ঝিনাইদহে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি, জনমনে আতঙ্ক
ঝিনাইদহে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। প্রায়ই শোনা যাচ্ছে বাসাবাড়ি, অফিস কিংবা দোকানে চুরি করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে চোরচক্র। এছাড়াও সন্ধ্যার পর শহর ও গ্রামের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সবশেষ গতকাল শুক্রবার ভোররাতে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের বিপ্লব সাহার বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ সোনা নিয়ে যায় ডাকাতদল।
গেল সপ্তাহে কোটচাঁদপুরের ঘাঘা গ্রামে বোম বিস্ফোরণ করে সুবল প্রামাণিকের বাড়িতে ডাকাতি করা হয়। এর আগে শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার থেকে বিকাশ জোয়ার্দ্দারের মুদি দোকানের সাটার কেটে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। একই দিন নাগিরাট গ্রাম থেকে রবিউল ইসলাম নামের এক ভ্যানচালকের বাড়ি থেকে ভ্যান চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার একটি হার্ডওয়ারের দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল নিয়ে গেছে।
এসব ঘটনায় থানা পুলিশ তেমন কিছুই জানেন না।
এদিকে, পুলিশের হিসেবে গত দুই মাসে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মাত্র ১৬ টি চুরি-ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। তবে সূত্রের দাবি, সব চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। ঝামেলা বাড়ার আশংকা থেকে অনেকে পুলিশকে জানাতে চায় না।
তবে ফেসবুক কিংবা পরিচিতজনের কাছে চুরি-ছিনতাইয়ের কথা জানান। পুলিশকে না জানানোয় থানায় এর সুনির্দিষ্ট রেকর্ড থাকে না। এ কারণে পুলিশের খাতায় যে হিসেব রয়েছে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ি ও বাসাবাড়ির মালিকেরা।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মহেশপুরের সড়কে গাছ ফেলে বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এছাড়া শহরের কাঞ্চনপুর এলাকার দিনমজুর গোলাম মোস্তফা তাঁর বাইসাইকেল রেখে পাশের দোকানে ওএমএসএসের চাউল তুলতে যান। মুহুর্তের মধ্যে তাঁর বাইসাইকেল উধাও হয়ে যায়। একই পাড়ার আব্দুর রশিদের বাড়ির মিটার থেকে তিন কয়েল বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়ে গেছে চোরচক্র।
এর আগে, শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের নেপাল কুণ্ডুর বাড়ির জানালা কেটে সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যায়। কালীগঞ্জের কমলাপুর গ্রামের বাবর আলী বিশ্বাসের গোয়াল থেকে ৩টি উন্নত জাতের গরু চুরি করে নিয়ে যায়। শৈলকুপার রয়েড়া গ্রামের এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৪৫ টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। গত ২ অক্টোবর শৈলকুপার কৌপাড়া এলাকা থেকে এক ব্যবসায়িকে কুপিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৩টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে, রয়েড়া বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ি আক্কাস আলীর মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সদরের গোয়ালপাড়া এলাকা থেকে আজির আলীর ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয় দুবৃর্ত্তরা।
এ ভাবে সারা জেলায় চোর-ডাকাতের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। সংসারে অভাব অনটন ও আর্থিক মন্দার মধ্যে জেলাব্যাপী এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। পুলিশ মাঝে মাঝে চুরি ডাকাতের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতি স্বভাবিক হওয়ার লক্ষণ নেই।
জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলনে, ‘গত কয়েক মাসে জেলাজুড়ে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্ধেগ ছড়াচ্ছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও এদিকেও তাদের নজর দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুর রহমান বলেন, ‘চোর-ডাকাতের উপদ্রব রুখতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এত বড় জেলায় চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে শুধু পুলিশের অভিযান বা টহল কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ও কমিউনিটি পুলিশের সম্পৃক্ততা জরুরি। চুরির ঘটনায় ইতিমধ্যে অনেককে আটক করা হয়েছে।’
সবুজদেশ/এসএএস