ঢাকা ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চারজনকে তুলে নেওয়া হয় ডিবি পরিচয়ে

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ নারায়ণগঞ্জে নিহতদের মধ্যে চার যুবকের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ায়। তাদের একজন ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বাস চালালেও অন্য তিনজন স্থানীয় বেকারি শ্রমিক ছিলেন।

জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো অভিযোগ না থাকলেও নারায়ণগঞ্জে কেন এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হলেন— এ নিয়ে স্বজনসহ সবার মাঝেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। স্বজন ও স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। নিহত চারজন হলেন— ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত সোলায়মান খোন্দকারের ছেলে ফারুক খোন্দকার (৩৫), খাইরুল ইসলাম সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (৩০), লোকমান হোসেনের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও রতনের ছেলে লিটন (৩২)। ফারুক খোন্দকারের স্ত্রী (বড়) নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, তার স্বামী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাউছিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন এবং গ্লোরি এক্সপ্রেসের বাস চালাতেন। ১০ দিন আগেও তিনি বাড়ি এসেছিলেন। নাজমা খাতুন বলেন, ‘তিনি যদিও সেখানে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন, তবুও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। গাউছিয়ার বাড়ি থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের লোকজন তুলে নিয়ে গেলে আমার স্বামীর ছোট স্ত্রী আমাকে অবহিত করে। পরে আমরা খোঁজখবর নিয়ে তার কোনো সন্ধান পাইনি।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উল্লিখিত চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

পরিবারের দাবি রং মিস্ত্রি পুলিশ বলছে ডাকাত : রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে উদ্ধার করা দুই লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। নিহতরা হলেন— কামাল (২৫) ও ইমন (৩৫)। স্বজনরা দাবি করেছেন, ওই দুই যুবক গত ১৪ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। কামাল এবং ইমন দুজনই একসঙ্গে রঙের কাজ করতেন। তবে পুলিশ বলছে, নিহত দুজনের নামেই একাধিক ডাকাতি চেষ্টার মামলা রয়েছে। স্বজনরা জানান, কামালের বাসা রাজধানীর কদমতলীতে। আর ইমনের বাসা গাবতলীতে। এ ঘটনায় তাদের সহকর্মী মুনির নামে একজনকে তুরাগ থানা পুলিশ আটক করেছে। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে শরীরের কাপড়-চোপড় দেখে লাশ শনাক্ত করেন কামালের স্ত্রী চাঁদনী ও ইমনের স্ত্রী রোখসানা। এরপর তারা সেখান থেকে তুরাগ থানায় যান। সেখানে তারা স্বামীর লাশের বর্ণনা দেন এবং তা হস্তান্তরের দাবি করেন। এ সময় তুরাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দুলাল হোসেনের কাছে চাঁদনী ও রোখসানা জানান, কয়েকদিন যাবত তাদের স্বামীরা নিখোঁজ ছিলেন। এরপর তারা পত্র-পত্রিকার খবর দেখে মর্গে যান। সেখানে লাশের শরীরের কাপড় ও মুখের দাড়ি দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেন। কামালের স্ত্রী চাঁদনী এ প্রতিবেদককে জানান, গত ১৪ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে রঙের কাজ করার কথা বলে কদমতলীর বাসা থেকে বের হন কামাল। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তাকে হত্যার অভিযোগে তার সহকর্মী মুনিরকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মুত্তাকিন বলেন, ‘আটকের ঘটনাটি আমার নলেজে নেই। যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে কামালের নামে একাধিক এবং ইমনের নামে একটি ডাকাতির চেষ্টা মামলা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এর আগে রবিবার রাতে এই দুই লাশ শনাক্ত নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। তুরাগের দিয়াবাড়ীতে পচে গলে যাওয়া দুটি লাশ উদ্ধার করা হয় কাশবনের ভিতর থেকে। গত শনিবার মধ্যরাতে লাশ দুটি উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা বেশ কয়েকদিন আগেই তাদের হত্যার পর লাশ দুটি ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুরের বাসিন্দা মিজান লাশ শনাক্ত করে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে একজন তার ভাই বেলাল হোসেন বাবুর। অপরজন বাবুর বন্ধু সাইদুর রহমান বিপ্লবের। দুজনই ঝুট ব্যবসায়ী। মিজান জানিয়েছিলেন, গত ১১ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তার ভাইসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাদের আর খোঁজ  মেলেনি। এ ব্যাপারে মিজান টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি জিডি করেন। পরে এদের দুজনের স্ত্রী লাশ দুটি তাদের স্বামীর বলে শনাক্ত করেন।

জানা গেছে, উল্লিখিত সাইদুর রহমান বিপ্লব এবং বেলাল হোসেন বাবুর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গী থানার দত্তপাড়া এলাকায়। পুলিশ বলছে, তারা ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও রয়েছে। তবে বিপ্লব ও বাবুর পারিবারিক সূত্র জানায়, ১১ অক্টোবর দু’জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারি টঙ্গী পূর্ব থানায় ১২ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে। যাতে ফেনসিডিলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আরও পলাতক দেখানো হয় বিপ্লব আর বাবুকে। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশও র‌্যাবের মামলা করার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে বিপ্লব এবং বাবুর স্বজনরা নিশ্চিত হন যে- ওই দুজন মারা যাননি। র্যাবের হাতেই আটক ছিলেন। এ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকেও কয়েকজন আসেন লাশ শনাক্ত করতে।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এক নারী কাশবনের মধ্যে দুটি লাশ পড়ে থাকার কথা জানান। এরপরই তিনি তুরাগ থানায় খবর দেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ১০:২৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৮
৭৬০ Time View

