ঢাকা ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ট্রিপল মার্ডার: কে এই চরমপন্থি নেতা হানিফ?

 

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পুর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার মো. হানিফ সহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একসাথে তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে জেলার শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মো. হানিফ হরিণাকুন্ডু উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের আহাদনগর গ্রামের রাহাজউদ্দিনের ছেলে, হানিফের শ্যালক ও শ্রীরামপুর গ্রামের উম্বাদ আলীর ছেলে লিটন এবং কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম। নিহতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত ছিলেন।

জানা যায়, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফ ৯০ দশকে হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ডাকাতির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে হড়িনাকুণ্ডুর নারানকান্দি এলাকায় বাওড় দখল করে মাছ চাষ করে আসছিল হানিফ। ২০১৪ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। আর ২০১৭ সালে ওই বাওড়ের মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন। সম্প্রতি বাওড় দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চরমপন্থি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এসব কারণে জাসদ গণবাহিনী তাকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হানিফের এক ভাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আরেক ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। হানিফ নিজেই হড়িনাকুণ্ডু উপজেলা মৎসজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বলে জানা যায়। এছাড়া নিহত অপর দুই ব্যক্তি জনযুদ্ধের সামরিক কমান্ডার হানিফের সহযোগী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হানিফের ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, আমার মেজো ভাই হানিফ। গতকাল আমি চুয়াডাঙ্গা পার্কে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার ভাবি বলছে যে তোমার ভাইয়ের নম্বরে কল যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। ভাইয়ের শ্যালকের ফোনও রিসিভ হচ্ছে না। পরে আমিও অনেকবার দিয়েছি রিসিভ হয়নি। এরপর ভাবির কাছে জিজ্ঞাসা করলাম কখন বের হয়েছে। তখন ভাবি বললো যে একটা ফোন এলো তারপর বাজার থেকে আসার কথা বলে বের হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার ভাই কোন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন সেটি তিনি জানেন না।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, হানিফ নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মোট ১৫টি মামলা ছিল। নিহত চরমপন্থি নেতা হানিফ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী ছিল।

তিনি আরো বলেন, ওই হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে জামিনে মুক্ত হন। হত্যার প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফ ও হত্যার দায় স্বীকার করা জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়দানকারীদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল এটা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সেই বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। আমরা এটা নিয়েও তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় হানিফ আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার শুরু করেন। তিনি মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে চরমপন্থি হানিফ রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের চেষ্টা করতে থাকে।

সাধরণ মানুষের ভাষ্যমতে, সন্ত্রাসী হানিফ কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাষ্টারসহ শাতাধীক মানুষকে গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে। এরমধ্যে ইজাল মাষ্টারকে হত্যার পর তার মাথা কেটে উঠানে ফুটবল খেলে। সে সময় বিষয়টি দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এদিকে, হানিফ সহ তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর জনৈক কালু পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। এ নিয়ে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।

সবুজদেশ/এসএএস

About Author Information

ঝিনাইদহে কলা বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় স্কুল শিক্ষক নিহত

ঝিনাইদহে ট্রিপল মার্ডার: কে এই চরমপন্থি নেতা হানিফ?

Update Time : ০৩:০৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পুর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার মো. হানিফ সহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একসাথে তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে জেলার শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মো. হানিফ হরিণাকুন্ডু উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের আহাদনগর গ্রামের রাহাজউদ্দিনের ছেলে, হানিফের শ্যালক ও শ্রীরামপুর গ্রামের উম্বাদ আলীর ছেলে লিটন এবং কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম। নিহতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত ছিলেন।

জানা যায়, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফ ৯০ দশকে হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ডাকাতির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে হড়িনাকুণ্ডুর নারানকান্দি এলাকায় বাওড় দখল করে মাছ চাষ করে আসছিল হানিফ। ২০১৪ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। আর ২০১৭ সালে ওই বাওড়ের মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন। সম্প্রতি বাওড় দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চরমপন্থি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এসব কারণে জাসদ গণবাহিনী তাকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হানিফের এক ভাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আরেক ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। হানিফ নিজেই হড়িনাকুণ্ডু উপজেলা মৎসজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বলে জানা যায়। এছাড়া নিহত অপর দুই ব্যক্তি জনযুদ্ধের সামরিক কমান্ডার হানিফের সহযোগী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হানিফের ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, আমার মেজো ভাই হানিফ। গতকাল আমি চুয়াডাঙ্গা পার্কে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার ভাবি বলছে যে তোমার ভাইয়ের নম্বরে কল যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। ভাইয়ের শ্যালকের ফোনও রিসিভ হচ্ছে না। পরে আমিও অনেকবার দিয়েছি রিসিভ হয়নি। এরপর ভাবির কাছে জিজ্ঞাসা করলাম কখন বের হয়েছে। তখন ভাবি বললো যে একটা ফোন এলো তারপর বাজার থেকে আসার কথা বলে বের হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার ভাই কোন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন সেটি তিনি জানেন না।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, হানিফ নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মোট ১৫টি মামলা ছিল। নিহত চরমপন্থি নেতা হানিফ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী ছিল।

তিনি আরো বলেন, ওই হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে জামিনে মুক্ত হন। হত্যার প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফ ও হত্যার দায় স্বীকার করা জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়দানকারীদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল এটা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সেই বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। আমরা এটা নিয়েও তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় হানিফ আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার শুরু করেন। তিনি মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে চরমপন্থি হানিফ রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের চেষ্টা করতে থাকে।

সাধরণ মানুষের ভাষ্যমতে, সন্ত্রাসী হানিফ কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাষ্টারসহ শাতাধীক মানুষকে গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে। এরমধ্যে ইজাল মাষ্টারকে হত্যার পর তার মাথা কেটে উঠানে ফুটবল খেলে। সে সময় বিষয়টি দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এদিকে, হানিফ সহ তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর জনৈক কালু পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। এ নিয়ে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।

সবুজদেশ/এসএএস