ঢাকা ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট-গাইড বইয়ের কারখানার সন্ধান

 

ঝিনাইদহে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ নোট আর গাইড বইয়ের গোপন কারখানার সন্ধান। গোপন গোডাউন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আনাচে কানাচে। ফুলে ফেপে উঠেছে প্রকাশ। প্রতারিত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটনাটি ঘটছে। কিন্তু দেখার কেও নেই !

ঝিনাইদহ (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ) কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা: শাহনাজ ফেরদৌস জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে জড়িতরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।

ঝিনাইদহ জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে আলিশান চারতলা বাড়ির নীচতলায় একটি আন্ডার গ্রাউন্ড গোডাউনের সন্ধান মিলেছে। সেখানে হাজার হাজার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড বই তৈরী করা হয় বাড়ির আন্ডার গ্রাউন্ড ফ্লোরের প্রবেশ মুখে ছোট্ট একটি গেট। সর্বক্ষণ গেটের সাটার নামানোই থাকে। বাইরে থেকে কারো বোঝার উপায় নেই। সেখানে প্রবেশ করা কঠিন। আলিশান ভবনে বেশ কয়েকটি ফ্লাট। নীচতলায় কয়েকটি দোকান ঘর। একটি মিষ্টির দোকানের ছোট্ট একটি গেট। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই চোখ ছানা বড়া! আলো আধারে ঢাকা গোডাউনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট আর গাইড বইয়ে ঠাসা। বইয়ের স্তুুপের মাঝে একজন ব্যক্তি। স্বল্প আলোয় কোন দিকে খেয়াল নেই তার। ক্যামেরায় ফ্লাস জ্বলে উঠতেই চমকে উঠলেন। মিরাজ নামের এই ব্যক্তি ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে গড় গড় করে জানায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড ঢাকা থেকে ছাপানো হয়।তারপর গোডাউনে বাধায় ও লেবেল লাগানোর কাজ করা হয়। দেশের লাইব্রেরী গুলোর চাহিদা মত কুরিয়ার সার্ভিস যোগে বই গুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ শুধু একটি ব্যবসা নয়- এটি একটি ছকবাঁধা পরিকল্পনা। যা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ওপেন ইউনিভার্সিটি) প্রতি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। নোট গাইড বা সহায়ক বই প্রকাশ করার বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্ন ছিল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ঝিনাইদহ কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা: শাহনাজ ফেরদৌসের কাছে।

তিনি (শাহনাজ ফেরদৌস) জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোট গাইড, সহায়ক পুস্তুক প্রকাশের জন্য দেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। এ ধরণের কর্মকান্ড বেআইনী শুধু নয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল লক্ষ্যর প্রতি এক ধরণের হুমকি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে মসজিদে সাদাতিয়ার সামনে চারতলা বিশাল আলিশান বাড়ি ও গোডাউনের মালিক মোঃ ফকরুল ইসলাম। অভিযোগ অবৈধ এসব বই বিক্রির টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন (ফকরুল)। আরো জানা যায়, ফকরুল ইসলাম এক সময় আত্ম-বিশ্বাস নামের একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। তার ভাই আলাউদ্দিন এক সময় ঝিনাইদহ সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সেই সুত্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বই ছাপানো শুরু করেন তিনি (আলাউদ্দিন)। প্রথম দিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর এলাকার একটি বইয়ের লাইব্রেরীতে বিক্রি করা হতো নোট বই গুলো। ডিভি লটারীতে তিনি (আলাউদ্দিন) আমেরিকায় পাড়ি দেন। এনজিওর চাকরি ছেড়ে নোট বইয়ের ব্যবসার হাল ধরেন ভাই (আলাউদ্দিনের) মোঃ ফকরুল ইসলাম। ঢাকা থেকে ছাপা শুরু হয় নোট বই আর গাইড। ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। বিভিন্ন স্কুল , কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর অসৎ ব্যক্তির কমিশন বানিজ্যে বাড়তে থাকে বই বিক্রি। নোট বই বিক্রির নেটওয়ার্কের গডফাদার আলাউদ্দিন প্রবাসে বসেই হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।

ঝিনাইদহ প্রস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সংগঠনিক আহবায়ক ইনজামুল হক জানান, বোর্ডের বাইয়ে নোট গাইড সহায়ক ছাপানো ও বিক্রির বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বা গাইড সহায়ক বই বিক্রির জন্য কোন নির্দেশনা নেই। ফকরুল ইসলাম কি ভাবে নোট গাইড বা সহায়ক বই ছাপাচ্ছে এবং বিক্রি করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির এই কর্মকর্তার স্পষ্ট জবাব , বিষয়টি ফকরুল ভাল বলতে পারবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বই বিক্রেতা জানান শুধু ফকরুল নয় সারা দেশে নোট গাইড বিক্রি জন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

ফকরুল ইসলাম দাবি করেন বই গুলো পান্ডুলিপি নিজে তৈরী করেন এবং ঢাকার প্রেস থেকে ছাপানো হয়। তার দাবি ট্রেড লাইসেন্স আর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির কার্ডের ক্ষমতা বলে দীর্ঘ দিন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড প্রকাশ করে আসছেন।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :
জনপ্রিয়

ঝিনাইদহে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট-গাইড বইয়ের কারখানার সন্ধান

Update Time : ০৯:২২:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

 

ঝিনাইদহে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ নোট আর গাইড বইয়ের গোপন কারখানার সন্ধান। গোপন গোডাউন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আনাচে কানাচে। ফুলে ফেপে উঠেছে প্রকাশ। প্রতারিত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটনাটি ঘটছে। কিন্তু দেখার কেও নেই !

