ঝিনাইদহে ঝুঁকিতে ঝুলছে সড়ক সেতু: পাউবো’র উদাসীনতা চরমে
ঝিনাইদহঃ
ভোর থেকে ভোররাত অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা মুহুর্মুহ শব্দ আর ধূঁলাবালিতে নাকাল মানুষ। বন্ধ হওয়ার উপক্রম খাবার হোটেল, মুদি, ডাক্তারখানা। বৃহৎ কাতলাগাড়ী বাজারকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা স্কুল, কলেজ, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসাসহ বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেষ্টিত গড়ে ওঠা জনবহুল এলাকা কাতলাগাড়ী বাজারের প্রধান সড়ক সেতুর এখন বেহালদশা। ভেঙ্গে পড়েছে ব্রীজের গার্ডার ফাটলে ফাটলে চৌচির এখন শুধু ধ্বসে পড়তে বাকি। স্থানীয়দের বিক্ষোভ মানববন্ধনের পর কর্তৃপক্ষের নজর বলতে নিচে সাজানো বালির বস্তা, বাঁশ ও লাঠির সাঁটরিং ছাড়া কিছুই নেই।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়নবোর্ডের প্রধান সেচখালে ক্ষতিগ্রস্থ সেতুর মধ্যে কাতলাগাড়ী সেতু অন্যতম। গড়াই অববাহিকায় অবস্থতি কাতলাগাড়ী অঞ্চল থেকে শৈলকুপা ভায়া ঝিনাইদহ, মাগুরা ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী জেলার হাজারো মানুষের যাতায়াত এ সড়কে। নিয়মনীতিহীন হালকা, মাঝারী ও ভারি যানবাহনের চাপে রাস্তাঘাট ভাঙ্গার পাশাপাশি গোটা পরিবেশ এখন হুমকীর মুখে। কাতলাগাড়ী ডিগ্রি কলেজ, কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাতলাগাড়ী কওমী মাদ্রাসা, গোয়ালবারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌবন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকয়েকটি কিন্ডারগার্টেনে লেখাপড়া করে প্রায় ৫ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। রয়েছে সরকারি ও একাধিক বেসরকারি ব্যাংক, পুলিশ ক্যাম্প, বীমা এনজিওসহ বহু ফার্ণিচার কারখানা। বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগের কেন্দ্রে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সার্বক্ষনিক চলমান বাজারে যানজট লেগেই থাকে। বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত কাতলাগাড়ী গড়াই চরের বালি যায় দূর দূরান্তে। বালিবাহী ট্রাক, লাটা হাম্বার, হ্যারো, ড্রামট্রাকের শব্দ, ধুলি-ধোঁওয়া আর যানজটের কবলে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থের সাথে সাথে শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েই চলেছে। ধুঁলা-ময়লায় নষ্ট হচ্ছে বাজার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পন্য। এ বাজারের মধ্য দিয়ে চলমান পাউবোর প্রধান খাল। ভগ্নপ্রায় সেতুটি ব্যবহার করে দেদারছে চলছে ভারি যানবাহন দীর্ঘদিন আগেই ভেঙ্গেছে দুপাশের নিরাপত্তা ওয়াল সম্প্রতি সেতুর গার্ডার ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে।
বড় দূর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা ব্রীজ পূন:নির্মানের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেছে, অনলাইনে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হলেও তেমন অগ্রগতি নেই ব্রীজ নির্মানের। স্থানীয় সুধিজনের বক্তব্য শুধু বালিবাহী ট্রাকের কবলেই সেতুটি আজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যে কোন সময় সেতু ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন হতে পারে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সড়ক যোগাযোগ, জনভোগান্তি পৌঁছে যাবে চরমে। ব্রীজের নিচে বাঁশ কাঠের লাঠি ব্যবহার ও বালির বস্তা সাজিয়ে প্রাথমিক যে চেষ্টা করা হয়েছে তা নিতান্তই হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গত এক সপ্তাহের চিত্র আরো ভয়ঙ্কর যখন ট্রাক ব্রীজের উপর উঠছে ভয়ে সেতু থেকে দূরে সরে দাড়াচ্ছে মানুষ। তবুও ঝুঁকির বোঝা মাথায় নিয়েই চলছে বালি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব আর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। ব্রীজ সংলগ্ন টাঙ্গানো হয়নি সতর্কবার্তা কিংবা নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, বর্তমানে পাউবোর প্রকল্পে নতুন সেতু নির্মানের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। কাতলাগাড়ী জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু পূন:নির্মানের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে আগামী অর্থ বছরে অনুমোদন হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া গুরুত্ব বিবেচনায় ভোগান্তি লাঘবের জন্য এলজিইডি কিংবা পিআইও অফিস থেকে উক্ত সেতু নির্মানের প্রস্তাব আসলে পাউবো থেকে তাদেরকে দাপ্তরিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ সেতু দিয়ে বালি বহন ও ভারি যানচলাচলে নিষেধ থাকলেও প্রভাবশালী বালি ব্যবসায়ীগণ সেতুটির ঝুঁকি বাড়িয়েই চলেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাউবো কর্মকর্তা আরো জানান, বড় দূর্ঘটনা রোধে প্রাথমিকভাবে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সেতুর নিচে বালির বস্তা ব্যবহার করা হয়েছে।