ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় হাজতির মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ অতিরিক্ত মারধর

ফাইল ছবি-

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে মাদক মামলার এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২ জুন) ভোর সাড়ে ৫টায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত হাজতি মহিরুল ইসলাম (৪০) দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার কুড়ালগাছি পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা থানার ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলার আসামি মহিরুল ইসলাম। শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ মহিরুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। একইদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিরুল। পরে রাত ২টা ২৫ মিনিটে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম আব্দুর রউফ শিবলুর উপস্থিতিতে হাসপাতালের লাশঘরে সদর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুর ২টায় মনিরুলের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।

তবে এ মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মহিরুল ইসলামের পরিবার। তাদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে তাকে মারধর করা হয়, যার ফলে গুরুতর আহত হয়ে পরে তার মৃত্যু ঘটে।

নিহত মহিরুলের বড় ভাই সুবার আলী বলেন, ‘পুলিশ যখন তাকে তুলে নিয়ে যায়, তখন তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু এখন দেখি ভাইয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশকে এর দায় নিতে হবে, পুলিশই তাকে মেরে ফেলেছে।

নিহতের ভাতিজি কাজল রেখা বলেন, ‘সাদা পোশাকের দুজন পুলিশ হঠাৎ করেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু চাচা তাদের জিজ্ঞাসা করছিল আমি কি করেছি, আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের সামনেও পুলিশ চাচাকে মারধর করে। চাচা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

ভাতিজা মো. গাফ্ফার বলেন, ‘দর্শনা থানার দুজন পুলিশ যখন ছোট আব্বুকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আমরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। পুলিশ বলছিল ওয়ারেন্ট আছে, কিন্তু ওয়ারেন্ট আমাদের দেখায়নি। আমি ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে আমাকে থাপ্পড় মারতে চেষ্টা করে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিন সাদী বলেন, ‘কারাগার থেকে হাজতি মনিরুলকে যখন জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় তিনি সম্পূর্ণ চেতনায় ছিলেন না।

জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নাসিমুজ্জামান তাকে তাৎক্ষণিক ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ডা. নাজিমুজ্জামান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোকে মারা যেতে পারেন। ‘

এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘বেলা ১১টার মধ্যে দামুড়হুদা থানার মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মহিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাড়ে ১১টার মধ্যেই আমরা তাকে কোর্টে চালান করে দেই। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। আসামিকে মারধর করার কোনো সুযোগ নেই, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সবুজদেশ/এসইউ

চুয়াডাঙ্গায় হাজতির মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ অতিরিক্ত মারধর

Update Time : ০৭:৫২:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে মাদক মামলার এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২ জুন) ভোর সাড়ে ৫টায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত হাজতি মহিরুল ইসলাম (৪০) দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার কুড়ালগাছি পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা থানার ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলার আসামি মহিরুল ইসলাম। শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ মহিরুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। একইদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিরুল। পরে রাত ২টা ২৫ মিনিটে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম আব্দুর রউফ শিবলুর উপস্থিতিতে হাসপাতালের লাশঘরে সদর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুর ২টায় মনিরুলের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।

তবে এ মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মহিরুল ইসলামের পরিবার। তাদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে তাকে মারধর করা হয়, যার ফলে গুরুতর আহত হয়ে পরে তার মৃত্যু ঘটে।

নিহত মহিরুলের বড় ভাই সুবার আলী বলেন, ‘পুলিশ যখন তাকে তুলে নিয়ে যায়, তখন তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু এখন দেখি ভাইয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশকে এর দায় নিতে হবে, পুলিশই তাকে মেরে ফেলেছে।

নিহতের ভাতিজি কাজল রেখা বলেন, ‘সাদা পোশাকের দুজন পুলিশ হঠাৎ করেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু চাচা তাদের জিজ্ঞাসা করছিল আমি কি করেছি, আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের সামনেও পুলিশ চাচাকে মারধর করে। চাচা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

ভাতিজা মো. গাফ্ফার বলেন, ‘দর্শনা থানার দুজন পুলিশ যখন ছোট আব্বুকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আমরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। পুলিশ বলছিল ওয়ারেন্ট আছে, কিন্তু ওয়ারেন্ট আমাদের দেখায়নি। আমি ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে আমাকে থাপ্পড় মারতে চেষ্টা করে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিন সাদী বলেন, ‘কারাগার থেকে হাজতি মনিরুলকে যখন জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় তিনি সম্পূর্ণ চেতনায় ছিলেন না।

জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নাসিমুজ্জামান তাকে তাৎক্ষণিক ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ডা. নাজিমুজ্জামান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোকে মারা যেতে পারেন। ‘

এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘বেলা ১১টার মধ্যে দামুড়হুদা থানার মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মহিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাড়ে ১১টার মধ্যেই আমরা তাকে কোর্টে চালান করে দেই। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। আসামিকে মারধর করার কোনো সুযোগ নেই, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সবুজদেশ/এসইউ