ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের সাথে দু:ব্যবহার, বিভিন্ন স্টেশন থেকে মাসিক অর্থ আদায়, সরকারী দপ্তরে চিঠি ইস্যু নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঝিনাইদহে যোগদানের পর থেকেই এসব কাজে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ফায়ার স্টেশন গুলোর স্টেশন অফিসার থেকে শুরু করে ফায়ার ম্যানরা।
জানা যায়, নিজাম উদ্দিন উপ-সহকারী পরিচালক হিসাবে ঝিনাইদহে যোগদান করেন ৭/৭/১৯ তারিখে। যোগদানের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন স্টেশনে ফোন দিয়ে মাসিক মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। স্টেশন গুলোর অগ্নিনির্বাপন গাড়ীর টার্ন আউটের উপর ভিত্তি করে জ্বালানী উত্তোলনের অনুমোদনের সময় তিনি ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও হরিনাকুন্ডু স্টেশনে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা চান।
গত আগস্ট মাসের শুরুতে এবং চলতি মাসের শুরুতে বেশ কয়েকটি স্টেশন এ টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়ো ফায়ার সার্ভিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুত্রে জানা যায়, উপসহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, প্রমোশন সংক্রান্ত বিষয়ে সচিবালয়ে দু:ব্যবহার সহ নানা অভিযোগে ইতোপূর্বে দুটি বিভাগীয় মামলা হয়েছিল এবং স¤প্রতি আরো একটি মামলা হয়েছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষক আসাদুর রহমান জানান, গত মাসে তাদের আনসার সদস্যদের পিডিটি ওয়ার্ড প্লাটুন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষনে ফায়ার সার্ভিসের একটি অংশ ছিল। এই অংশের জন্য তারা উপজেলা স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদকে চিঠি ইস্যু করেন। এরপরেই ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন তাকে ফোন দিয়ে বলেন আপনি উপজেলাতে কেন চিঠি ইস্যু করেছেন। আমাকে চিঠি দেবেন আমি প্রশিক্ষণ করাবো। আনসার কর্মকর্তা আরো জানান, এটি খুব দু:খ জনক। উপজেলা প্রশিক্ষণ উপজেলা ফায়ার স্টেশনের অফিসারকে দিয়ে করাবেন। কেন তিনি জেলা ডিএডি’কে চিঠি দিবেন। একজন দায়িত্বশীল ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফোন দিয়ে এমন কথা বলবেন এটি আশা করেননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা জানান, আমাদের অতিষ্ট করে ফেলছে নতুন যোগদানকৃত ডিএডি নিজাম উদ্দিন স্যার। আমাদের কাছেও মাসিক টাকা দাবি করছেন। আমরা আসলে টাকাটা তাকে কোথা থেকে দেব। এটা বলার পরেও জ্বালানী উত্তোলনের অনুমোদন নিতে গেলে টাকা দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের স্টেশন চালানো খরচও থাকছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ফায়ারম্যান জানান, ডিএডি স্যার আমাদের সাথে ধমকের সুরে কথা বলেন। এতে খুব খারাম লাগে। আমরা ফায়ারম্যান বলে কি তিনি এমন আচরণ করবেন।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার চাকুরী জীবনে এখন পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। স্টেশনে টাকা চাওয়া কিংবা খারাপ আচরনের বিষয়ে আপনাদের কাছে যারা অভিযোগ দিয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এদিকে ঝিনাইদহের দায়িত্বে থাকা যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, স্টেশন থেকে টাকা নিয়ে থাকলে কিংবা টাকা দাবি করলে এটা অবশ্যই অপরাধ। সেবামুলক এই ফায়ার সার্ভিসে এমন কোন বিধান নেই যে ডিএডি’কে টাকা দিতে হবে। তিনি জানান, কোন ফায়ার প্রশিক্ষনের জন্য ডিএডি’কে চিঠি ইসূ করার কোন বিধান নেই। উপজেলার প্রশিক্ষনের জন্য উপজেলা স্টেশন অফিসারকেই চিঠি ইসু করতে হবে। তবে এসকল অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান।