ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জাদুর ফাঁদ’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী যশোরের চাষীরা

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

সাদা কৌটার মধ্যে পানি ও ওষুধ মেশিয়ে সবজির ক্ষেতে ঝুলিয়ে দেওয়া। এ পর ওষুধের গন্ধে পানিতে আটকে পড়ে ক্ষতিকর পোকা। আর এভাবেই কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকর পোকা রোধ করে উৎপাদন হচ্ছে সবজি । নাম জাদুর ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। যশোরে কীটনাশক ব্যবহার না করে এই পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে সবজি। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি স্বল্প খরচ হওয়ায় এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী এই অঞ্চলের চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, সবজির রাজধানী খ্যাত যশোর অঞ্চলে এখন বারো মাস প্রায় সবরকম সবজির চাষ হয়। তবে এখন মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, টম্যাটো, শিম, মুলা, পালংশাক, লালশাকসহ হরেকরকম সবজি। যশোর জেলার আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৫ শ, হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছে ।

সদর উপজেলার চুড়ামণকাটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ও শিমখেতের মাঝে মাঝে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্লাস্টিকের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব পাত্রের তলায় অল্প পরিমাণ পানিতে মরে আছে কীটপতঙ্গ।

চুড়ামণকাটি এলাকার চাষী আফজাল হোসেন জানান, কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষতিকর পোকা দমন ও উপকারী পোকা সংরক্ষণের জন্য তারা জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করেন। ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনের জন্য পানির জাদুর ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পদ্বতি ব্যবহার করতে শুরু করেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারও ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন তারা। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত এসব সবজি বাজারে ভালো দরে বিক্রি করছেন তিনি।

একই এলাকার চাষী আসাদুল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ও ফুলকপি আবাদ করছেন। এসব জমিতে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করায় পোকার বালাই নেই। ক্ষেতে শুধুমাত্র সার, পানি দিতে হচ্ছে। প্রতিবছর কীটনাশকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে এই কীটনাশকের মূল্য বেঁচে যাচ্ছে।

রহিম নামে কৃষক আরো জানান, তিনি এবার প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত পটল চাষ করছেন। সেক্স ফেরোমন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন খরচ অনেক কম। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি এবার এই পদ্ধিতে পটল চাষ করছেন। কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করিনি। শুধু সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। ওই ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন ক্ষতিকর পোকা মারা যাচ্ছে। ফলে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার খালিদ সাইফুল্লাহ বার্তা ২৪.কমকে জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে চাষীরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বিষমুক্ত সবজিখেত গুলো প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং এই পদ্ধতি ব্যবহারের কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বার্তা ২৪.কমকে বলেন, প্রথম দিকে কোনো চাষি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী ছিলেন না। বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিলো। কিছু চাষি পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে বিষমুক্ত টমেটো, লাউ ও শিমের চাষ করেছেন। চাষিরা কীটনাশক ছাড়াই ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে ভালো সবজি উৎপাদন করতে পারলে ভবিষ্যতে বিষমুক্ত সবজি চাষের বিপ্লব ঘটে যাবে।

তিনি জানান, সেক্স ফেরোমন পুরষ আকর্ষণের সুগন্ধি। এটির গন্ধ বাতাসে ছড়ালে পুরুষ পোকা এসে পাত্রে পড়ে এবং মারা যায়। বংশবৃদ্ধি কমতে থাকে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৫:০০:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০
৯২৬ Time View

‘জাদুর ফাঁদ’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী যশোরের চাষীরা

আপডেট সময় : ০৫:০০:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

সাদা কৌটার মধ্যে পানি ও ওষুধ মেশিয়ে সবজির ক্ষেতে ঝুলিয়ে দেওয়া। এ পর ওষুধের গন্ধে পানিতে আটকে পড়ে ক্ষতিকর পোকা। আর এভাবেই কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকর পোকা রোধ করে উৎপাদন হচ্ছে সবজি । নাম জাদুর ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। যশোরে কীটনাশক ব্যবহার না করে এই পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে সবজি। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি স্বল্প খরচ হওয়ায় এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী এই অঞ্চলের চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, সবজির রাজধানী খ্যাত যশোর অঞ্চলে এখন বারো মাস প্রায় সবরকম সবজির চাষ হয়। তবে এখন মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, টম্যাটো, শিম, মুলা, পালংশাক, লালশাকসহ হরেকরকম সবজি। যশোর জেলার আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৫ শ, হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছে ।

সদর উপজেলার চুড়ামণকাটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ও শিমখেতের মাঝে মাঝে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্লাস্টিকের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব পাত্রের তলায় অল্প পরিমাণ পানিতে মরে আছে কীটপতঙ্গ।

চুড়ামণকাটি এলাকার চাষী আফজাল হোসেন জানান, কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষতিকর পোকা দমন ও উপকারী পোকা সংরক্ষণের জন্য তারা জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করেন। ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনের জন্য পানির জাদুর ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পদ্বতি ব্যবহার করতে শুরু করেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারও ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন তারা। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত এসব সবজি বাজারে ভালো দরে বিক্রি করছেন তিনি।

একই এলাকার চাষী আসাদুল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ও ফুলকপি আবাদ করছেন। এসব জমিতে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করায় পোকার বালাই নেই। ক্ষেতে শুধুমাত্র সার, পানি দিতে হচ্ছে। প্রতিবছর কীটনাশকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে এই কীটনাশকের মূল্য বেঁচে যাচ্ছে।

রহিম নামে কৃষক আরো জানান, তিনি এবার প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত পটল চাষ করছেন। সেক্স ফেরোমন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন খরচ অনেক কম। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি এবার এই পদ্ধিতে পটল চাষ করছেন। কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করিনি। শুধু সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। ওই ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন ক্ষতিকর পোকা মারা যাচ্ছে। ফলে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার খালিদ সাইফুল্লাহ বার্তা ২৪.কমকে জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে চাষীরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বিষমুক্ত সবজিখেত গুলো প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং এই পদ্ধতি ব্যবহারের কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বার্তা ২৪.কমকে বলেন, প্রথম দিকে কোনো চাষি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী ছিলেন না। বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিলো। কিছু চাষি পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে বিষমুক্ত টমেটো, লাউ ও শিমের চাষ করেছেন। চাষিরা কীটনাশক ছাড়াই ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে ভালো সবজি উৎপাদন করতে পারলে ভবিষ্যতে বিষমুক্ত সবজি চাষের বিপ্লব ঘটে যাবে।

তিনি জানান, সেক্স ফেরোমন পুরষ আকর্ষণের সুগন্ধি। এটির গন্ধ বাতাসে ছড়ালে পুরুষ পোকা এসে পাত্রে পড়ে এবং মারা যায়। বংশবৃদ্ধি কমতে থাকে।