ঝিনাইদহে অ্যাভোকোডা চাষ করে সফল স্কুল শিক্ষক হারুন (ভিডিও)
শোয়াইব উদ্দিন:
অ্যাভোকাডো মেক্সিকো ও গুয়াতেমালার ফল হলেও বাংলাদেশেও এর চাষ সীমিতভাবে শুরু হয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর ফল অ্যাভোকাডো। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এ, সি, ই ও কে রয়েছে। এছাড়া ১৮ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ৩৪ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। তবে অন্যান্য ফলের তুলনায় এ ফলের মিষ্টতা কম। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। অ্যাভোকাডোয় রয়েছে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও মিনারেল।
মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল অ্যাভোকাডো এখন ঝিনাইদহে চাষ হচ্ছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের হারুন অর রশিদ মুছা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ২৫০ টি অ্যাভোকাডো গাছ লাগিয়েছেন। গাছগুলোতে ব্যাপক হারে ফল এসেছে। এর মধ্যে এই ফল তিনি বিক্রিও করছেন। বাজারে অ্যাভোকাডো ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণ থাকায় এই ফলের চাষ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন।
হারুন অর রশিদ মুছা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। সে কোটচাঁদপুরের কাগমারী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। মুছা জানান, তার পিতা ছিলেন কৃষক । ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ধরণের ফলফলাদি গাছ লাগাতেন। পৈতৃক সূত্রে ২০ বিঘা জমি পেয়েছেন। এসব জমিতে তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করে কমপক্ষে আরও ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। ২০০৫ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলায় প্রথম বাউকুল চাষ করে ২০ লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেন। তবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন। গত দুই বছর ধরে তার গাছে অ্যাভোকাডো ধরছে। এখন তার বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে। যার বেশির ভাগেই ফল এসেছে।
তিনি অ্যাভোকোডা ফল প্রতি কেজি ৫০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। যা ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও মুছার বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া প্রায় ছয় বিঘা জমিতে অ্যাভোকাডো, সাদা ড্রাগন, পারসিমন, লংগান (কাঠলিচু), সাদা জাম, গোলাপ জাম, মালবেরি, ব্লাকবেরি, সুইটলেমন, প্যালেস্টাইন বাতাবি লেবু, চায়না বাতাবি লেবু, করোসল, মিশরীয় কমলা, দার্জিলিং লেবু, ব্লাক গেন্ডারি কমপক্ষে ২৫ ধরনের বিদেশি ফলের চাষ রয়েছে। অ্যাভোকাডোর চারাও বিক্রি করছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, প্রথমে অ্যাভোকাডো চাষ করে একটু চিন্তিত ছিলেন। কারণ অন্যান্য ফলের মত অ্যাভোকাডো ফল খেতে তেমন সুস্বাদু নয়। তবে এই ফলের পুষ্টিগুণ থাকায় চাহিদা বেড়েছে।
মুছার এই নতুন চাষ অনেকে কৌতূহল নিয়ে দেখতে ও কিনতে আসেন। অ্যাভোকাডো গাছটি ১০ ফুট উচ্চতার। তাতে থোকায় থোকায় ঝুলছে চকচকে সবুজ রঙের ফল। দেখতে অনেকটা পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। একেকটির ওজন প্রায় আধা কেজি। অ্যাভোকাডোর চারা ৩ বছরে পরিপক্ক হয়। যত্ম নিলে ১০০ বছর পর্যন্ত ফল দেই।
মুছার বাগানে ৮জন শ্রমিক নিয়োমিত কাজ করেন। তার এই উদ্যোগের কারণে অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়েছে। হারুন অর রশিদ মুছার সাফল্য দেখে এখন আশপাশের কৃষকেরাও ঝুঁকছেন অ্যাভোকাডো চাষে।
বাগানের শ্রমিক গোলাম রসুল বলেন, আমরা আটজন শ্রমিক এই বাগানে কাজ করি। মুছা ভাই বিভিন্ন বিদেশি ফলের চাষ করেন এতে তিনি লাভবানও হন। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি এই ধরণের চাষ করেন তাহেল আর চাকরির পিছনে ছুটতে হবে না।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, হারুন অর রশিদ মুছা একজন স্কুল শিক্ষক। চাকরির পাশাপাশি তিনি অনেক বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেন। অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ করে। এ ফলে মানবদেহের জন্য উপকারী ফ্যাট রয়েছে। যা শরীর গঠনের জন্য উপকারী। অ্যাভোকাডো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, অ্যাভোকাডো চাষের জন্য এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী হওয়ায় দেশে এ ফল চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। তিনি অ্যাভোকাডো ফলের চারাও উৎপাদন করছেন এবং বিক্রি করছেন । যদি কোন নতুন চাষী সম্ভাবনাময় এই ফল চাষ করতে চাই তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। আমরা মুছার বাগানের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি এবং তাকে বিভিন্ন পরমর্শ দিয়ে আসছি।
ভিডিও…