ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চেক ডিজঅনার মামলায় অপরাধ প্রমাণে যা জানা দরকার

Reporter Name

মো: রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেক এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা চেক প্রদানকারীর একাউন্টে না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পক্ষে চেক গ্রহণকারীকে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না। অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যান করা হয়। যা চেক ডিজঅনার নামে পরিচিত। পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হলে চেক প্রদানকারী অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। কারন, অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংকের চেক প্রত্যাখ্যাত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তহবিল অপর্যাপ্ততায় কোন চেক প্রত্যাখ্যাত বা ডিজঅনার হলে সেইসব অপরাধের প্রতিকারের সুরক্ষা বিধান করা হয়েছে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এনআই অ্যাক্ট) ১৩৮, ১৪০ ও ১৪১ ধারায়।

দেশের আদালতসমূহে প্রচুর এনআই অ্যাক্টের অধীনে মামলা চলমান আছে। এই আইনে প্রতিদিন নতুন মামলা দায়েরও হচ্ছে। এসব দেখে সহজে অনুমান করা যায় দৈনন্দিন আর্থিক কর্মকান্ডে চেক এর অপব্যবহার কি পরিমান হচ্ছে। চেক ডিজঅনারের মামলা অন্যান্য সাধারণ আইনের চেয়ে ব্যাতিক্রম। যার কারণে এই আইন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি মামলায় অপরাধ প্রমাণ করতে বেশ কিছু সতর্কতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় এবং নিয়ম মেনে মামলা করে রায় নিতে হয়। এই আইন সম্পর্কে অবহেলা বা অজ্ঞতা কিংবা অজানার কারণে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন ও ক্ষতিগ্রস্থ হন। সমস্যা গুলোর কারনে মামলা খারিজ হয় কিংবা বিচারে অপরাধ প্রমাণে ব্যার্থ হন। যার ফলে বাদীর আর ঐ টাকা পাওয়া হয় না। মামলা মোকদ্দমা করতে তার অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সামাজিকভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হন। মূলত এসব বিবেচনায় এই লেখায় প্রয়োজনীয় কিছু আইনগত বিষয়ে আলোচনা করব যা চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় অপরাধ প্রমান করতে সহায়ক হবে আশাকরি।

প্রথম কথা হচ্ছে এই আইনে মামলা দায়ের করতে হলে কোন দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেক এর ব্যবহারটা হবে। উক্ত স্বাক্ষরিত চেকটি প্রদানকারী কর্তৃক ইস্যুর তারিখ থেকে ৬ মাস সময়ের মধ্যে নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে চেক গ্রহণকারীকে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত আসার অর্থাৎ ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হবে। চেক ইস্যুকারীকে তিনভাবে উপরোক্ত দাবী জানানো যায়; চেক প্রদানকারী অর্থাৎ নোটিশ গ্রহীতার হাতে সরাসরি নোটিশ প্রদান করে অথবা প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চেক প্রদানকারীর জ্ঞাত ঠিকানায় অর্থাৎ সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর নোটিশ প্রেরণ করে অথবা বহুল প্রচারিত কোনো জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। আইনে প্রতিটা ক্ষেত্রেই ‘অথবা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন একটা পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। চেক প্রদানকারী নোটিশ প্রাপ্তির পর চেকের প্রাপক বরাবরে চেকে উল্লেখিত অংকের টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে। মামলা করার ক্ষেত্রে বর্ণিত সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেওয়া হয়েছে কেবল তিনিই মামলা করতে পারে। ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত সেই আদালতে করতে হবে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেওয়া হয়েছে তিনিই মামলা করতে পারেন। অভিযোগ নালিশি মামলা বা সিআর মামলা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করতে হবে। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

মামলার আরজিতে চেক প্রদানকারীর নাম, প্রদানের তারিখ, ডিজঅনার হওয়ার তারিখ, ব্যাংক ও শাখার নাম, হিসাব নম্বর, চেক নম্বর ও টাকার পরিমাণ এবং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চেক দেওয়া হয়ে থাকলে ইস্যুকারী কর্মকর্তার নাম, পদবি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করতে হবে। মামলা দায়ের করার পর সমন এবং ওয়ারেন্ট দ্রুত জারির জন্য স্পেশাল তদবির করতে হবে যাতে আসামী হাজির হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করলেও অপরাধের মূল বিচার হয় দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত ইচ্ছা করলে যুগ্ম দায়রা আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন। বিচার শেষে অপরাধের শাস্তি হিসাবে আইনানুসারে আদালত এক বছরের কারাদন্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত পরিমাণ অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ টাকা যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন সেই আদালতে জমা দিতে হবে একাউন্টধারীকে।

চেকে উল্লেখিত টাকার যতটুকু জরিমানা হিসেবে আদায় হবে তা চেকের বাহক বা ধারককে প্রদান করা হয়। অনেক সময়ে দেখা যায় আসামীরা সাজা খেটেই বেরিয়ে যান। টাকা আর পরিশোধ করেন না। বিজ্ঞ বিচারিক আদালত চেকের মামলায় জরিমানার টাকা আদায়ে জেলা কালেক্টর বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী কৌশলী মারফত দেওয়ানী আদালতে জারী মামলা দায়ের করতে হয়। যদি কোন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে মামলা করা না যায় তাহরে দন্ডবিধি ৪০৬ ও ৪২০ ধারা অনুসারে ফৌজদারি মামলা করা যায়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে। মোটামুটি উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে চেক সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়।

লেখক : আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট। ইমেইল : ll.braihan@gmail.com

About Author Information
আপডেট সময় : ০১:৫৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
৪২৫ Time View

