ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে বিচার না পেয়ে ভিক্ষার ঘোষণা তরমুজ চাষীর!

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

করোনাকালের এই দুর্বিষহ অবস্থায় বিচার না পেয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়লেন মিঠু খাঁ নামে এক প্রান্তিক চাষি। তার তিন বিঘা জমির ধরন্ত তরমুজ ক্ষেত রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা সম্পূর্ণ কেটে দিলেও তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ!

পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ক্ষতির মুখে ইউএনও, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, কৃষি অফিস-সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও পাননি কোনো প্রতিকার। ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হতে চললেও পাশে কাউকে না পেয়ে ঝিনাইদহের খামারাইল গ্রামের এই কৃষক চাষ ছেড়ে ভিক্ষা করে খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন!

উন্নত জাতের সবুজ তরতাজা গাছগুলোর বোঁটায় বোঁটায় ঝুলে ছিল হাজার হাজার কালো তরমুজ (খরমুজ)। বোঁটা ছিঁড়ে মাটিতে পড়ার ভয়ে জাল জড়িয়ে রাখা হয়েছিল। কঠিন পরিশ্রম করার পর দরিদ্র কৃষক আমিরুল ইসলাম অপেক্ষায় ছিলেন এই তরমুজ বিক্রি করে কিছু পয়সা পাবেন, যা দিয়ে চাষের দেনা পরিশোধের পাশাপাশি করোনাকালের দুর্দিনে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তার সব স্বপ্ন ভেঙে যায়। গত ২৮ এপ্রিল ক্ষেতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক আমিরুল। গাছগুলো টেনে টেনে দেখেন সব গাছের গোড়া থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। এভাবে দুটি ক্ষেতে তার তিন বিঘা জমির সব তরমুজ গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের খোদাবক্সের ছেলে কৃষক আমিরুল ইসলাম মিঠু খাঁ, মাঠে তার চাষযোগ্য চার বিঘা জমি। তবে যেসব ফসল হতো তা দিয়ে সন্তান আর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তাই চাষে একটু পরিবর্তন এনে তরমুজ লাগিয়ে ভালো লাভের আশা করেছিলেন। ঋণসহ ধারদেনায় খরচ হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টাকা।

১০-১৫ দিন পরই তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করা যেত। বাজারে বর্তমানে এই তরমুজের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসেবে তার ক্ষেতের তরমুজ আনুমানিক পাঁচ-ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। এখন দেনার দায়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই বলে জানান হতাশ চাষি আমিরুল ইসলাম মিঠু।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলছেন, এলাকার একটি বাড়ির রাস্তা নিয়ে স্থানীয়দের বিরোধে গ্রামের একটি দুর্বৃত্ত চক্র এটি করতে পারে, তবে বিষয়টি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার দেখবেন বলে আশ্বস্ত করায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করেনি।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি খুবই দুঃখজনক, তার ধরন্ত তরমুজ ক্ষেত সবই কেটে দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক এই চাষিকে সরকারি প্রণোদনায় সহায়তা করা হবে, তবে সময় লাগবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস।

About Author Information
আপডেট সময় : ০১:১৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মে ২০২০
৮৪৭ Time View

ঝিনাইদহে বিচার না পেয়ে ভিক্ষার ঘোষণা তরমুজ চাষীর!

আপডেট সময় : ০১:১৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মে ২০২০

ঝিনাইদহঃ

করোনাকালের এই দুর্বিষহ অবস্থায় বিচার না পেয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়লেন মিঠু খাঁ নামে এক প্রান্তিক চাষি। তার তিন বিঘা জমির ধরন্ত তরমুজ ক্ষেত রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা সম্পূর্ণ কেটে দিলেও তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ!

পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ক্ষতির মুখে ইউএনও, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, কৃষি অফিস-সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও পাননি কোনো প্রতিকার। ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হতে চললেও পাশে কাউকে না পেয়ে ঝিনাইদহের খামারাইল গ্রামের এই কৃষক চাষ ছেড়ে ভিক্ষা করে খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন!

উন্নত জাতের সবুজ তরতাজা গাছগুলোর বোঁটায় বোঁটায় ঝুলে ছিল হাজার হাজার কালো তরমুজ (খরমুজ)। বোঁটা ছিঁড়ে মাটিতে পড়ার ভয়ে জাল জড়িয়ে রাখা হয়েছিল। কঠিন পরিশ্রম করার পর দরিদ্র কৃষক আমিরুল ইসলাম অপেক্ষায় ছিলেন এই তরমুজ বিক্রি করে কিছু পয়সা পাবেন, যা দিয়ে চাষের দেনা পরিশোধের পাশাপাশি করোনাকালের দুর্দিনে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তার সব স্বপ্ন ভেঙে যায়। গত ২৮ এপ্রিল ক্ষেতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক আমিরুল। গাছগুলো টেনে টেনে দেখেন সব গাছের গোড়া থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। এভাবে দুটি ক্ষেতে তার তিন বিঘা জমির সব তরমুজ গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের খোদাবক্সের ছেলে কৃষক আমিরুল ইসলাম মিঠু খাঁ, মাঠে তার চাষযোগ্য চার বিঘা জমি। তবে যেসব ফসল হতো তা দিয়ে সন্তান আর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তাই চাষে একটু পরিবর্তন এনে তরমুজ লাগিয়ে ভালো লাভের আশা করেছিলেন। ঋণসহ ধারদেনায় খরচ হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টাকা।

১০-১৫ দিন পরই তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করা যেত। বাজারে বর্তমানে এই তরমুজের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসেবে তার ক্ষেতের তরমুজ আনুমানিক পাঁচ-ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। এখন দেনার দায়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই বলে জানান হতাশ চাষি আমিরুল ইসলাম মিঠু।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলছেন, এলাকার একটি বাড়ির রাস্তা নিয়ে স্থানীয়দের বিরোধে গ্রামের একটি দুর্বৃত্ত চক্র এটি করতে পারে, তবে বিষয়টি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার দেখবেন বলে আশ্বস্ত করায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করেনি।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি খুবই দুঃখজনক, তার ধরন্ত তরমুজ ক্ষেত সবই কেটে দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক এই চাষিকে সরকারি প্রণোদনায় সহায়তা করা হবে, তবে সময় লাগবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস।