সবুজদেশ ডেক্সঃ মো: সাজ্জাদুর রহমান-এর শিক্ষাজীবনের ফলাফল ছিল সাড়া জাগানো । বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । নিজ পেশায় দক্ষতরা পরিচয় দিয়ে তিনি পুলিশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন । সারা দেশে সর্বোচ্চ সম্মান অর্জনকারী পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনি অন্যতম । সততার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানব সেবায়ও তিনি পিছিয়ে নেই । তিনি কখনও অসহায় এতিমদের পাশে, কখনও গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্যে, কখনও ছিন্নমূল মানুষের পাশে থেকে, আবার কখনও সমাজ উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । সাজ্জাদুর রহমান ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকলাশ গ্রামের মরহুম ছবেদ আলী মন্ডলের পুত্র । বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন । পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে তাঁর জন্ম ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে । বাবা মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে তিনি সকলের বড় । বোন নাদিরা খাতুন ও নাছিরা খাতুন – এর বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই । ভাই আতাউর রহমান, রবিউল ইসলাম ও আমিরুল ইসলাম সকলেই পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছেন । পারিবারিক সুত্রে আরও জানা গেছে ২০০০ সনে সাজ্জাদুর রহমান মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জনাব মো: কোহিনুর হোসেনের কন্যা আকিদা রহমান নীলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । বর্তমানে তাদের ৩ সন্তানের মধ্যে সাদিক-বিন-সাজ্জাদ ঢাকা সিটি কলেজে এইচএসসি’র মেধাবী ছাত্র । ২য় পুত্র হৃদিক-বিন-সাজ্জাদ দিনাজপুর বিকেএসপি’তে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে ও ক্রিকেট খেলে, কন্যা নাফিসা-বিনতে-সাজ্জাদ সাতক্ষীরা নবজীবন ইনষ্টিটিউটে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে । সাজ্জাদুর রহমান শিক্ষা জীবন ঐতিহ্যবাহী কোলাবাজার স্কুলে প্রাথমিক স্তর শেষ করে ভর্তি হণ কোলাবাজার ইউনাইটেড হাই স্কুলে । এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৯০ সনে এসএসসি’তে যশোর বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান লাভ করেন । ১৯৯২ সনে যশোরের এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি’তে একই বিভাগ হতে মেধা তালিকায় ১৫তম স্থান পান । এরপর তিনি ১৯৯৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজ কল্যান ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে এমএসএস – এ প্রথম শেণীতে ৫ম স্থান অধিকার করেন । ২০০৩ সনে ২১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরেই বাংলাদেশ পুলিশে এএসপি পদে যোগদান করেন । এরপর সময়ের সাথে সাথে তিনি পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলায় পুলিশ সুপার-এর দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি ২০১০ সালে লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে টঘচঙখ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘ পদক লাভ করেন । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, এসপি সাজ্জাদুর রহমান নিজ এলাকায় বাবার নামে খুলেছেন ছবেদ আলী ফাউন্ডেশন। উক্ত ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে এলাকার দু:স্থদের মাঝে প্রতি বছর শীতবস্ত্র সরঞ্জাম বিতরণ, গরীব মেধাবী শিক্ষার্র্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন । নিজ এলাকায় এসে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন । এছাড়াও এলাকায় উক্ত ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী র‌্যালী, বাল্য বিবাহ রোধে বিভিন্ন প্রকার কর্মসুচীর মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করে থাকেন । তিনি এলাকায় এসে খোঁজ নিয়ে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী ছাড়াও ছিন্নমুল মানুষদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন । জনাব মো: সাজ্জাদুর রহমানের বর্তমান কর্মস্থল সাতক্ষীরা’র একজন সংবাদকর্মী চাকুরীর সুবাদে তিনি বেশ কিছুদিন সাতক্ষীরাতে আছেন । এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মত তিনি সাতক্ষীরা’র সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে নানা কর্মসূচী পালনসহ বিভিন্ন ধরণের ভালো কাজ করে আসছেন । তার ধারাবাহিকতায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাতক্ষীরা শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছেন । পেশাগত দায়িত্ব পালনে সঠিক জবাবদিহিতার জন্যে এবং জনসাধারণের অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স্র স্থাপন করেছেন । সম্প্রতি তিনি একশত টাকায় পুলিশে চাকুরী দিয়ে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন । নিজ অর্থায়নে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের দু-পাশে প্রায় ১০(দশ) হাজারসহ সারা জেলায় ৩০ হাজার বৃক্ষরোপন করে বিরল নজির স্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে কল করলে মিলবে প্রয়োজন মোতাবেক রক্ত এবং সকল প্রকার সহযোগিতা । এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে খাবার নিয়ে তিনি চলে যান এতিমখানায় অথবা দু:স্থদের মাঝে । এছাড়াও চরম অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়া ছাড়াও নিজের গাঁটের টাকা খরচ করেন তিনি । সর্বোপরি মানবতার সেবায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন । কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব কওছার আলী জানান, সাজ্জাদ ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধার সাক্ষর রেখেছে । এছাড়াও সে ছিল সর্বদা জ্ঞান পিপাসু, নম্র, ভদ্র প্রকৃতির ছেলে । তখন তাকে দেখে মনে হত সে বড় হয়ে কিছু একটা হবে । কথায় আছে, সকালের সূর্য্য দেখে দিনটা কেমন যাবে তা অনুমান করা যায় । সাজ্জাদের ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে । বর্তমানে পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা হয়ে দেশ সেবা করার সাথে সাথে সমাজ উন্নয়নে ও মানবতার সেবায় যেভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সেজন্য আমি তার শিক্ষক হিসেবে নয়, ঝিনাইদহ জেলার একজন মানুষ হিসেবে গর্ববোধ করি । কালীগঞ্জ কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আইয়ুব হোসেন জানান, সাজ্জাদুর রহমান তার গ্রামের ছেলে, ছোটবেলা থেকেই তার চলাফেরা ছিল অন্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা । এ এলাকার অনেক মেধাবী ছেলে লেখাপড়া শেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে । তবে সাজ্জাদ তাদের চেয়ে আলাদা, বেশ ভিন্ন । কেননা ছুটিতে যখন সে বাড়ী আসে তখন এলাকার সকল জায়গায় সে ঘুরে বেড়ায় । শিক্ষাজীবনে সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল তাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশি করে খোঁজ নিয়ে থাকে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে লেখাপড়ায় উৎসাহ ও সহযোগিতা করে থাকে । অসহায় গরীব দু:স্থদের পাশে দাঁড়ায় সাজ্জাদ । মুঠোফোনে সাজ্জাদুর রহমানর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও লেখাপড়ায় মধ্যবিত্ত ছিলাম না । পড়াশুনা শেষ করার পর এদেশ আমাকে কর্মসংস্থান দিয়েছে । আমি ভাবি সমাজের অনেক মানুষের চেয়ে শারিরীক ও মানসিক ভাবে ভালো আছি । কিন্তু সবাই মিলে ভালো থাকতে পারলে সেটাকেই ভালো বলা যাবে । পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে আমি কিছুটা কাজ তরি । তারপরও সমাজের একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু করা প্রয়োজন তার সবটুকু আমি করতে পারি না । বর্তমানে আমার ভাইয়েরাও আমাকে কিছুটা আর্থিকভাবে সাহায্য করে থাকে । সে কারনেই আমার জন্য এ ধরণের কাজ করা সহজ হচ্ছে, তিনি আরও বলেন, সমাজের একজন মানুষ হিসেবে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অনেক কিছু করতে হয় । সবটা করতে না পারলেও অসহায়দের জন্য কিছুটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here