ঢাকা ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিককে আটকে রেখে হত্যার অভিযোগ

ফাইল ছবি-

 

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজার সংলগ্ন সরকার এন্টার প্রাইজ নামক এক চাতালে শ্রমিক দম্পত্তিকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর নেছার আলী ওরফে আলমগীর (৫০) নামের এক শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে ওই চাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নেছার আলী যশোরের চৌগাছা উপজেলার কান্দি গ্রামের মৃত সোনাই মন্ডলের ছেলে। বর্তমানে এই দম্পত্তি সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজার এলাকায় বসবাস করে।

নিহত নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, টাকা ধার নিয়ে দিতে না পারাই আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। গতকাল সোমবার সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার বাজারের একটি হোটেলে খাবার খেতে বসি। তখন পাওনাদাররা আমাদের হোটেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। সেখানে টাকার ব্যাপারে একটি জায়গায় স্থানীয় মেম্বর ও পুলিশের উপস্থিতিতে শালিশী বৈঠক হয়। তখন আমার বোন শিফালী পাওনা টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং চাতাল ব্যবসায়ী শফিকুলের পাওনা দেড় লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিই। এর পরও আমাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। রাতে চাতালের দুই তলায় একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। সকালে আমার সামনে আমার স্বামী নেছার আলীর পায়ে লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি মারে।

তিনি আরও বলেন, সেসময় প্রতিবাদ করলে শরিফুলের পিতা আমাকে ধাঁক্কা দিতে দিতে নিচের তলায় নিয়ে আসে এবং একটি কক্ষে আটকে রাখে। তার প্রায় ১০ মিনিট পর আমার স্বামীর মৃত দেহ দ্বিতীয় তলা থেকে বের করে একটি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন আমি কান্নাকাটি করতে থাকি। আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলেছে বলে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী।

দিপালী খাতুনের বড় বোন শিফালী খাতুন জানান, আমার বোন জামাইকে হত্যা করা হয়েছে। শরিফুলের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল আমার বোন জামাই। সে টাকা আমি গতকালই দিয়ে দিয়েছি। আবার কেন রাতে ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে আটকে রেখে সকালে মারধর করা হলো ! আমি এ হত্যার বিচার চাই।

এলাকাবাসী জানান, সরকার এন্টার প্রাইজ চাতালের প্রোঃ আরশাদ আলী ও চাতাল ব্যবসায়ী শরিফুল পাওনা টাকার জন্য ওই শ্রমিক দম্পত্তিকে পার্শ্ববর্তী তালসার বাজার থেকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের কাছে ডাকবাংলা বাজার এলাকার রহিম মুন্সি এক লক্ষ বিশ হাজার ও শরিফুল দেড় লক্ষ টাকা পেত। গতকাল তাদেরকে ধরে নিয়ে আসার পর শরিফুলের পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছে নেছার আলীর পরিবার এবং রহিম মুন্সির পাওনা টাকা সময় নিয়ে পরিশোধ করলেও হবে বলে জানা যায়। শরিফুলের টাকা ফেরত দেওয়ার পরও এ ধরনের ন্যাক্কার জনক ঘটনা এলাকাবাসী আশা করিনি।

ডাকবাংলা চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন ভান্ডারী জানান, আমার বাজারে মোট ৯৩টি অটো ও সেমি অটো রাইচ মিল রয়েছে। শ্রমিকের কারণে মিল মালিকদের মাঝে মধ্যে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে চাতালে নিয়ে আসতে হয়। তবে এই শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা শুনে হাসপাতালে এসেছি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিককে আটকে রেখে হত্যার অভিযোগ

ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিককে আটকে রেখে হত্যার অভিযোগ

Update Time : ১০:১৬:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

 

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজার সংলগ্ন সরকার এন্টার প্রাইজ নামক এক চাতালে শ্রমিক দম্পত্তিকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর নেছার আলী ওরফে আলমগীর (৫০) নামের এক শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে ওই চাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নেছার আলী যশোরের চৌগাছা উপজেলার কান্দি গ্রামের মৃত সোনাই মন্ডলের ছেলে। বর্তমানে এই দম্পত্তি সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজার এলাকায় বসবাস করে।

নিহত নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, টাকা ধার নিয়ে দিতে না পারাই আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। গতকাল সোমবার সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার বাজারের একটি হোটেলে খাবার খেতে বসি। তখন পাওনাদাররা আমাদের হোটেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। সেখানে টাকার ব্যাপারে একটি জায়গায় স্থানীয় মেম্বর ও পুলিশের উপস্থিতিতে শালিশী বৈঠক হয়। তখন আমার বোন শিফালী পাওনা টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং চাতাল ব্যবসায়ী শফিকুলের পাওনা দেড় লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিই। এর পরও আমাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। রাতে চাতালের দুই তলায় একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। সকালে আমার সামনে আমার স্বামী নেছার আলীর পায়ে লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি মারে।

তিনি আরও বলেন, সেসময় প্রতিবাদ করলে শরিফুলের পিতা আমাকে ধাঁক্কা দিতে দিতে নিচের তলায় নিয়ে আসে এবং একটি কক্ষে আটকে রাখে। তার প্রায় ১০ মিনিট পর আমার স্বামীর মৃত দেহ দ্বিতীয় তলা থেকে বের করে একটি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন আমি কান্নাকাটি করতে থাকি। আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলেছে বলে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী।

দিপালী খাতুনের বড় বোন শিফালী খাতুন জানান, আমার বোন জামাইকে হত্যা করা হয়েছে। শরিফুলের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল আমার বোন জামাই। সে টাকা আমি গতকালই দিয়ে দিয়েছি। আবার কেন রাতে ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে আটকে রেখে সকালে মারধর করা হলো ! আমি এ হত্যার বিচার চাই।

এলাকাবাসী জানান, সরকার এন্টার প্রাইজ চাতালের প্রোঃ আরশাদ আলী ও চাতাল ব্যবসায়ী শরিফুল পাওনা টাকার জন্য ওই শ্রমিক দম্পত্তিকে পার্শ্ববর্তী তালসার বাজার থেকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের কাছে ডাকবাংলা বাজার এলাকার রহিম মুন্সি এক লক্ষ বিশ হাজার ও শরিফুল দেড় লক্ষ টাকা পেত। গতকাল তাদেরকে ধরে নিয়ে আসার পর শরিফুলের পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছে নেছার আলীর পরিবার এবং রহিম মুন্সির পাওনা টাকা সময় নিয়ে পরিশোধ করলেও হবে বলে জানা যায়। শরিফুলের টাকা ফেরত দেওয়ার পরও এ ধরনের ন্যাক্কার জনক ঘটনা এলাকাবাসী আশা করিনি।

ডাকবাংলা চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন ভান্ডারী জানান, আমার বাজারে মোট ৯৩টি অটো ও সেমি অটো রাইচ মিল রয়েছে। শ্রমিকের কারণে মিল মালিকদের মাঝে মধ্যে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে চাতালে নিয়ে আসতে হয়। তবে এই শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা শুনে হাসপাতালে এসেছি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

সবুজদেশ/এসএএস