ঝিনাইদহে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ৪ লাখ টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা নার্সিং হোম এন্ড নূরজাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতি রোকসানা খাতুনের (২৫) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর ) মধ্যরাতে এ ঘটনায় ক্লিনিক মালিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত প্রসূতি রোকসানা (২৫) উপজেলার ১নং সাধুহাটি ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামের সল্টু মিয়ার মেয়ে।
স্বজনদের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রোকসানাকে সিজারের জন্য ডাকবাংলা নার্সিং হোম এন্ড নূরজাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন তিনি। অপারেশনের কয়েক ঘন্টা পর হাসপাতাল কতৃপক্ষ রোকসানার অবস্থা ভালো নেই বলে জানায়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঝিানইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার কথাও বলেন তারা। কিন্ত ঐ হাসপাতালেই রোকসানা মারা যাওয়ার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত রোকসনাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগীদের সাথে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা করা হয়।
রোকসানার ছোট ভাই শিহাব ও বোন লিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমরা দ্বিতীয় সিজারের জন্য কাজলের ক্লিনিকে গেলে তারা সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোকসনাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যান এবং অপারেশন করেন। অপারেশনের প্রায় ১ ঘন্টা পর তাকে বেডে নিয়ে আসে। বেডে রাখার পরপর তার খুব খিচুনি উঠে এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। একপর্যায়ে ক্লিনিকের ডাক্তারকে ডাকলে তিনি একটা ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রোকসানা।
রোকসানার স্বামী শিমুল বলেন, আমার স্ত্রীকে তারা হত্যা করেছে। আমার দুই ছেলে, বড় ছেলে ইয়াসিন ইসলাম ইসাত তার বয়স প্রায় আট বছর আর একজনের বয়স মাত্র দুই দিন। এখন আমি কি করবো। ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তারদের শাস্তি চায়।
এ বিষয়ে ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজলের বক্তব্য জানতে তাঁকে একাধিক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
অপারেশনের ডাক্তার রাকিবুল হাসান বলেন, ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একজন রোগী মারা গেছে বলে শুনেছি। কিন্তু এটা পোস্ট অপারেটিভের কোন ঝামেলায় হইয়তো মারা গেছে। এ্যানেস্থাসিয়ায় কোন সমস্যা ছিল না।
ডাকবাংলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান কামাল বলেন, বিষয়টি সকালে শুনেছি এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের এসআই ও টু আইসি বসে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় মিমাংসা করেছে। নগদ সত্তর হাজার আর এক মাসের সময় নিয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন বলেন, আমি ছুটিতে আছি। আগামীকাল রোববার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা প্রমাণ হলে ওই ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হবে।
সবুজদেশ/এসএএস