ঢাকা ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ইউএনওর কক্ষে ২ ঘণ্টা মেম্বারকে আটকে রাখার অভিযোগ

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্ক:

কৃষকের জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই ঘণ্টা ইউএনওর কক্ষে আটক রাখা হয় ইউপি মেম্বারকে। তাকে জুমার নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার খলিলুর রহমান। 

শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

মেম্বার খলিলুর রহমান বলেন, স্থানীয় কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জসহ দুই পুলিশ সদস্য সদর থানার ওসির কথা বলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১টার দিকে থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহীন আমাকে গালমন্দ করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। 

খলিলুর রহমান আরও বলেন, অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে একজন আনসার সদস্যকে পাহারায় রেখে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। জুমার নামাজের সময় আমাকে মসজিদেও যেতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে আমাকে আটক রাখা হয়। 

খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ, ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও শন্তষ কুমার ছুটে যান উপজেলা পরিষদে। বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন নিজ কার্যালয়ে আসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় মেম্বারকে। 

আটক রাখা প্রসঙ্গে মেম্বার বলেন, আমার এলাকা গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) পাড়ে কৃষকের ফসলি জমি থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাঠানো মাটিখোরদের (মাটি ব্যবসায়ী) মাটি কাটতে এলাকার লোকজন বাধা দেয়। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ঘটনায় আমাকে দায়ি করে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ইউএনওর কক্ষে আটকে রেখে মানসিক যন্ত্রনাসহ মানহানী করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ ও ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালী মাটিখোরদের কাছে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মাটি কাটতে বাধা দিয়েছে। ইউপি সদস্যকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যান ইউএনও। এ ধরনের নেক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িত ব্যক্তির বিচার দাবী করেন এ দুই ইউপি সদস্য। 

এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন ইউপি সদস্যকে আটক রাখার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমার মাটি, আমি কাটতে বলেছি, তাতে বাঁধা দিয়েছে মেম্বার খলিলুর রহমান। এর কারণ জানতে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। 

ইউএনও আরও বলেন, জেলা স্কাউট ভবনের মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য ভ্যাকু মেশিন, ৬টি ট্রাকটর ট্রলী (রাজরাম খাল) পাঠানো হয়। এর আগে মেম্বার খলিলুর রহমানের সাথে উপজেলা কার্যালয়ের নাজির জাহাঙ্গীর হোসেন কথা বলেন। এরপরও মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খালের মাটির ঢিবিতে কৃষকের ফসল আছে এমন খবর জানা ছিল না বলে দাবী করেন ইউএনও।

রাত সাড়ে ৭টার দিকে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন কালে উপস্থিত কৃষকরা জানান, চিহ্নিত মাটিখোর জসিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন ও তার সহযোগিরা ভ্যাকু মেশিন (মাটিকাটা মেশিন), ট্রাকটর ট্রলী ( মাটিপরিবহণ গাড়ি) নিয়ে  মাটি কাটার চেষ্টা করে। কৃষক মান্নান শেখ, মো. আবু সাইদ, আব্দুর রাজ্জাক, মেহেদী হাসান, সেলিম হোসেন অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথা বলে মাটি কাটতে চেষ্টা করা হয়। এসময় ফসল বোনা জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেন তারা। এক পর্যায়ে উপজেলার গাড়ি চালকসহ কয়েকজন আনসার সদস্য এসে হুমকি ধামকি দিয়ে ফিরে যান। দুপুরের দিকে ওয়ার্ডের মেম্বারকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায় ইউএনও।

আরও জানা যায়, কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারের মাধ্যমে গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) খনন করে।  সেসময় খনন করা মাটি কৃষকদের ফসলি জমিতে স্তুপ করে রাখা হয়। এতে শতশত বিঘা জমি মাটিতে ঢেকে যায়। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ওই এলাকার শতশত কৃষক। নিরুপায় হয়ে অনেকেই নিজ উদ্যোগে মাটি সমান করে চাষ শুরু করেন। অনেকে আবার মাটির উঁচু ঢিবিতেই মুগডাল চাষ করেন। 

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেছেন, ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা হবে। 

Tag :

About Author Information
Update Time : ১২:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০২২
১০৩ Time View

