গ্রেনেড হামলা: শরীরে ১৮শ স্প্লিন্টার নিয়েও বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা
সাভারঃ
আজ সেই ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এইদিনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় শিকার হয়ে ১৭৯৮টি স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন।
২১ আগস্টের সেই জনসভায় ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদক মাহবুবা পারভীন ছিলেন আইভি রহমানের পাশেই।
ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন। মাহবুবা পারভীনকে মৃত ভেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার সেখানে লাশ সনাক্ত করতে গেলে মাহবুবা পারভীনকে জীবিত দেখতে পান।
পরে ৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফিরে এলে দেশে তার চিকিৎসা ভালো না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে কলকাতায় পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান।
হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়েছিল শরীরে রয়েছে ১৮শ স্প্লিন্টার। এরমধ্যে মাথার দুটি স্প্লিন্টার তাকে অনবরত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তিনি পাগলের মতো হয়ে যান। তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। এরই মাঝে তার পা থেকে দুটি স্প্লিন্টার অপারেশন করে বের করা হয়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীরাও তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পারভিন।
২১ আগস্ট এলেই এর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠেন তিনি। কান্নায় চোখ-মুখ ভিজে যায়। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে তিনি আর স্মৃতিচারণ করতে চান না।
বর্তমানে ঢাকা জেলা (উত্তর) আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবা পারভীন মৃত্যুর আগে এ জঘন্য হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চান।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সাভারের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-গাড়ির অভাব না থাকলেও আহত মাহবুবা পারভীনকে অন্যের সহায়তায় রিকশা কিংবা বাসে যাতায়াত করতে হয়।
২০১৬ সলের ১৫ নভেম্বর তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ স্ট্রোক করে মারা যান। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের আর্কিটেকচার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা ও এককালীন ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন। এ থেকে যে টাকা আসে তাই দিয়ে চলে তার সংসার খরচ। বসবাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৪শ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্লাট উপহার পেয়েছেন তিনি।