যশোরের চৌগাছা উপজেলার কুঠিপাড়ায় অবস্থিত দারুল আনোয়ার নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র পড়ানোর নামে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা প্রধান আবু জারের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে এর আগে একাধিক ছাত্র মাদ্রাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, অতিরিক্ত মারধর ও ভয়ভীতির কারণে প্রায়ই ছাত্ররা পালিয়ে যায় ওই মাদ্রাসা থেকে। গত ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার একই কারণে পালিয়ে যায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের প্রবাসী ইয়াছিন আলীর ছেলে জুনাইদ (১৩), ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের আমির হোসেনের দুই ছেলে হৃদয় (১১) ও নিহাদ (৮)। পরে পরিবারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানালে হৃদয় ও নিহাদকে অভিভাবকরা মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু জুনাইদকে তার মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও আবু জার জোরপূর্বক বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আরো অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত ভয়ভীতির কারণে সম্প্রতি জুনাইদ নামে এক শিক্ষার্থী গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বরে আক্রান্ত হলেও পরিবারকে না জানিয়ে নিজে ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়াতে থাকেন মাদ্রাসা প্রধান আবু জার। গত সোমবার প্রচণ্ড জ্বরে জ্ঞান হারালে তাকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিন সে চোখও খুলতে পারেনি।
এ সময় জুনাইদের মা রেবেকা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলের চেহারাই পাল্টে গেছে। আমি তাকে আর ওই মাদ্রাসায় দিতে চাইনি। কিন্তু আবু জার আসামি স্টাইলে আমার ছেলেকে জোর করে নিয়ে যায়।”
জুনাইদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এক পর্যায়ে জুনাইদের দাদির কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আবু জার। তখন জুনাইদের খালাতো ভাই (পেশায় সাংবাদিক) প্রতিবাদ করেন। এসময় হুজুর হঠাৎ উত্তেজিত এবং মারমুখী হয়ে বলেন, “আপনার মতো সাংবাদিক আমার বাড়িতেও পড়ে আছে।”
এদিকে দীর্ঘ ১৫ ঘন্টা পর চোখ খুলে অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্র জুনাইদ হোসেন জানায়, “ওই মাদ্রাসায় সে আর যাবেনা। হুজুরের ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, হুজুর তাকে প্রচুর মারধর করে এবং ভয় দেখায়।”
ওই মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়া ছাত্র হৃদয় ও নিহাদের মা জানান, “ছেলে মাদ্রাসায় পড়াকালীন তার সাথে আবু জার মুঠোফোনেও উশৃঙ্খল আচরণ করেছে। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, আবু জারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে মাসুম বিল্লাল নামের এক ব্যক্তি, যিনি আত্মীয়তার সুবাদে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র এনে মাদ্রাসায় ভর্তি করান এবং ছাত্রদের মারধরের বিষয়ে পরামর্শ দেন।”
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফ হোসেন বলেন, “রোগীকে প্রচুর মানসিক চাপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সে ভেঙে পড়েছে। সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।”
সবুজদেশ/এমবি/এসএএস