ঝিনাইদহের ভয়ংকর আদম ব্যবসায়ী কে এই টিটো ?
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের ভয়ংকর এক আদম ব্যবসায়ীর নাম শাহিনুর রহমান টিটো। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বহু যুবক সর্বশান্ত হয়েছে। অনেকের সলিল সমাধী ঘটেছে সাগরে। তারপরও প্রতারণা কমেনি টিটোর। তথ্য নিয়ে জানা গেছে এক যুগ ধরে টিটো বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। গ্রাম আদালত ও পুলিশের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, গাড়ামারা, তেতুলবাড়িয়া, মিয়াকুন্ডু গ্রামের বহু পরিবার টাকা ও তাদের প্রিয়জন হারিয়ে নির্বাক। অনেকে বিশ্বাস করতে চাই না তার স্বামী আর ফিরে আসবে না। মা বাবা পথ চেয়ে বসে আছে তার সন্তান ফিরে আসবে। অথচ পরের টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন প্রতারক টিটো।
শাহিনুর রহমান টিটো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের ইউসুফ বিশ্বাসের ছেলে।
টিটোর খপ্পরে পড়ে পানি পথে মালায়েশিয়া যাওয়া ধোপাবিলা গ্রামের আব্দুর রহিম জীবন নিয়ে ফিরে এসে এক দুর্বিসহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করেছেন। জেলার হরিনাকুন্ড উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে বাবুল আখতার জানান, ২০১১ সালে বিদেশ যাওয়ার জন্য চার কিস্তিতে টিটোকে এক লাখ ২০ হাজার ও ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্যংকের মাধ্যমে আরো এক লাখ টাকা টিটোকে প্রদান করি। কিন্তু সে বিদেশ নিতে পারেনি, টাকাও ফেরৎ দেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর ইউনিয়নের মেম্বর আব্দুল হাকিম ও কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হায়দার আলী জানান, তারা এ নিয়ে অনেকবার শালিস করেছেন। কিন্তু টিটো টাকা ফেরৎ দেয় নি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গাড়ামারা গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, মানব পাচারকারী টিটো আমার ছেঅট ভাই সাজেদুরকে মালায়েশিয়ায় ভাল চাকরী দেওয়ার কথা বলে প্রথমে ৫০ হাজার ও ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রয়ারী দ্বিতীয় কিস্তিতে এক লাখ ৮০ হাজারসহ মোট ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্ত সে আমার ভাইকে বিদেশে নিতে পারেনি। টাকার জন্য অনেকবার শালিস হয়েছে। কিন্তু টাকা দেয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুল আজিজ জানান, আমার ছেলেকে মালায়েশিয়া পাঠানোর জন্য নগদ ৫০ হাজার ও ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউসিবি ব্যংকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা প্রদান করি।
পরে ২০১২ ঝিনাইদহ শহরের ব্যপারীপাড়ার আবুল হোসেন সড়কের আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৮ বছর আগে টিটো ইরাকে পাঠানোর কথা বলে আমার কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার ও ইউসিবি ব্যাংকের ম্যধামে এক লাখ টাকা গ্রহন করে। আজ পর্যন্ত আমি টাকা পায়নি। জাড়গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান টিটো বিদেশে পাঠানোর নাম করে তার নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু টাকা পায়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের হাজী হারুন অর রাশিদ থাকেন মালায়েশিয়ার কুয়ালালমপুরে। ২০১৪ সালে প্রতারক টিটো তার কাছ থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে ২২ লাখ টাকা ধার নেন। বহুবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক লাখ টাকা হারুনকে প্রদান করে টিটো। এখনো ২১ লাখ টাকার জন্য ঘুরছেন প্রবাসি হারুন।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে হারুন অর রাশিদ বলেন, কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের মধ্যস্থতায় টেটো আমাকে ২১ লাখের স্থানে ৮ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। আমি তাই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ৮ লাখ টাকাও টিটো আমাকে দেয়নি।
এদিকে গত ২৩ জুলাই ঝিনাইদহ থানায় মানব পাচারকারি শাহিনুর রহমান টিটোর বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিযোগ দায়ের করেন।
তার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন ঝিনাইদহ সদর থানার অভিযোগের তদন্তকারি কর্মকর্তা এস আই মোঃ আব্দুল হক। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন টিটোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাকে ডেকেছিলাম, কিন্তু সে আসেনি। তিনি বলেন টিটো আমার গ্রামের এক প্রতিবেশি ভাইয়ের কাছ থেকেও ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এস আই মোঃ আব্দুল হক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর কিছু সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তি টেটোর পক্ষে তদ্বীর করে। সে কারণে বিষয়টি বেশিদুর এগোতে পারেনি।
এ ব্যপারে সোমবার বিকালে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান টিটোর মোবাইলে ফোন করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।