সবুজদেশ ডেক্সঃ উত্তম কৃষিচর্চার বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে গ্লোবাল গ্যাপ (গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস)। ইউএসএআইডি ও গ্লোবাল গ্যাপের সহযোগিতায় দেশের চার শতাধিক চাষীকে উত্তম কৃষিচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়েছে স্বপ্ন। গ্লোবাল গ্যাপের মানদণ্ড মেনে সবজি উৎপাদন করছেন এসব চাষী। তাদের একজন ঝিনাইদহের পরিতোষ মিত্র কীটপতঙ্গ থেকে ফসল বাঁচাতে চাই কীটনাশক। আর ভালো ফলন পেতে প্রয়োজন সার। তবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কল্যাণে সাময়িকভাবে ভালো ফলন মিললেও আখেরে নষ্ট হয় জমির উর্বরতা, জলাশয়ের বিশুদ্ধতা। এক্ষেত্রে মাটি ও মানুষের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষার কাজটি সুনিপুণভাবে করছেন পরিতোষ মিত্র। ঝিনাইদহের এ কৃষক কীটনাশক ও সারের সীমিত প্রয়োগের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখছেন জমির মান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আহার্যের উৎস। একইভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত টমেটো উৎপাদন করে মেটাচ্ছেন ভোক্তার রসনা ও পুষ্টির চাহিদা। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে টমেটো চাষ করে সাড়া ফেলেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের পরিতোষ মিত্র। অনেকটা জৈব পদ্ধতিতে ফসল ফলাচ্ছেন তিনি। আগে টমেটো ক্ষেতে সপ্তাহে একদিন কীটনাশক ছিটাতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তিনি ১৫ দিন পরপর স্প্রে করছেন। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ক্ষেতে সার ও কীটনাশক দেন তিনি। আর টমেটো বাজারজাত করার ১৫ দিন আগে থেকে সার ও কীটনাশক স্প্রে বন্ধ করে দেন। ক্ষতিকারক রাসায়নিকের প্রয়োগ কমানোয় একদিকে কমেছে টমেটো উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত থাকছে কষ্টের ফসল। এর ফলে পরিতোষের ব্যক্তিগত সুনাম ও আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি দিন দিন চাহিদা বাড়ছে তার উৎপাদিত টমেটোর, যা সুপারশপ চেইন স্বপ্নর সুবাদে পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশের স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতা-ভোক্তার রসুইঘরে, খাবার টেবিলে। কৃষক পরিতোষ জানান, পাঁচ বছর ধরে তিনি দুই বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি চাষ করছেন বারোমাসি (বারী-৪) জাতের টমেটো, যার ফলন হয় সারা বছর। গত বছর ঢাকার স্বপ্ন সুপারশপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মাধ্যমে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকে তিনি টমেটো ক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ কমিয়ে দেন। তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে টমেটো ওঠানোর ১৫ দিন আগে স্প্রে করা হলে রাসায়নিকের বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে সবজি হয়ে ওঠে বিষমুক্ত। স্বপ্নর ক্রেতারা ছাড়াও পরিতোষের নিরাপদ টমেটোর স্বাদ পাচ্ছেন অন্যরাও। ফল পাকার আগেই তার জমি থেকে লোকজন টমেটো কিনে নিয়ে যায়। নিরাপদ উপায়ে টমেটো উৎপাদন করায় আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তিনি। এ বছর দুই বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করছেন। এর মধ্যে এক বিঘায় আবাদকৃত টমেটো বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকায়, যা উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। নিরাপদ পদ্ধতিতে টমেটো ফলিয়ে পরিতোষ অন্যদের জন্যও শিক্ষণীয় নজির সৃষ্টি করেছেন। তার দেখাদেখি একই পদ্ধতি অনুকরণ করে ওই এলাকায় অনেক কৃষক এখন স্বাস্থ্যসম্মত সবজি আবাদ করছেন। ফসলের মান ও নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হয়েছেন তারাও। পরিতোষের কুল্লাপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যে সবজি খাই তার সবগুলো বিষে ভরা। সবসময় বিষযুক্ত সবজি খেয়ে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পরিতোষের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আমরাও নিজেদের জমিতে ১৫ দিন পরপর সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছি। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বারি-৪ জাতের টমেটো সারা বছর চাষ করা যায়। উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের পরিতোষ মিত্রসহ অনেক কৃষক এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে টমেটো আবাদ করছেন। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন করে তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার মাঠ পরিদর্শন করেছেন। কৃষি বিভাগ উপজেলার অন্য গ্রামের কৃষকদেরও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সবজি উৎপাদন করতে প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here