ঝিনাইদহ (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ) কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা: শাহনাজ ফেরদৌস জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে জড়িতরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।

ঝিনাইদহ জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে আলিশান চারতলা বাড়ির নীচতলায় একটি আন্ডার গ্রাউন্ড গোডাউনের সন্ধান মিলেছে। সেখানে হাজার হাজার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড বই তৈরী করা হয় বাড়ির আন্ডার গ্রাউন্ড ফ্লোরের প্রবেশ মুখে ছোট্ট একটি গেট। সর্বক্ষণ গেটের সাটার নামানোই থাকে। বাইরে থেকে কারো বোঝার উপায় নেই। সেখানে প্রবেশ করা কঠিন। আলিশান ভবনে বেশ কয়েকটি ফ্লাট। নীচতলায় কয়েকটি দোকান ঘর। একটি মিষ্টির দোকানের ছোট্ট একটি গেট। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই চোখ ছানা বড়া! আলো আধারে ঢাকা গোডাউনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট আর গাইড বইয়ে ঠাসা। বইয়ের স্তুুপের মাঝে একজন ব্যক্তি। স্বল্প আলোয় কোন দিকে খেয়াল নেই তার। ক্যামেরায় ফ্লাস জ্বলে উঠতেই চমকে উঠলেন। মিরাজ নামের এই ব্যক্তি ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে গড় গড় করে জানায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড ঢাকা থেকে ছাপানো হয়।তারপর গোডাউনে বাধায় ও লেবেল লাগানোর কাজ করা হয়। দেশের লাইব্রেরী গুলোর চাহিদা মত কুরিয়ার সার্ভিস যোগে বই গুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ শুধু একটি ব্যবসা নয়- এটি একটি ছকবাঁধা পরিকল্পনা। যা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ওপেন ইউনিভার্সিটি) প্রতি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। নোট গাইড বা সহায়ক বই প্রকাশ করার বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্ন ছিল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ঝিনাইদহ কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা: শাহনাজ ফেরদৌসের কাছে।

তিনি (শাহনাজ ফেরদৌস) জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোট গাইড, সহায়ক পুস্তুক প্রকাশের জন্য দেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। এ ধরণের কর্মকান্ড বেআইনী শুধু নয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল লক্ষ্যর প্রতি এক ধরণের হুমকি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে মসজিদে সাদাতিয়ার সামনে চারতলা বিশাল আলিশান বাড়ি ও গোডাউনের মালিক মোঃ ফকরুল ইসলাম। অভিযোগ অবৈধ এসব বই বিক্রির টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন (ফকরুল)। আরো জানা যায়, ফকরুল ইসলাম এক সময় আত্ম-বিশ্বাস নামের একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। তার ভাই আলাউদ্দিন এক সময় ঝিনাইদহ সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সেই সুত্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বই ছাপানো শুরু করেন তিনি (আলাউদ্দিন)। প্রথম দিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর এলাকার একটি বইয়ের লাইব্রেরীতে বিক্রি করা হতো নোট বই গুলো। ডিভি লটারীতে তিনি (আলাউদ্দিন) আমেরিকায় পাড়ি দেন। এনজিওর চাকরি ছেড়ে নোট বইয়ের ব্যবসার হাল ধরেন ভাই (আলাউদ্দিনের) মোঃ ফকরুল ইসলাম। ঢাকা থেকে ছাপা শুরু হয় নোট বই আর গাইড। ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। বিভিন্ন স্কুল , কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর অসৎ ব্যক্তির কমিশন বানিজ্যে বাড়তে থাকে বই বিক্রি। নোট বই বিক্রির নেটওয়ার্কের গডফাদার আলাউদ্দিন প্রবাসে বসেই হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।

ঝিনাইদহ প্রস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সংগঠনিক আহবায়ক ইনজামুল হক জানান, বোর্ডের বাইয়ে নোট গাইড সহায়ক ছাপানো ও বিক্রির বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বা গাইড সহায়ক বই বিক্রির জন্য কোন নির্দেশনা নেই। ফকরুল ইসলাম কি ভাবে নোট গাইড বা সহায়ক বই ছাপাচ্ছে এবং বিক্রি করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির এই কর্মকর্তার স্পষ্ট জবাব , বিষয়টি ফকরুল ভাল বলতে পারবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বই বিক্রেতা জানান শুধু ফকরুল নয় সারা দেশে নোট গাইড বিক্রি জন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

ফকরুল ইসলাম দাবি করেন বই গুলো পান্ডুলিপি নিজে তৈরী করেন এবং ঢাকার প্রেস থেকে ছাপানো হয়। তার দাবি ট্রেড লাইসেন্স আর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির কার্ডের ক্ষমতা বলে দীর্ঘ দিন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড প্রকাশ করে আসছেন।

সবুজদেশ/এসএএস