ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ‘ঝাঁকায়’ ঝুকছে উঠতি বয়সের কিশোররা

Reporter Name

বিশেষ প্রতিনিধি, ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে নতুন মাদকের নাম ঝাঁকা। আর এই ঝাঁকায় ঝুকছে উঠতি বয়সের কিশোররা। ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা না পেয়ে এখন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মিশ্রণে মাদকের বিকল্প হিসেবে সেবন করছে তরুণেরা। প্রতিদিনই এই নেশাজাত দ্রব্যে “ঝাঁকা” তৈরিতে সংঘবদ্ধ হচ্ছে উঠতি বয়সের কিশোর ও তরুণেরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারে বিক্রিত বিভিন্ন কোম্পানীর ম্যাংগো জুস, ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন-টু, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, টোফেন, হিস্টাসিন, সিডিল ও সি-ভিট একসাথে গুড়ো করে পানির সাথে বোতলে ঝাঁকিয়ে প্রচন্ড দুর্গন্ধ অবস্থায় সেবন করছে উঠতি বয়সের তরুণেরা। নতুন এই মাদকের নাম দিয়েছে তারা ঝাঁকা। মানুষের চোখের সামনে জুসের সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দেখা যায়। কেউ বুঝতে পারে না এটা নেশাজাতীয় দ্রব্য। আর এই ঝাঁকায় ঝুকে উঠতি বয়সের তরুণেরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। ঝাঁকায় আসক্ত এই সকল কিশোর-তরুণদের নিয়ে পরিবারের অভিভাবকরা বেশ উদ্বিগ্ন।

ঝিনাইদহের উঠতি বয়সের তরুণেরা বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে অনুমোদিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) বাদেই এসকল ওষুধ সংগ্রহ করছে। ব্যবস্থাপত্র বাদে এসকল ওষুধ ফার্মেসী মালিকরা যেন বিক্রি না করেন এজন্য দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণের পিতা বলেন, আমি জানতাম আমার ছেলে জুস খায়। কিন্তু পুলিশে ধরার পর জানলাম সে জুসের সাথে বিভিন্ন ওষুধ মিশিয়ে নেশা করছে। এর নাম নাকি ঝাঁকা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান বাদে যেন এসকল ওষুধগুলো কোন ফার্মেসী বিক্রি না করেন সেই দাবি করেছেন তিনি।

তবে, যেহেতু এই নেশাজাতীয় দ্রব্য ঝাঁকার ব্যবহার সীমিত মাত্রায় সেহেতু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি ও ঝাঁকায় ব্যবহৃত এ্যালোপ্যাথিক ওষুধগুলো যাতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত বিক্রি না করতে পারে সেজন্য অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মনে করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। নতুন এই নেশা ঝাঁকায় বিভিন্ন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের ডা: প্রসেনজিৎ পার্থ বিশ্বাস বলেন, সব প্রকার ওষুধই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো শরীরের জন্য বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিনিয়ত এ ওষুধগুলো খেলে একসময় নেশায় পরিণত হবে। ওই ওষুধ না খেলে তার ঘুমই আসবে না। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন পাশর্^ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। একসময় সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হবে, সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে যেতে পারে।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি দেশের আলোচিত ঘটনা বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আসামীদের মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে। এ কারণেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এটাকে প্রতিহত করতে হবে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৫৮:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০
১১৮০ Time View

ঝিনাইদহে ‘ঝাঁকায়’ ঝুকছে উঠতি বয়সের কিশোররা

আপডেট সময় : ০৮:৫৮:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধি, ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে নতুন মাদকের নাম ঝাঁকা। আর এই ঝাঁকায় ঝুকছে উঠতি বয়সের কিশোররা। ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা না পেয়ে এখন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মিশ্রণে মাদকের বিকল্প হিসেবে সেবন করছে তরুণেরা। প্রতিদিনই এই নেশাজাত দ্রব্যে “ঝাঁকা” তৈরিতে সংঘবদ্ধ হচ্ছে উঠতি বয়সের কিশোর ও তরুণেরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারে বিক্রিত বিভিন্ন কোম্পানীর ম্যাংগো জুস, ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন-টু, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, টোফেন, হিস্টাসিন, সিডিল ও সি-ভিট একসাথে গুড়ো করে পানির সাথে বোতলে ঝাঁকিয়ে প্রচন্ড দুর্গন্ধ অবস্থায় সেবন করছে উঠতি বয়সের তরুণেরা। নতুন এই মাদকের নাম দিয়েছে তারা ঝাঁকা। মানুষের চোখের সামনে জুসের সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দেখা যায়। কেউ বুঝতে পারে না এটা নেশাজাতীয় দ্রব্য। আর এই ঝাঁকায় ঝুকে উঠতি বয়সের তরুণেরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। ঝাঁকায় আসক্ত এই সকল কিশোর-তরুণদের নিয়ে পরিবারের অভিভাবকরা বেশ উদ্বিগ্ন।

ঝিনাইদহের উঠতি বয়সের তরুণেরা বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে অনুমোদিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) বাদেই এসকল ওষুধ সংগ্রহ করছে। ব্যবস্থাপত্র বাদে এসকল ওষুধ ফার্মেসী মালিকরা যেন বিক্রি না করেন এজন্য দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণের পিতা বলেন, আমি জানতাম আমার ছেলে জুস খায়। কিন্তু পুলিশে ধরার পর জানলাম সে জুসের সাথে বিভিন্ন ওষুধ মিশিয়ে নেশা করছে। এর নাম নাকি ঝাঁকা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান বাদে যেন এসকল ওষুধগুলো কোন ফার্মেসী বিক্রি না করেন সেই দাবি করেছেন তিনি।

তবে, যেহেতু এই নেশাজাতীয় দ্রব্য ঝাঁকার ব্যবহার সীমিত মাত্রায় সেহেতু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি ও ঝাঁকায় ব্যবহৃত এ্যালোপ্যাথিক ওষুধগুলো যাতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত বিক্রি না করতে পারে সেজন্য অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মনে করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। নতুন এই নেশা ঝাঁকায় বিভিন্ন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের ডা: প্রসেনজিৎ পার্থ বিশ্বাস বলেন, সব প্রকার ওষুধই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো শরীরের জন্য বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিনিয়ত এ ওষুধগুলো খেলে একসময় নেশায় পরিণত হবে। ওই ওষুধ না খেলে তার ঘুমই আসবে না। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন পাশর্^ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। একসময় সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হবে, সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে যেতে পারে।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি দেশের আলোচিত ঘটনা বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আসামীদের মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে। এ কারণেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এটাকে প্রতিহত করতে হবে।