সারা দিন গ্যাস থাকে না। আসে মধ্যরাতে। তখন মাঝেমধ্যেই চুলার চাবি ঘোরালে গ্যাসের বদলে পানি বের হয়। আবার অনেক সময় চুলা জ্বলার পর আগুনের শিখা ওপরে উঠে দপ করে নিভে যায়।

গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে এমন অভিযোগ ১১ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের বাসিন্দাদের। তাঁরা প্রথম আলোকে জানান, তিন-চার মাস ধরেই এ সমস্যা ভোগাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যেই এ ঘটনা ঘটছে। মিস্ত্রি ডেকে গ্যাসের লাইন থেকে পানি বের না করার আগ পর্যন্ত রান্না করা যায় না। অনেকে আবার দুর্ঘটনার ভয়ও পাচ্ছেন।

শামসুন্নাহার বলেন, চুলার চাবি ঘোরালেই পানি আসে। তখন মিস্ত্রি এনে পানি বের করার আগে রান্না করা যাবে না। আবার অনেক সময় চুলা ধপ করে জ্বলে উঠে বন্ধ হয়ে যায়। গত চার মাসে শামসুন্নাহার সাতবার মিস্ত্রি ডেকে গ্যাসের লাইন থেকে পানি বের করেছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি তাঁর হাজার দশেক টাকা খরচ হয়েছে।

বাসিন্দারা অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে জানান, এই এলাকায় অনেক দিন ধরেই গ্যাসের সংকট চলছে। গত আট মাসে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আগে ভোরে চলে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে গ্যাস চলে আসত। কিন্তু দিন দশেকের বেশি রাত ১২টার আগে গ্যাস আসে না। কিন্তু যখন গ্যাস আসে, তখন মাঝেমধ্যেই লাইনে পানি আসায় তাঁরা চুলা জ্বালাতে পারেন না। গত বৃহস্পতিবার রাতেও এমনটা ঘটেছে। ফলে তাঁরা রাতে রান্না করতে পারেননি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতি বাড়িতেই বাড়তি চুলার ব্যবস্থা আছে। কেউ কেরোসিন চুলা, কেউ মাটির চুলা বানিয়ে রান্না করে থাকেন। এতে রান্না নিয়ে তাঁদের ভোগান্তির পাশাপাশি পদে পদে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। আবার ভাড়াটে-বাড়িওয়ালাদের মধ্যেও ঝামেলার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘গ্যাস আসে রাইত ১২টায়। আলো ফোটার আগেই চইল্যা যায়। তা–ও যহন আসে রানবার পারি না। চুলা ভরা পানি। স্টোভে রানতে কেরোসিন কেনা লাগে। গ্যাসের বিলও দেওন লাগে। আবার গ্যাসের লাইন থেকে পানি বাইর করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগে।’

ফারজানা গতকাল শুক্রবারও মিস্ত্রি ডেকে গ্যাসের লাইন থেকে পানি বের করেছেন। এ জন্য তাঁর এক হাজার টাকা গচ্চা গেছে। তিনি বলেন, প্রতিবার চুলা ঠিক করার সময় কমপক্ষে আধা লিটার পানি বের হয়।

আরেক বাসিন্দারা বলেন, এ সমস্যার বিষয়ে জানালে ‘এসে দেখবেন’ আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে সমস্যা সমাধান করছেন অনেক বাসিন্দা।

তবে ভোগান্তি, বাড়তি টাকা খরচের পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন গ্রাহকেরা। উম্মে সালমা দুই সন্তান, স্বামীসহ মিরপুর ১১ নম্বরে থাকেন। তিনি বলেন, ‘রান্না, খাওয়া নিয়ে এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ মেলা দিনের। তার থেকে বড় ভয় গ্যাস দুর্ঘটনার। যদি কিছু হয়ে যায় এই ভেবে রাতে ভয়ে ভয়ে চুলা জ্বালাই।’

মিরপুরের ১০ নম্বর, ১২ নম্বর, ১৩ নম্বরের কিছু অংশ থেকেও গ্যাসের লাইনে পানি আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) আরমানুর রেজা বলেন, গ্যাস লাইনগুলো মাটির নিচে থাকে। ওয়াসা যখন ঠিকাদার দিয়ে কাজ করায়, তখনই সমস্যাগুলো হয়। খোঁড়াখুঁড়ির সময় লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশির ভাগ সময় ঠিকাদার কোম্পানি না জানিয়ে চুপচাপ কাজ শেষ করে চলে যায়। ফলে সেসব এলাকায় সমস্যা থেকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াসার অবহেলাকেও দায়ী করেন।

এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো আবদ্ধ জায়গায় অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ থাকলে গ্যাসের লাইন থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেই বলা যাচ্ছে না। বর্ষাকালে এ সমস্যা বাড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যার বিষয়ে জানানো হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here