পুরুষের তুলনায় নারীরা এগিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে তালাক দেয়ার প্রবণতা। গত ছয় মাসে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ১৭১টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে নারীরা। বাল্য বিবাহ আর পরকীয়া এ অবক্ষয়ের মূল কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে রয়েছে পাঁচজন আর পৌরসভায় রয়েছে দুইজন কাজী। এখানে গত জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ছয় মাসে বিবাহ রেজিস্ট্রি হয়েছে ৩৭৯টি। তালাকের ঘটনা ঘটেছে ১৭১টি। এর মধ্যে পুরুষদের পক্ষে তালাক দেয়া হয়েছে ৩২টি ও নারীদের পক্ষে ৭১টি। আর উভয় সম্মতিতে তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৬৮টি। এ ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে নারীরা।
সব থেকে তালাকের ঘটনা বেশি ঘটেছে কোটচাঁদপুর পৌরসভায়। এখানে গত ছয় মাসে তালাক হয়েছে ৪৫টি। দ্বিতীয় পর্যায় রয়েছে কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়ন। এখানে ছয় মাসে তালাক হয়েছে ৩৭টি।
কাজীদের সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জুন পর্যন্ত গত ছয় মাসে কোটচাঁদপুরের সাফদারপুর ইউনিয়নের কাজী আবুজার গিফারি বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ২৫টি, তালাক ২৮টি। এরমধ্যে ছেলে পক্ষে তালাক দিয়েছেন ২টি, মেয়ে ১৬টি, আর খোলা তালাক ১০টি। দোড়া ইউনিয়নের কাজী, সাইদুর রহমান বিয়ে দিয়েছেন ৭০টি, তালাক ৩২টি, ছেলেরা দিয়েছেন ১টি, মেয়ে পক্ষ ১৩টি, খোলা তালাক হয়েছে ১৮টি। কুশনা ইউনিয়নের কাজী রেজাউল হক বিয়ে দিয়েছেন ৬২টি, তালাক ৩৭টি, এরমধ্যে ছেলেরা ৯টি, মেয়েরা ১৪টি, খোলা তালাক ১৪টি।
বলুহর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল গফুর বিয়ে দিয়েছেন ৩০টি, তালাক ১৫টি, ছেলেরা ২টি, মেয়ে ৪টি, খোলা তালাক ৯টি। এলাঙ্গী ইউনিয়নের কাজী মইন উদ্দিন বিয়ে দিয়েছেন ১৫টি, তালাক চারটি, ছেলে পক্ষের কোন তালাক না থাকলেও মেয়ে পক্ষের রয়েছে ২টি, খোলা তালাক দুটি। কোটচাঁদপুর পৌরসভার কাজী বদিউজ্জামান বিয়ে দিয়েছেন ৩৪টি, তালাক দিয়েছেন ১৫টি, ছেলে ও মেয়ে পক্ষের নেই কোন পৃথক তালাক, ১৫টিই ছিল খোলা তালাক। কোটচাঁদপুর পৌরসভার কাজী শাহজামান বিয়ে দিয়েছেন ১৪৩টি, তালাক ৪০টি, ছেলে পক্ষ ১৮টি, মেয়ে পক্ষ ২২টি। তবে নেই কোন খোলা তালাক।
কুশনা ইউনিয়নের কাজী রেজাউল হক বলেন, ‘তালাক দেয়ার ঘটনা একটি সামাজিক ব্যাধি। এটা বেশি ঘটছে মোবাইলের মাধ্যমে। মোবাইলে পরকীয়া করছে, এরপর স্বামী সংসার ত্যাগ করে তালাক দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বেশির ভাগ মধ্য বয়সি নারী পুরুষ। আমার জানামতে কোন বাল্য বিবাহ করা ছেলে মেয়ে এমন কাজ করছেন না।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম বলেন, বাল্য বিবাহের কারণেই তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বাল্য বিবাহ রোধে বেশি কাজ করতে হবে। এটা প্রতিরোধে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।
কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস বলেন, পরকীয়া ও বাল্য বিবাহের কারণে সমাজে তালাক দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা প্রতিরোধে আমাদেরকে সম্মলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ কাজটি কেউ একা করে সফলতা আনতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা খবর পেলে বাল্য বিবাহ বন্ধ করে রেখে আসি। তবে পরবর্তীতে কি হয়, সেটা আমরা ফলোআপ করি না। যে কারণে হয়তো তারা অন্য কোন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সে কারণে আমাদেকে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন করতে হবে। তাহলে বাল্য বিবাহ রোধ হবে, আর বাল্যবিবাহ রোধ হলে তালাক দেয়ার প্রবণতাও কমে আসবে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, তালাক দেয়া একটা সামাজিক ব্যধি। এটা অবশ্যই সামাজিক অবক্ষয়।এর মূল কারণ হিসেবে বাল্য বিবাহ ও পরকীয়া বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এর প্রতিরোধে শুধু মাত্র রাষ্ট্র একা কাজ করলে হবে না। কাজ করতে হবে আমাদের সামাজিক সংগঠনগুলোকে। আমরা ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে গ্রাম আদালত করে দিয়েছি। যেখানে মানুষ তাদের ছোট ছোট সমস্যাগুলো নিরসন করবেন আলোচনার মাধ্যমে। এতে করে তালাকসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। এছাড়া আমরা সব ধরনের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গেলে, সেখানেও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সবুজদেশ/এসএএস