে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করার জন্য তৎপর রয়েছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।