টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ঝিনাইদহের শাকসবজির বাজার। গত দুই সপ্তাহের টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার আবাদকৃত মরিচসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত পানির নিচে চলে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সবজির দাম। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।
জেলার শহর ও শহরতলীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আসা ক্রেতারা কাঁচা মরিচের দাম শুনেই থমকে যাচ্ছেন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পাইকারি বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়, আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ৫৫-৬০ টাকায়।
ঝিনাইদহ সদর, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার অনেক কৃষক জানান, হঠাৎ টানা বর্ষণে তাদের মরিচ ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে পানিতে। পচে গেছে শিকড়। পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে অনেক ক্ষেতে। ফলন হয়নি বললেই চলে।
মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, ৪৫ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছিলাম। এখন সব পানির নিচে। গাছগুলো মরে গেছে। আগেও বৃষ্টি হতো, কিন্তু এতদিন পানি জমে থাকেনি। এই বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
কোটচাঁদপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা হযরত আলী জানান, সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে শহরের পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কিনেছেন ২৬০ টাকায়। তিনি বলেন, “আমাদেরও তো লাভ রাখতে হয়। তাই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম কমাতে পারছি না, কারণ আমরাও বেশি দামে কিনছি।”
একই কথা বলেন কালিগন্জ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন। তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে যে পটল ১৮ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেই পটল বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম তো এক লাফে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। গ্রাহকরা গালাগাল করে, কিন্তু আসলে আমাদেরও কিছু করার নেই।
শুধু কাঁচা মরিচই নয়, দাম বেড়েছে অন্যান্য সবজিরও। পাইকারি বাজারে এখন প্রতি কেজি পটল ২২ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, গোল কচু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে।
সবজির পাইকারি আড়ৎদার শামসুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে চাষিরা মাঠে সবজি তুলতে পারছেন না। অনেক ক্ষেতেই সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ কম। আর সরবরাহ কমলে তো দাম বাড়বেই।
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে এখনও কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু শহরের বাজারে পরিবহন খরচসহ নানা কারণে দাম কিছুটা বেশি পড়ে।
সদর উপজেলার বাসিন্দা গৃহিণী তহুরা খাতুন বলেন, ১৫ দিন আগেও যে মরিচ ৬০ টাকায় কিনেছি, সেটা এখন ৩০০ টাকা! এইভাবে চললে তো রান্নাঘরে মরিচই ঢুকবে না।
অন্য এক ক্রেতা নাহিদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি তো আগেও হয়েছে। এবার কেন এত দাম? দোকানদাররা বলছে ক্ষেত ডুবে গেছে, গাছ মরে গেছে। তাই দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার কি এসব দেখছে না?
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ মরিচ ও সবজির ক্ষেত আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমরা তালিকা করছি। সরকারি সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে মাঠের ফসল নষ্ট হলে বাজারে এর প্রভাব পড়বেই।
টানা বৃষ্টিতে শুধু চাষি নয়, বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। চাষিদের ক্ষতি যেমন দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে, তেমনি সাধারণ মানুষও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের নজরদারি ও কৃষকদের প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সবুজদেশ/এসএএস