চারজনকে তুলে নেওয়া হয় ডিবি পরিচয়ে

আপডেট সময় : ১০:২৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ নারায়ণগঞ্জে নিহতদের মধ্যে চার যুবকের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ায়। তাদের একজন ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বাস চালালেও অন্য তিনজন স্থানীয় বেকারি শ্রমিক ছিলেন।

জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো অভিযোগ না থাকলেও নারায়ণগঞ্জে কেন এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হলেন— এ নিয়ে স্বজনসহ সবার মাঝেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। স্বজন ও স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। নিহত চারজন হলেন— ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত সোলায়মান খোন্দকারের ছেলে ফারুক খোন্দকার (৩৫), খাইরুল ইসলাম সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (৩০), লোকমান হোসেনের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও রতনের ছেলে লিটন (৩২)। ফারুক খোন্দকারের স্ত্রী (বড়) নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, তার স্বামী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাউছিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন এবং গ্লোরি এক্সপ্রেসের বাস চালাতেন। ১০ দিন আগেও তিনি বাড়ি এসেছিলেন। নাজমা খাতুন বলেন, ‘তিনি যদিও সেখানে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন, তবুও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। গাউছিয়ার বাড়ি থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের লোকজন তুলে নিয়ে গেলে আমার স্বামীর ছোট স্ত্রী আমাকে অবহিত করে। পরে আমরা খোঁজখবর নিয়ে তার কোনো সন্ধান পাইনি।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উল্লিখিত চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

পরিবারের দাবি রং মিস্ত্রি পুলিশ বলছে ডাকাত : রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে উদ্ধার করা দুই লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। নিহতরা হলেন— কামাল (২৫) ও ইমন (৩৫)। স্বজনরা দাবি করেছেন, ওই দুই যুবক গত ১৪ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। কামাল এবং ইমন দুজনই একসঙ্গে রঙের কাজ করতেন। তবে পুলিশ বলছে, নিহত দুজনের নামেই একাধিক ডাকাতি চেষ্টার মামলা রয়েছে। স্বজনরা জানান, কামালের বাসা রাজধানীর কদমতলীতে। আর ইমনের বাসা গাবতলীতে। এ ঘটনায় তাদের সহকর্মী মুনির নামে একজনকে তুরাগ থানা পুলিশ আটক করেছে। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে শরীরের কাপড়-চোপড় দেখে লাশ শনাক্ত করেন কামালের স্ত্রী চাঁদনী ও ইমনের স্ত্রী রোখসানা। এরপর তারা সেখান থেকে তুরাগ থানায় যান। সেখানে তারা স্বামীর লাশের বর্ণনা দেন এবং তা হস্তান্তরের দাবি করেন। এ সময় তুরাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দুলাল হোসেনের কাছে চাঁদনী ও রোখসানা জানান, কয়েকদিন যাবত তাদের স্বামীরা নিখোঁজ ছিলেন। এরপর তারা পত্র-পত্রিকার খবর দেখে মর্গে যান। সেখানে লাশের শরীরের কাপড় ও মুখের দাড়ি দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেন। কামালের স্ত্রী চাঁদনী এ প্রতিবেদককে জানান, গত ১৪ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে রঙের কাজ করার কথা বলে কদমতলীর বাসা থেকে বের হন কামাল। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তাকে হত্যার অভিযোগে তার সহকর্মী মুনিরকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মুত্তাকিন বলেন, ‘আটকের ঘটনাটি আমার নলেজে নেই। যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে কামালের নামে একাধিক এবং ইমনের নামে একটি ডাকাতির চেষ্টা মামলা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এর আগে রবিবার রাতে এই দুই লাশ শনাক্ত নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। তুরাগের দিয়াবাড়ীতে পচে গলে যাওয়া দুটি লাশ উদ্ধার করা হয় কাশবনের ভিতর থেকে। গত শনিবার মধ্যরাতে লাশ দুটি উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা বেশ কয়েকদিন আগেই তাদের হত্যার পর লাশ দুটি ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুরের বাসিন্দা মিজান লাশ শনাক্ত করে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে একজন তার ভাই বেলাল হোসেন বাবুর। অপরজন বাবুর বন্ধু সাইদুর রহমান বিপ্লবের। দুজনই ঝুট ব্যবসায়ী। মিজান জানিয়েছিলেন, গত ১১ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তার ভাইসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাদের আর খোঁজ  মেলেনি। এ ব্যাপারে মিজান টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি জিডি করেন। পরে এদের দুজনের স্ত্রী লাশ দুটি তাদের স্বামীর বলে শনাক্ত করেন।

জানা গেছে, উল্লিখিত সাইদুর রহমান বিপ্লব এবং বেলাল হোসেন বাবুর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গী থানার দত্তপাড়া এলাকায়। পুলিশ বলছে, তারা ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও রয়েছে। তবে বিপ্লব ও বাবুর পারিবারিক সূত্র জানায়, ১১ অক্টোবর দু’জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারি টঙ্গী পূর্ব থানায় ১২ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে। যাতে ফেনসিডিলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আরও পলাতক দেখানো হয় বিপ্লব আর বাবুকে। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশও র‌্যাবের মামলা করার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে বিপ্লব এবং বাবুর স্বজনরা নিশ্চিত হন যে- ওই দুজন মারা যাননি। র্যাবের হাতেই আটক ছিলেন। এ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকেও কয়েকজন আসেন লাশ শনাক্ত করতে।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এক নারী কাশবনের মধ্যে দুটি লাশ পড়ে থাকার কথা জানান। এরপরই তিনি তুরাগ থানায় খবর দেন।