ঝিনাইদহে ইউএনওর কক্ষে ২ ঘণ্টা মেম্বারকে আটকে রাখার অভিযোগ

Update Time : ১২:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০২২

সবুজদেশ ডেস্ক:

কৃষকের জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই ঘণ্টা ইউএনওর কক্ষে আটক রাখা হয় ইউপি মেম্বারকে। তাকে জুমার নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার খলিলুর রহমান। 

শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

মেম্বার খলিলুর রহমান বলেন, স্থানীয় কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জসহ দুই পুলিশ সদস্য সদর থানার ওসির কথা বলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১টার দিকে থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহীন আমাকে গালমন্দ করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। 

খলিলুর রহমান আরও বলেন, অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে একজন আনসার সদস্যকে পাহারায় রেখে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। জুমার নামাজের সময় আমাকে মসজিদেও যেতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে আমাকে আটক রাখা হয়। 

খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ, ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও শন্তষ কুমার ছুটে যান উপজেলা পরিষদে। বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন নিজ কার্যালয়ে আসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় মেম্বারকে। 

আটক রাখা প্রসঙ্গে মেম্বার বলেন, আমার এলাকা গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) পাড়ে কৃষকের ফসলি জমি থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাঠানো মাটিখোরদের (মাটি ব্যবসায়ী) মাটি কাটতে এলাকার লোকজন বাধা দেয়। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ঘটনায় আমাকে দায়ি করে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ইউএনওর কক্ষে আটকে রেখে মানসিক যন্ত্রনাসহ মানহানী করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ ও ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালী মাটিখোরদের কাছে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মাটি কাটতে বাধা দিয়েছে। ইউপি সদস্যকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যান ইউএনও। এ ধরনের নেক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িত ব্যক্তির বিচার দাবী করেন এ দুই ইউপি সদস্য। 

এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন ইউপি সদস্যকে আটক রাখার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমার মাটি, আমি কাটতে বলেছি, তাতে বাঁধা দিয়েছে মেম্বার খলিলুর রহমান। এর কারণ জানতে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। 

ইউএনও আরও বলেন, জেলা স্কাউট ভবনের মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য ভ্যাকু মেশিন, ৬টি ট্রাকটর ট্রলী (রাজরাম খাল) পাঠানো হয়। এর আগে মেম্বার খলিলুর রহমানের সাথে উপজেলা কার্যালয়ের নাজির জাহাঙ্গীর হোসেন কথা বলেন। এরপরও মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খালের মাটির ঢিবিতে কৃষকের ফসল আছে এমন খবর জানা ছিল না বলে দাবী করেন ইউএনও।

রাত সাড়ে ৭টার দিকে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন কালে উপস্থিত কৃষকরা জানান, চিহ্নিত মাটিখোর জসিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন ও তার সহযোগিরা ভ্যাকু মেশিন (মাটিকাটা মেশিন), ট্রাকটর ট্রলী ( মাটিপরিবহণ গাড়ি) নিয়ে  মাটি কাটার চেষ্টা করে। কৃষক মান্নান শেখ, মো. আবু সাইদ, আব্দুর রাজ্জাক, মেহেদী হাসান, সেলিম হোসেন অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথা বলে মাটি কাটতে চেষ্টা করা হয়। এসময় ফসল বোনা জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেন তারা। এক পর্যায়ে উপজেলার গাড়ি চালকসহ কয়েকজন আনসার সদস্য এসে হুমকি ধামকি দিয়ে ফিরে যান। দুপুরের দিকে ওয়ার্ডের মেম্বারকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায় ইউএনও।

আরও জানা যায়, কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারের মাধ্যমে গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) খনন করে।  সেসময় খনন করা মাটি কৃষকদের ফসলি জমিতে স্তুপ করে রাখা হয়। এতে শতশত বিঘা জমি মাটিতে ঢেকে যায়। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ওই এলাকার শতশত কৃষক। নিরুপায় হয়ে অনেকেই নিজ উদ্যোগে মাটি সমান করে চাষ শুরু করেন। অনেকে আবার মাটির উঁচু ঢিবিতেই মুগডাল চাষ করেন। 

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেছেন, ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা হবে।