সবুজদেম ডেক্সঃ  মানুষের মাথার চুল বড় হলে কেটে ফেলা হয়। এই চুল আগে আবর্জনার আকারে ফেলে দেয়া হতো। এখন সেই চুল রফতানিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। দিন দিন বিদেশের বাজারে চুলের চাহিদা বাড়ছে। এসব চুল দিয়ে পরচুলা, পলিশ ও বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করা হয়। এর মধ্যে চুল দিয়ে তৈরি ক্রিম নারীদের রূপচর্চার কাজেও ব্যবহৃত হয়। জার্মানি, ইউরোপ, চীন ও ভারতে এসব কারখানা গড়ে উঠেছে।

জানা গেছে, সম্ভাবনাময় এ শিল্পের প্রসারতা শুধু শহরেই নয় গ্রামাঞ্চলেও প্রসার ঘটেছে। যেখানে বহু গরিব নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ গ্রাম অঞ্চলেও চুলের ব্যবসা প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন নারীরা মাথা আচড়ানোর পর ঝরে পড়া চুল ফেলে না দিয়ে যত্ন করে গুছিয়ে রাখছেন বিক্রির জন্য। আর এ চুল সংগ্রহ করছে ফেরিওয়ালারা। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চুল ক্রয় করছেন। শুধু বাড়ি থেকেই নয় রাজধানীসহ দেশের সব স্থানে বিউটি পার্লার ও সেলুন থেকেও বিপুল পরিমাণ চুল সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে চুলের ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

পুরান ঢাকার মো. ইসলাম মিয়া বলেন, চুলের ব্যবসা প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম্য এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা এই চুল বেশি কিনছেন। চুল কেনাবেচার জন্য নওগাঁতে এখন হাট বসে। যেখানে চীন থেকে ক্রেতারাও আসেন চুল কিনতে। শুধু নওগাঁতেই নয় সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চুল কেনাবেচার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ভারত, মিয়ানমার, চীন, জাপান ও কোরিয়ায় রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও চীনের ক্রেতারা এ চুল দিয়ে বিভিন্ন ফ্যাশনের পরচুলা তৈরি করছে। গ্রাহক বা পার্লার থেকে হকাররা চুল সংগ্রহ করে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে কেজিতে বিক্রি করেন। প্রতি কেজি দুই থেকে ৪ হাজার টাকায় কেনা হয়। পরে আকার ও মান অনুসারে আলাদাভাবে প্যাকেজ করা হয়। এরপর বিক্রি করা হয় তিনটি গ্রেড অনুসারে। ক্রেতারা সাধারণত ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা চুল ক্রয় করেন। তবে চুল যত লম্বা হয়, দামও তত বেশি। প্রক্রিয়াজাত করা চুল গ্রেড অনুসারে প্রতি কেজি ৭ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাঁচ অর্থবছরে বাংলাদেশ চুল রফতানি করে আয় করেছে ৭ কোটি ৯ লাখ ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি অর্থবছর চুলের রফতানি আয় প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতের রফতানি আয় আরও বাড়বে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চুল রফতানি করে আয় হয় ৮৫ লাখ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১২ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চুল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম দুই (জুলাই-আগস্ট) মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ২২ হাজার ডলার। এ সময় এ খাত থেকে আয় হয় ৪ লাখ ২৭ ডলার। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ইপিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, দেশ থেকে চুল রফতানি বাড়ছে। নারীদের মাথার চুল রফতানি খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নারীদের চুল এখন ভারত, মিয়ানমার, চীন, জাপান ও কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে এর মধ্যে রফতানির বাজার তৈরি করা হচ্ছে। তাই এ খাতের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে দেশীয় ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে ভবিষ্যতে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here