ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল যশোরের চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে গিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রতিনিধিদল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এ সময় গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতা নারায়ণপুর গ্রামের রুহুল আমিন এবং চুটারহুদা গ্রামের ইসরাফিলের বাড়িতে যান। তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই শিবির নেতার পিতা ও মাতার সাক্ষাৎকার নেন প্রতিনিধি দল। সাক্ষাৎকারে সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুহুল আমিনের মা নাজমা বেগম এবং ইসরাফিলের পিতা আব্দুর রহমান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এই তদন্ত পরিচালনা করেন। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্টও একটি প্রতিনিধি দল তদন্ত করেছিল। গতকাল ঘটনাস্থলে দ্বিতীয়বারের মতো এলাকার সাধারণ মানুষ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী প্রতিনিধি দলের সামনে সাক্ষ্য দেন।

এ সময় সাক্ষ্যদাতারা ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা বলেন, পতিত সরকারের শাসনামলে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন চৌগাছা থানার ওসি মশিউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই আকিক, এসআই মখলেস, এসআই আহসান, এএসআই মাজেদ হোসেন, এসআই জামাল ও তাদের সঙ্গীরা তাদেরকে মহেশপুর–চৌগাছা সড়কের টেংগুরপুর মোড় থেকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করেন। পরে রাতে তাদেরকে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দুজনের পায়ে গুলি করে পুলিশ।

সেখান থেকে তাদেরকে চৌগাছা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইসরাফিল হোসেনের একটি ও রুহুল আমিনের একটি পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাদের জেলে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন দুই শিবির নেতা। অভিযোগের তদন্ত করতেই দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধিদল তদন্তে যান।

ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমরা এর আগেও একবার ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। এ ঘটনায় এসআই আকিকসহ তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত নয়, তাদের কেউ যাতে জড়িয়ে না যায় সে জন্য স্বচ্ছতার স্বার্থে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হবে।”

সবুজদেশ/এমবি/এসএএস

Tag :
জনপ্রিয়

চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম

Update Time : ০৮:৪৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল যশোরের চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে গিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রতিনিধিদল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এ সময় গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতা নারায়ণপুর গ্রামের রুহুল আমিন এবং চুটারহুদা গ্রামের ইসরাফিলের বাড়িতে যান। তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই শিবির নেতার পিতা ও মাতার সাক্ষাৎকার নেন প্রতিনিধি দল। সাক্ষাৎকারে সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুহুল আমিনের মা নাজমা বেগম এবং ইসরাফিলের পিতা আব্দুর রহমান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এই তদন্ত পরিচালনা করেন। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্টও একটি প্রতিনিধি দল তদন্ত করেছিল। গতকাল ঘটনাস্থলে দ্বিতীয়বারের মতো এলাকার সাধারণ মানুষ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী প্রতিনিধি দলের সামনে সাক্ষ্য দেন।

এ সময় সাক্ষ্যদাতারা ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা বলেন, পতিত সরকারের শাসনামলে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন চৌগাছা থানার ওসি মশিউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই আকিক, এসআই মখলেস, এসআই আহসান, এএসআই মাজেদ হোসেন, এসআই জামাল ও তাদের সঙ্গীরা তাদেরকে মহেশপুর–চৌগাছা সড়কের টেংগুরপুর মোড় থেকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করেন। পরে রাতে তাদেরকে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দুজনের পায়ে গুলি করে পুলিশ।

সেখান থেকে তাদেরকে চৌগাছা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইসরাফিল হোসেনের একটি ও রুহুল আমিনের একটি পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাদের জেলে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন দুই শিবির নেতা। অভিযোগের তদন্ত করতেই দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধিদল তদন্তে যান।

ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমরা এর আগেও একবার ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। এ ঘটনায় এসআই আকিকসহ তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত নয়, তাদের কেউ যাতে জড়িয়ে না যায় সে জন্য স্বচ্ছতার স্বার্থে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হবে।”

সবুজদেশ/এমবি/এসএএস