সবুজদেশ ডেস্কঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতারা হত্যাকাণ্ডের সময় ‘মাতাল’ ছিল বলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে করা তদন্তে দাবি করা হয়েছে।

ভারতকে গ্যাস, পানি ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার বিরোধিতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

হত্যাকাণ্ডের পর পরই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তারা নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এই প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের সময় হল প্রশাসনের ‘দায়িত্বহীনতা ও নির্লিপ্ত’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্য ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, কমিটি করার পর আমরা তৎক্ষণাৎ সেখানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বে যারা আছেন, সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হলেও তার আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিই।

তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে যারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন, তারা এর আগে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা মদপান করেছিলেন। সবাই মাতাল ছিলেন। তাদের মধ্যে মানবিকতা বলে কিছুই ছিল না। সেখান থেকে এসে তারা একটি স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে আবরারকে তার ১০১১ নম্বর রুম থেকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে।’

ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরও দাবি করেন, ‘আবরারকে নির্যাতনের সময় ওই কক্ষে তিন থেকে চার শিক্ষার্থী থাকলেও অন্যান্য রুমের কিছু লোক এই নির্যাতনে অংশ নেয়।’

নির্যাতনের একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে আবরার মোবাইলে তার বন্ধু ও সহপাঠীদের সাহায্য চেয়েছিলেন বলেও ছাত্রলীগের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, ‘কিন্তু কারও সাড়া পাননি আবরার ফাহাদ।’

ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির নেতা আরও বলেন, ‘তদন্তে আরও পেয়েছি, ওই রাতে বার্সেলোনার খেলা ছিল। পূজা থেকে এসে আবরারকে শারীরিক নির্যাতনের পর তারা বার্সেলোনার খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলেন।’

‘আবরার এই ফাঁকে তার এক বন্ধুকে ফোন করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার বন্ধু তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। যদি তার বন্ধুরা এগিয়ে আসত, তা হলে হয়তো এমন একটি অপমৃত্যুর মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারত’, বলেন ইয়াজ আল রিয়াদ।

এদিকে হলের কক্ষের মধ্যে অন্য ছাত্রদের হাতে নির্যাতিত হয়ে আবরারের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের ‘দায়িত্বহীনতা ও নির্লিপ্ততাকে’ও দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ নেতা ইয়াজ আল রিয়াদ।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘হলের মধ্যে রাতভর একটা ছাত্রকে নির্যাতন করা হলেও প্রশাসন কেন বিষয়টি জানতে পারল না? হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষকরা তা হলে কী দায়িত্ব পালন করলেন?’

এ ঘটনায় প্রশাসন ‘দায়িত্বহীনতার’ পরিচয় দিয়েছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই বলেও মন্তব্য করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

তিনি আরও বলেন, হল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এর দায়ভার এড়াতে পারে না।’

ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও মত প্রকাশে ছাত্রলীগ বাধা দিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির এ সহসভাপতি।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ কখনও কারও ব্যক্তিগত মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। এমনটি করার অধিকারও নেই। যার যার মত তিনি প্রকাশ করবেন। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কারোর মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।’

ছাত্রলীগের কেউ যদি কারও মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অপকর্ম করেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ইয়াজ আল রিয়াদ।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ একটি বৃহত্তর সংগঠন, ছাত্রলীগ কাউকে মারতে বলে না। যেকোনো ভালো কাজ ছাত্রলীগ সমর্থন করে। যদি কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো অপরাধ করে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here