জোর করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ
সবুজদেশ ডেক্সঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ সরকারের উদ্দেশে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, জোর করে কিংবা নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারির মতো কলঙ্কজনক নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আর হবে না। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হলে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণেই হতে হবে। অন্যথায় দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, একমাত্র ক্ষমতাসীন দল বা জোট ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও মহল আজ সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এমনকি তরুণ, যুবক, ছাত্রছাত্রী, কিশোর-কিশোরীসহ সর্বস্তরের মানুষই আজ জেগে উঠছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এর ব্যাপকভিত্তিক প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে। ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ তারই একটি অংশমাত্র। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশের সমাজব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের কঠোর দমননীতিসহ সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই কথা বলেন। এ সময় তিনি অনতিবিলম্বে তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ তার সুচিকিৎসা দাবি করেন। বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, বছর দেড়েক আগে থেকেই দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা সারা দেশে সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে কোথাও কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। উপরন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে সরকার। সারা দেশে ২৪ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মীর নামে ৮০ হাজারেরও বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে। গণহারে ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অতিসম্প্রতি তিন হাজারেরও বেশির মতো ভুতুড়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনা ঘটার আগেই সবার নামে নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। দেড়-দুই বছর আগে মারা গেছেন এমন ব্যক্তিদের নামেও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়ার মামলা দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় পবিত্র হজ পালন করার সময়ও অনেক নেতার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। বগুড়ায় ৮৬ বছরের একজন প্রবীণ নেতা আজ আড়াই বছর ধরে হাসপাতালে কাতড়াচ্ছেন। বাথরুমে নিতে হয় দুই-তিন জনে ধরে, তার নামেও পুলিশের ওপর হামলাসহ ইটপাটকেল ছোড়ার মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম শারীরিক অসুস্থতায় আজ আড়াই-তিন বছর ধরে ঘর-বৈঠক অবস্থায় আছেন। তার নামেও রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে রাত সাড়ে ৮টায় রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ধরনের কোনো কর্মসূচির কথা অত্র এলাকা তথা দেশের কোনো মানুষ জানে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কীভাবে মিথ্যা মামলায় সাজানো রায় দিয়ে পুরান ঢাকার একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে তা সমগ্র দেশবাসীই জানেন। শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ থাকার পরও তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। দেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই মূলত তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বরং তার বিরুদ্ধে করা অপরাপর মিথ্যা মামলাগুলো শেষ করার জন্য তড়িঘড়ি শুরু করেছে সরকার। বরং সংবিধান লঙ্ঘন করে এখন কারাগারের ভিতরই সরকার আদালত বসিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অধিকতর তদন্তের নামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িয়ে তাকেও সাজা দেওয়ার তোড়জোড় করছে এই সরকার। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, অতিসম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটিই পরিষ্কার ভাষায় বলে দিচ্ছে যে, দেশের বিচারব্যবস্থা আজ কী পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে যে ‘কালাকানুন’ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে, এর মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা ফের কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজসহ কারও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না। প্রতিনিয়ত গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসসহ সব ধরনের অপকর্মই অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরসহ সব অর্থনৈতিক খাত ধসে পড়ছে। সারা দেশে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট আজ মহামারী আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ভোট চুরির ফন্দিস্বরূপ ইভিএম মেশিন কেনার নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ হরিলুটের চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। অথচ এই সংবিধানকে নিজেদের স্বার্থে বারবার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই একটি সংসদ বহাল রেখে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নজির নেই। অথচ এই সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন করতে চাইছে। কিন্তু এ দেশের দেশপ্রেমিক জনগণ এটি আর কিছুতেই হতে দেবে না। সর্বস্তরের জনগণ মিলে তা প্রতিহত করবে ইনশা আল্লাহ। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আর তা কখনো সম্ভব নয়। সাবেক এই মন্ত্রী দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ারও আহ্বান জানান।