ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে প্রবাসীর স্ত্রীকে ভূমিষ্ট হওয়া সন্তান দিয়ে চলে গেলেন অজ্ঞাত নারী

 

এক গর্ভবতী নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে গ্রামীণ বাজারে সড়কের পাশেই জন্ম নেয় ফুটফুটে ছেলে শিশু। এলাকাবাসী নবজাতক ও তার মাকে নিয়ে আশ্রয় দেয় একটি বাড়িতে। সেখানে তাদের সেবাযত্ন শেষে জানতে চাওয়া হয় পরিচয়। কিন্তু ওই মা নিজের ঠিকানা ও পরিচয় দেননি। পরে নবজাতক ছেলে সন্তানকে প্রবাসীর এক স্ত্রীর কাছে দিয়ে চলে গেছেন।

ঘটনাটি মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ পুরাতন বাজার এলাকায় ঘটেছে। ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে গাড়াগঞ্জের মধুপর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফজলুর করিমের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের কাছে রয়েছে। এদিন তারা রাত ৮টার দিকে ওই শিশুটিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ থাকায় শিশুটিকে পরিবারটির কাছেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ওই নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে সড়কের পাশেই জন্ম নেয় ছেলে শিশু। খবর পেয়ে এলাকার নারীরা নবজাতক ও তার মাকে বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সে বাড়িটির পরিবার স্বচ্ছল না হওয়ায় মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন তাদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের ঠিকানা ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে কোনো তথ্য দেননি। পরে ৩ ছেলে সন্তানের জননী ওই প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে নবজাতককে রেখে তিনি চলে যান।

প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের ভাষ্যমতে, ‘নবজাতকটির মা ডাক্তার দেখাতে এসেছিল। এসময় তার প্রসব ব্যথা উঠলে বাজার এলাকার সড়কের পাশেই জন্ম নেয় শিশুটি। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদেরকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে সেবাযত্ন করি। খবর পেয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করে। ওই মায়ের কাছে শিশুটির বাবা ও ঠিকানা জানতে চাইলে বাচ্চার বাবা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানান। কিন্তু ওনার বাড়ির ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের নাম বলতে থাকে। এমনকি তার পরিবারের মানুষের মোবাইল নাম্বার চাইলেও দেয়নি। ওই মহিলা নিজের কোনো নাম এমনকি ঠিকানাও বলেনি।’

আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি বলি আপনি বাচ্চা নিতে না চাইলে আমাকে দিয়ে যান। তখন সন্তানকে দিয়ে তিনি চলে যাওয়ার সময় বলেন-আপনি আমার বড় বোনের মতো কাজ করলেন। আপনি আমার খুব উপকার করলেন আমি মাঝেমধ্যে দেখতে আসবো।’

ওই মা যদি পরবর্তীতে নিজের সন্তানকে ফেরত নেওয়ার দাবি করেন এমন প্রশ্নে আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমি নিজের সন্তানের মতো শিশুটিকে রাখবো। সে তো চলে গেছে। সন্তানের প্রয়োজন হলে সে এভাবে আমাকে দিয়ে যেত না।’

এদিকে ওই মায়ের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। মনিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘ওই নারী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব হোসেনের দোকানে চিকিৎসা নিতে এসেছিল। আমরা ধারণা করছি নবজাতকের মা সুরাব ডাক্তারের পরিচিত কেউ।’

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব বলেন, ‘আমার দোকানের পাশেই শিশুটি জন্ম নেয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পাই। আমি ওই নারীকে চিনিনা।’

শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারিয়া তন্নি বলেন, ‘ শিশুটির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। রাত ৮টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি।’

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, ‘খবরটি আপনার (প্রতিবেদকের) মাধ্যমেই প্রথম শুনলাম। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

ভালো থাকতে চাইলে ধানের শীষে ভোট দিন: কোটচাঁদপুরে এম এ মজিদ

ঝিনাইদহে প্রবাসীর স্ত্রীকে ভূমিষ্ট হওয়া সন্তান দিয়ে চলে গেলেন অজ্ঞাত নারী

Update Time : ০৭:০৯:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

 

এক গর্ভবতী নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে গ্রামীণ বাজারে সড়কের পাশেই জন্ম নেয় ফুটফুটে ছেলে শিশু। এলাকাবাসী নবজাতক ও তার মাকে নিয়ে আশ্রয় দেয় একটি বাড়িতে। সেখানে তাদের সেবাযত্ন শেষে জানতে চাওয়া হয় পরিচয়। কিন্তু ওই মা নিজের ঠিকানা ও পরিচয় দেননি। পরে নবজাতক ছেলে সন্তানকে প্রবাসীর এক স্ত্রীর কাছে দিয়ে চলে গেছেন।

ঘটনাটি মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ পুরাতন বাজার এলাকায় ঘটেছে। ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে গাড়াগঞ্জের মধুপর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফজলুর করিমের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের কাছে রয়েছে। এদিন তারা রাত ৮টার দিকে ওই শিশুটিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ থাকায় শিশুটিকে পরিবারটির কাছেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ওই নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে সড়কের পাশেই জন্ম নেয় ছেলে শিশু। খবর পেয়ে এলাকার নারীরা নবজাতক ও তার মাকে বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সে বাড়িটির পরিবার স্বচ্ছল না হওয়ায় মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন তাদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের ঠিকানা ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে কোনো তথ্য দেননি। পরে ৩ ছেলে সন্তানের জননী ওই প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে নবজাতককে রেখে তিনি চলে যান।

প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের ভাষ্যমতে, ‘নবজাতকটির মা ডাক্তার দেখাতে এসেছিল। এসময় তার প্রসব ব্যথা উঠলে বাজার এলাকার সড়কের পাশেই জন্ম নেয় শিশুটি। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদেরকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে সেবাযত্ন করি। খবর পেয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করে। ওই মায়ের কাছে শিশুটির বাবা ও ঠিকানা জানতে চাইলে বাচ্চার বাবা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানান। কিন্তু ওনার বাড়ির ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের নাম বলতে থাকে। এমনকি তার পরিবারের মানুষের মোবাইল নাম্বার চাইলেও দেয়নি। ওই মহিলা নিজের কোনো নাম এমনকি ঠিকানাও বলেনি।’

আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি বলি আপনি বাচ্চা নিতে না চাইলে আমাকে দিয়ে যান। তখন সন্তানকে দিয়ে তিনি চলে যাওয়ার সময় বলেন-আপনি আমার বড় বোনের মতো কাজ করলেন। আপনি আমার খুব উপকার করলেন আমি মাঝেমধ্যে দেখতে আসবো।’

ওই মা যদি পরবর্তীতে নিজের সন্তানকে ফেরত নেওয়ার দাবি করেন এমন প্রশ্নে আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমি নিজের সন্তানের মতো শিশুটিকে রাখবো। সে তো চলে গেছে। সন্তানের প্রয়োজন হলে সে এভাবে আমাকে দিয়ে যেত না।’

এদিকে ওই মায়ের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। মনিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘ওই নারী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব হোসেনের দোকানে চিকিৎসা নিতে এসেছিল। আমরা ধারণা করছি নবজাতকের মা সুরাব ডাক্তারের পরিচিত কেউ।’

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব বলেন, ‘আমার দোকানের পাশেই শিশুটি জন্ম নেয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পাই। আমি ওই নারীকে চিনিনা।’

শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারিয়া তন্নি বলেন, ‘ শিশুটির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। রাত ৮টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি।’

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, ‘খবরটি আপনার (প্রতিবেদকের) মাধ্যমেই প্রথম শুনলাম। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’

সবুজদেশ/এসএএস