ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চা ও ধূমপান একসঙ্গে করলে কি হয় ?

সবুজদেশ ডেস্ক:

 

অফিসে কাজ করেন বা বাইরের কাজে যান, অনেকেই কাজের মাঝে বিরতি নিয়ে চা পান করেন। তবে অনেকে অফিসের ভিতরে না থেকে বাইরে যান। কারণ অনেকের চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস আছে। এই সংমিশ্রণ আপনার মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি কমালেও, এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আপনার যদি চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনি নিজেই নিজের জন্য রোগ ডেকে আনছেন। হ্যাঁ, চা এবং সিগারেটের সংমিশ্রণ আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য অনেক রোগের কারণ হতে পারে।

সিগারেট এবং চা সংমিশ্রণ

আপনি কি জানেন? একটি সিগারেটে ৬ থেকে ১২ মিলিগ্রাম নিকোটিন থাকে। এটি হৃদ্যন্ত্রের জন্য ভালো নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপায়ীদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। সিগারেটের নিকোটিন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলোকে সংকুচিত করে। ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হয় না। এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

চায়ে পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক যৌগ থাকে। এগুলোকে হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এর উপকারী গুণাবলি নষ্ট হয়। দুধের প্রোটিন চায়ের পলিফেনলের প্রভাব কমিয়ে দেয়। ফলে আপনি যদি বেশি চা পান করেন, তাহলে আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে। এই দুটিই হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

চা পান করার সময় ধূমপানের কুফল

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, চা পান করার সময় ধূমপান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। চায়ের টক্সিন সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। তাই কোনোভাবেই চা পান করার সময় ধূমপান করা উচিত নয়।

ক্যান্সার

ধূমপান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে মুখের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা পান করার সময় ধূমপান করলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। কারণ চা আপনার শরীরের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে এবং সিগারেটের টক্সিনের প্রভাব বাড়ায়।

পাচনতন্ত্রের ওপর প্রভাব

চা এবং সিগারেটের সংমিশ্রণ আপনার পাচনতন্ত্রের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে এটি আপনার অন্ত্র এবং পেটের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে পেট ব্যথা, অ্যাসিডিটি, গ্যাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপ

ধূমপান করার সময় সবাই প্রশান্তি অনুভব করেন। কিন্তু পরে এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বাড়ায়। চায়ের ক্যাফেইন আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। চাপ এবং উদ্বেগও বেড়ে যায়।

দাঁত এবং মুখের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

চা এবং সিগারেটের ধোঁয়ার ট্যানিন দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি আপনার সাদা দাঁতকে হলুদ করে দেয় এবং দাঁতের শক্তি কমিয়ে দেয়। ধূমপানের ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এটি মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।

চা পান করার সময় ধূমপানের অভ্যাস কীভাবে ত্যাগ করবেন?

আপনার যদি চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে এটি কমানোর চেষ্টা করুন এবং অবশেষে ত্যাগ করুন। চায়ের পরিবর্তে গরম পানি বা ভেষজ চা পান করুন। ধূমপানের নেশা ছাড়তে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনি কি জানেন? বেশি চা পান করলে বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। এটি আপনার কিডনির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং আপনার শরীরকে পানিশূন্য করে। এই দুটিই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই আপনি যদি এই অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারেন, তাহলে পরিবার বা বন্ধুদের সাহায্য নিন।

অনেকে চাপের মুখে বেশি চা পান করেন বা ধূমপান করেন। কিন্তু চা এবং সিগারেট আপনার চাপ আরও বাড়ায়। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। কারণ চা এবং সিগারেটের আসক্ত ব্যক্তিরা সামান্য চাপ অনুভব করলেই চা পান করার সময় ধূমপান শুরু করেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ০১:০১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
৩৪ Time View

চা ও ধূমপান একসঙ্গে করলে কি হয় ?

আপডেট সময় : ০১:০১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

 

অফিসে কাজ করেন বা বাইরের কাজে যান, অনেকেই কাজের মাঝে বিরতি নিয়ে চা পান করেন। তবে অনেকে অফিসের ভিতরে না থেকে বাইরে যান। কারণ অনেকের চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস আছে। এই সংমিশ্রণ আপনার মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি কমালেও, এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আপনার যদি চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনি নিজেই নিজের জন্য রোগ ডেকে আনছেন। হ্যাঁ, চা এবং সিগারেটের সংমিশ্রণ আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য অনেক রোগের কারণ হতে পারে।

সিগারেট এবং চা সংমিশ্রণ

আপনি কি জানেন? একটি সিগারেটে ৬ থেকে ১২ মিলিগ্রাম নিকোটিন থাকে। এটি হৃদ্যন্ত্রের জন্য ভালো নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপায়ীদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। সিগারেটের নিকোটিন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলোকে সংকুচিত করে। ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হয় না। এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

চায়ে পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক যৌগ থাকে। এগুলোকে হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এর উপকারী গুণাবলি নষ্ট হয়। দুধের প্রোটিন চায়ের পলিফেনলের প্রভাব কমিয়ে দেয়। ফলে আপনি যদি বেশি চা পান করেন, তাহলে আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে। এই দুটিই হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

চা পান করার সময় ধূমপানের কুফল

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, চা পান করার সময় ধূমপান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। চায়ের টক্সিন সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। তাই কোনোভাবেই চা পান করার সময় ধূমপান করা উচিত নয়।

ক্যান্সার

ধূমপান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে মুখের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা পান করার সময় ধূমপান করলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। কারণ চা আপনার শরীরের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে এবং সিগারেটের টক্সিনের প্রভাব বাড়ায়।

পাচনতন্ত্রের ওপর প্রভাব

চা এবং সিগারেটের সংমিশ্রণ আপনার পাচনতন্ত্রের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে এটি আপনার অন্ত্র এবং পেটের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে পেট ব্যথা, অ্যাসিডিটি, গ্যাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপ

ধূমপান করার সময় সবাই প্রশান্তি অনুভব করেন। কিন্তু পরে এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বাড়ায়। চায়ের ক্যাফেইন আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। চাপ এবং উদ্বেগও বেড়ে যায়।

দাঁত এবং মুখের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

চা এবং সিগারেটের ধোঁয়ার ট্যানিন দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি আপনার সাদা দাঁতকে হলুদ করে দেয় এবং দাঁতের শক্তি কমিয়ে দেয়। ধূমপানের ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এটি মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।

চা পান করার সময় ধূমপানের অভ্যাস কীভাবে ত্যাগ করবেন?

আপনার যদি চা পান করার সময় ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে এটি কমানোর চেষ্টা করুন এবং অবশেষে ত্যাগ করুন। চায়ের পরিবর্তে গরম পানি বা ভেষজ চা পান করুন। ধূমপানের নেশা ছাড়তে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনি কি জানেন? বেশি চা পান করলে বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। এটি আপনার কিডনির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং আপনার শরীরকে পানিশূন্য করে। এই দুটিই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই আপনি যদি এই অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারেন, তাহলে পরিবার বা বন্ধুদের সাহায্য নিন।

অনেকে চাপের মুখে বেশি চা পান করেন বা ধূমপান করেন। কিন্তু চা এবং সিগারেট আপনার চাপ আরও বাড়ায়। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। কারণ চা এবং সিগারেটের আসক্ত ব্যক্তিরা সামান্য চাপ অনুভব করলেই চা পান করার সময় ধূমপান শুরু করেন।