ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জন্মদিনে ফিলিস্তিনি শিশুকে গুলি করে হত্যা করল ইসরাইলি সেনারা

Reporter Name

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছিলেন ফিলিস্তিনিরা। বাড়ির পাশেই রাস্তার মোড়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখতে গিয়েছিল পশ্চিমতীরের ১৩ বছর বয়সী কিশোর আলী আয়মান নাসর আবু আলিয়া। একপর্যায়ে সেই বিক্ষোভে হামলা চালিয়ে কিশোর আবু আলিয়াকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে।

এই মৃত্যুর ঘটনা নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো পীড়াদায়ক হয়েছে অন্য একটি কারণে। শুক্রবার ছিল কিশোর আলী আয়মান নাসর আবু আলিয়ার জন্মদিন। এদিনই তাকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এই নিয়ে গত এক বছরে পাঁচজন শিশুকে গুলি করে মারল ইসরাইল।

শনিবার জানাজার আগে ফিলিস্তিনি ওই কিশোরের লাশ নিয়ে উত্তর রামাল্লায় হাজার হাজার মানুষ ইসরাইলের ওই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা নির্বিচারে গুলি করে শিশু হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততার নিন্দা জানান।

নিহত কিশোর আলী আবু আলিয়ার পরিবার ধার্মিক। কোনো বছরই ছেলের জন্মদিন পালন করেননি তার বাবা-মা। কিন্তু এ বছর তার বাবা-মা ঠিক করেছিলেন ছেলের জন্মদিন পালন করবেন। মা কেকও বানিয়েছিলেন। গত শুক্রবার বাড়িতে যখন জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই পাড়ার মোড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এমন বিক্ষোভ চলে। এদিন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর আলী তা দেখতে যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরাইলি নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করে। এসময় আলীর তলপেটে গুলি লাগে।

বিক্ষোভকারীরাই আলীকে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলীর মৃত্যু হয়। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। আলীর মা খবর পেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আলীর বাবা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এরপর তাদের জীবনের আর কোনো মানে থাকল না।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ধরে শিশু-কিশোরদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে ডিফেন্স ফর চিলড্রেনস ইনট্যারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন। তাদের বক্তব্য, গত এক বছরে এই নিয়ে পাঁচজন শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলের নিরাপত্তারক্ষীরা। তার আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল আরো বেশি।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, গোটা বিশ্বেই নাবালক শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ আইন আছে। তাদেরকে এ ভাবে হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। কিন্তু ইসরাইল এ সব কিছুর তোয়াক্কা করে না। একাধিকবার তাদের গুলিতে নাবালক শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

আলীর মৃত্যুর পর স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ওই এলাকায় ইসরাইলি নিরাপত্তরক্ষীদের সঙ্গে এলাকার মানুষের সংঘাত হয়। তবে তাদের দাবি, শুক্রবারের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ।

১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে আসছে বর্বর ইসরাইলি সেনারা।

সূত্র : আলজাজিরা ও ডয়চে ভেলে

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০
২১৭ Time View

জন্মদিনে ফিলিস্তিনি শিশুকে গুলি করে হত্যা করল ইসরাইলি সেনারা

আপডেট সময় : ০৭:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছিলেন ফিলিস্তিনিরা। বাড়ির পাশেই রাস্তার মোড়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখতে গিয়েছিল পশ্চিমতীরের ১৩ বছর বয়সী কিশোর আলী আয়মান নাসর আবু আলিয়া। একপর্যায়ে সেই বিক্ষোভে হামলা চালিয়ে কিশোর আবু আলিয়াকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে।

এই মৃত্যুর ঘটনা নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো পীড়াদায়ক হয়েছে অন্য একটি কারণে। শুক্রবার ছিল কিশোর আলী আয়মান নাসর আবু আলিয়ার জন্মদিন। এদিনই তাকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এই নিয়ে গত এক বছরে পাঁচজন শিশুকে গুলি করে মারল ইসরাইল।

শনিবার জানাজার আগে ফিলিস্তিনি ওই কিশোরের লাশ নিয়ে উত্তর রামাল্লায় হাজার হাজার মানুষ ইসরাইলের ওই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা নির্বিচারে গুলি করে শিশু হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততার নিন্দা জানান।

নিহত কিশোর আলী আবু আলিয়ার পরিবার ধার্মিক। কোনো বছরই ছেলের জন্মদিন পালন করেননি তার বাবা-মা। কিন্তু এ বছর তার বাবা-মা ঠিক করেছিলেন ছেলের জন্মদিন পালন করবেন। মা কেকও বানিয়েছিলেন। গত শুক্রবার বাড়িতে যখন জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই পাড়ার মোড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এমন বিক্ষোভ চলে। এদিন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর আলী তা দেখতে যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরাইলি নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করে। এসময় আলীর তলপেটে গুলি লাগে।

বিক্ষোভকারীরাই আলীকে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলীর মৃত্যু হয়। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। আলীর মা খবর পেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আলীর বাবা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এরপর তাদের জীবনের আর কোনো মানে থাকল না।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ধরে শিশু-কিশোরদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে ডিফেন্স ফর চিলড্রেনস ইনট্যারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন। তাদের বক্তব্য, গত এক বছরে এই নিয়ে পাঁচজন শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলের নিরাপত্তারক্ষীরা। তার আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল আরো বেশি।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, গোটা বিশ্বেই নাবালক শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ আইন আছে। তাদেরকে এ ভাবে হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। কিন্তু ইসরাইল এ সব কিছুর তোয়াক্কা করে না। একাধিকবার তাদের গুলিতে নাবালক শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

আলীর মৃত্যুর পর স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ওই এলাকায় ইসরাইলি নিরাপত্তরক্ষীদের সঙ্গে এলাকার মানুষের সংঘাত হয়। তবে তাদের দাবি, শুক্রবারের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ।

১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে আসছে বর্বর ইসরাইলি সেনারা।

সূত্র : আলজাজিরা ও ডয়চে ভেলে