আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরিকরণ— এই দুটি সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠিত হলেই ‘জুলাই সনদ’ তৈরি সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘কে পিআর বোঝে, কে পিআর বোঝে না, তার জন্য সংস্কার আটকে থাকবে না।’’
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজারে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার’ পথসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হওয়া এনসিপির মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে অনুষ্ঠিত পথসভায় এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা, সামান্থা শারমিন, এসএম সুজা উদ্দিনসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “পর্যটন শিল্পের নামে কক্সবাজারে লুটপাট হয়েছে, উচ্ছেদ হয়েছে কিন্তু মানুষের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন হয়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি চায়, পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে।”
তিনি বলেন, “কেউ পিআর বোঝে, কেউ বোঝে না— এমন কেউ নতুন বাংলাদেশের নতুন কক্সবাজারে আর থাকবে না। জনগণ সংস্কার চায়, জনগণই বোঝে কোন সংস্কার দরকার। তাই পিআর পদ্ধতিতেই উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা হতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন ও দুদকসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরি করতে হবে।”
সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “জনগণের স্বার্থে, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আমরা চাই, এই দুটি মূল সংস্কারে সবাই ঐকমত্য গঠন করুক। তাহলেই তৈরি হবে কাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই সনদ’।’’
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের মানবিক দরদ আছে কিন্তু তা এ দেশের নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা খরচে হতে পারে না। তারা এখানে আশ্রয়ে রয়েছে, তার মানে এই নয় যে, বছরের পর বছর আমাদেরই দায়িত্বে তাদের রাখতে হবে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ বিশ্ববিবেকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিন।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, “এই কক্সবাজার ফ্যাসিস্ট আমলে মাদক ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জের মতো এখানেও ‘গডফাদার’ ছিল, যার ছায়া ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন শাসনামলে। আমরা সেই গডফাদার বিলুপ্ত করেছি। এখন আমরা নিশ্চিত করতে চাই, নতুন কোনো গডফাদার যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। জনগণকে আহ্বান জানাই, তারা যেন মাফিয়া তন্ত্র, গডফাদার তন্ত্র, স্বৈরচার তন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই তন্ত্র উচ্ছেদ করেই জনগণের বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
বক্তব্য শেষে জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে স্লোগান দেন নাহিদ ইসলাম। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ফেসবুক পেজ থেকে শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাত ৮টায় শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারতের ঘোষণা দেয়া হয়।
সবুজদেশ/এসএএস