ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে প্রধান শিক্ষকের মাথা ফাটালেন নারী সহকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজের জন্য বরাদ্দ ইন্টারনেট সিম কার্ড কাউকে না বলে বাড়িতে নিয়ে ব্যবহারর করছিলেন সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন। জানতে পেরে সিম কার্ডটি ফেরত চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের মাথা ফাটিয়েছেন তিনি।

রোববার (৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা টি ঘটে। আহত শিক্ষক মনোয়ার হোসেনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে দাপ্তরিক কাজের জন্য রাউটার ও ইন্টারনেট সিম কার্ড দেওয়া হয়। সরকারিভাবেই প্রতিমাসে সিম রিচার্জ করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওয়াজ মাহফিল ছিল। সেসময় রাতে মাহফিল শুনতে গিয়ে অফিস কক্ষে ঢোকেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। দেখেন ইন্টারনেটের রাউটারে লাল বাতি জ্বলছে। পরদিন গিয়ে একই অবস্থা দেখে রাউটারের কাছে গিয়ে দেখেন সিম কার্ড খোলা।

একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুনকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিম কার্ড খুলে এনেছি। এরপর একাধিকবার ফেরত চাওয়া হলেও সিম কার্ডটি ফেরত দেননি রোকেয়া খাতুন। রোববার সকালে বিদ্যালয়ে সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে কেন সিম কার্ড ফেরত দেওয়া হলো না এবং সরকারি জিনিস কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছেন, তা রোকেয়া খাতুনের কাছে জানতে চান প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের টেবিলে থাকা কাঠের কলমদানি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন রোকেয়া খাতুন। এতে মাথার সামনের অংশ কেটে যায়। পরে পাশে থাকা একটি রড দিয়েও তাকে পুনরায় আঘাত করতে গেলে অন্য শিক্ষকরা থামিয়ে দেন।

ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত শিক্ষককে শাস্তির দাবিতে স্কুলে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আহত শিক্ষককে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষককে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ৩ নম্বর কক্ষে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারহানা শারমিন জানান, শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের মাথার ওপরের অংশে গভীর হয়ে কেটেছে। এক্স-রে করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে ভেতরে ও হাড়ে কী ধরনের ক্ষত হয়েছে।

এ বিষয়ে আহত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‌“বারবার দাপ্তরিক কাজের জন্য সিম কার্ড ফেরত চেয়েছি। কিন্তু সময়ক্ষেপণ করলেও ফেরত দেননি রোকেয়া খাতুন। কেন সিম বাড়ি নিয়ে গেলেন তা জানতে চাইলে বলেন, স্কুলের সিম কার্ডে অনেক ইন্টারনেট (মেগাবাইট ) আছে, তাই বাসায় কাজ করি। সকালে স্কুলে গিয়ে অন্য শিক্ষকদের সামনে বলি কেন সিম নিলেন কাউকে না জানিয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমার মাথায় আঘাত করেন।”

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুনকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, যা শুনেছেন ঠিক আছে।

স্কুলের সরকারি ইন্টারনেট সিম কার্ড কেন বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের জিনিস আমরা কীভাবে ব্যবহার করবো সেটা আমাদের বিষয়। সেটা বাইরে বলতে বাধ্য না বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধান শিক্ষককে একজন সহকারী শিক্ষক আঘাত করবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য না। স্কুলের সরকারি ইন্টারনেট সিম কার্ড বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন। এ ঘটনায় অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই সিম কার্ডটি স্কুলে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সবুজদেশ/এসএএস

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:২১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
১৭১ Time View

ঝিনাইদহে প্রধান শিক্ষকের মাথা ফাটালেন নারী সহকর্মী

আপডেট সময় : ০৭:২১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজের জন্য বরাদ্দ ইন্টারনেট সিম কার্ড কাউকে না বলে বাড়িতে নিয়ে ব্যবহারর করছিলেন সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন। জানতে পেরে সিম কার্ডটি ফেরত চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের মাথা ফাটিয়েছেন তিনি।

রোববার (৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা টি ঘটে। আহত শিক্ষক মনোয়ার হোসেনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে দাপ্তরিক কাজের জন্য রাউটার ও ইন্টারনেট সিম কার্ড দেওয়া হয়। সরকারিভাবেই প্রতিমাসে সিম রিচার্জ করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওয়াজ মাহফিল ছিল। সেসময় রাতে মাহফিল শুনতে গিয়ে অফিস কক্ষে ঢোকেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। দেখেন ইন্টারনেটের রাউটারে লাল বাতি জ্বলছে। পরদিন গিয়ে একই অবস্থা দেখে রাউটারের কাছে গিয়ে দেখেন সিম কার্ড খোলা।

একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুনকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিম কার্ড খুলে এনেছি। এরপর একাধিকবার ফেরত চাওয়া হলেও সিম কার্ডটি ফেরত দেননি রোকেয়া খাতুন। রোববার সকালে বিদ্যালয়ে সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে কেন সিম কার্ড ফেরত দেওয়া হলো না এবং সরকারি জিনিস কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছেন, তা রোকেয়া খাতুনের কাছে জানতে চান প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের টেবিলে থাকা কাঠের কলমদানি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন রোকেয়া খাতুন। এতে মাথার সামনের অংশ কেটে যায়। পরে পাশে থাকা একটি রড দিয়েও তাকে পুনরায় আঘাত করতে গেলে অন্য শিক্ষকরা থামিয়ে দেন।

ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত শিক্ষককে শাস্তির দাবিতে স্কুলে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আহত শিক্ষককে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষককে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ৩ নম্বর কক্ষে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারহানা শারমিন জানান, শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের মাথার ওপরের অংশে গভীর হয়ে কেটেছে। এক্স-রে করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে ভেতরে ও হাড়ে কী ধরনের ক্ষত হয়েছে।

এ বিষয়ে আহত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‌“বারবার দাপ্তরিক কাজের জন্য সিম কার্ড ফেরত চেয়েছি। কিন্তু সময়ক্ষেপণ করলেও ফেরত দেননি রোকেয়া খাতুন। কেন সিম বাড়ি নিয়ে গেলেন তা জানতে চাইলে বলেন, স্কুলের সিম কার্ডে অনেক ইন্টারনেট (মেগাবাইট ) আছে, তাই বাসায় কাজ করি। সকালে স্কুলে গিয়ে অন্য শিক্ষকদের সামনে বলি কেন সিম নিলেন কাউকে না জানিয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমার মাথায় আঘাত করেন।”

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুনকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, যা শুনেছেন ঠিক আছে।

স্কুলের সরকারি ইন্টারনেট সিম কার্ড কেন বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের জিনিস আমরা কীভাবে ব্যবহার করবো সেটা আমাদের বিষয়। সেটা বাইরে বলতে বাধ্য না বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধান শিক্ষককে একজন সহকারী শিক্ষক আঘাত করবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য না। স্কুলের সরকারি ইন্টারনেট সিম কার্ড বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন। এ ঘটনায় অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই সিম কার্ডটি স্কুলে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সবুজদেশ/এসএএস