চেক ডিজঅনার মামলায় অপরাধ প্রমাণে যা জানা দরকার

আপডেট সময় : ০১:৫৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মো: রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেক এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা চেক প্রদানকারীর একাউন্টে না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পক্ষে চেক গ্রহণকারীকে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না। অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যান করা হয়। যা চেক ডিজঅনার নামে পরিচিত। পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হলে চেক প্রদানকারী অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। কারন, অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংকের চেক প্রত্যাখ্যাত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তহবিল অপর্যাপ্ততায় কোন চেক প্রত্যাখ্যাত বা ডিজঅনার হলে সেইসব অপরাধের প্রতিকারের সুরক্ষা বিধান করা হয়েছে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এনআই অ্যাক্ট) ১৩৮, ১৪০ ও ১৪১ ধারায়।

দেশের আদালতসমূহে প্রচুর এনআই অ্যাক্টের অধীনে মামলা চলমান আছে। এই আইনে প্রতিদিন নতুন মামলা দায়েরও হচ্ছে। এসব দেখে সহজে অনুমান করা যায় দৈনন্দিন আর্থিক কর্মকান্ডে চেক এর অপব্যবহার কি পরিমান হচ্ছে। চেক ডিজঅনারের মামলা অন্যান্য সাধারণ আইনের চেয়ে ব্যাতিক্রম। যার কারণে এই আইন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি মামলায় অপরাধ প্রমাণ করতে বেশ কিছু সতর্কতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় এবং নিয়ম মেনে মামলা করে রায় নিতে হয়। এই আইন সম্পর্কে অবহেলা বা অজ্ঞতা কিংবা অজানার কারণে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন ও ক্ষতিগ্রস্থ হন। সমস্যা গুলোর কারনে মামলা খারিজ হয় কিংবা বিচারে অপরাধ প্রমাণে ব্যার্থ হন। যার ফলে বাদীর আর ঐ টাকা পাওয়া হয় না। মামলা মোকদ্দমা করতে তার অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সামাজিকভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হন। মূলত এসব বিবেচনায় এই লেখায় প্রয়োজনীয় কিছু আইনগত বিষয়ে আলোচনা করব যা চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় অপরাধ প্রমান করতে সহায়ক হবে আশাকরি।

প্রথম কথা হচ্ছে এই আইনে মামলা দায়ের করতে হলে কোন দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেক এর ব্যবহারটা হবে। উক্ত স্বাক্ষরিত চেকটি প্রদানকারী কর্তৃক ইস্যুর তারিখ থেকে ৬ মাস সময়ের মধ্যে নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে চেক গ্রহণকারীকে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত আসার অর্থাৎ ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হবে। চেক ইস্যুকারীকে তিনভাবে উপরোক্ত দাবী জানানো যায়; চেক প্রদানকারী অর্থাৎ নোটিশ গ্রহীতার হাতে সরাসরি নোটিশ প্রদান করে অথবা প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চেক প্রদানকারীর জ্ঞাত ঠিকানায় অর্থাৎ সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর নোটিশ প্রেরণ করে অথবা বহুল প্রচারিত কোনো জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। আইনে প্রতিটা ক্ষেত্রেই ‘অথবা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন একটা পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। চেক প্রদানকারী নোটিশ প্রাপ্তির পর চেকের প্রাপক বরাবরে চেকে উল্লেখিত অংকের টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে। মামলা করার ক্ষেত্রে বর্ণিত সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেওয়া হয়েছে কেবল তিনিই মামলা করতে পারে। ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত সেই আদালতে করতে হবে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেওয়া হয়েছে তিনিই মামলা করতে পারেন। অভিযোগ নালিশি মামলা বা সিআর মামলা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করতে হবে। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

মামলার আরজিতে চেক প্রদানকারীর নাম, প্রদানের তারিখ, ডিজঅনার হওয়ার তারিখ, ব্যাংক ও শাখার নাম, হিসাব নম্বর, চেক নম্বর ও টাকার পরিমাণ এবং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চেক দেওয়া হয়ে থাকলে ইস্যুকারী কর্মকর্তার নাম, পদবি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করতে হবে। মামলা দায়ের করার পর সমন এবং ওয়ারেন্ট দ্রুত জারির জন্য স্পেশাল তদবির করতে হবে যাতে আসামী হাজির হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করলেও অপরাধের মূল বিচার হয় দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত ইচ্ছা করলে যুগ্ম দায়রা আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন। বিচার শেষে অপরাধের শাস্তি হিসাবে আইনানুসারে আদালত এক বছরের কারাদন্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত পরিমাণ অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ টাকা যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন সেই আদালতে জমা দিতে হবে একাউন্টধারীকে।

চেকে উল্লেখিত টাকার যতটুকু জরিমানা হিসেবে আদায় হবে তা চেকের বাহক বা ধারককে প্রদান করা হয়। অনেক সময়ে দেখা যায় আসামীরা সাজা খেটেই বেরিয়ে যান। টাকা আর পরিশোধ করেন না। বিজ্ঞ বিচারিক আদালত চেকের মামলায় জরিমানার টাকা আদায়ে জেলা কালেক্টর বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী কৌশলী মারফত দেওয়ানী আদালতে জারী মামলা দায়ের করতে হয়। যদি কোন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে মামলা করা না যায় তাহরে দন্ডবিধি ৪০৬ ও ৪২০ ধারা অনুসারে ফৌজদারি মামলা করা যায়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে। মোটামুটি উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে চেক সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়।

লেখক : আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট। ইমেইল : ll.braihan@gmail.com