রাত পোহালেই পবিত্র রমজান মাস শুরু। এর আগেই অদৃশ্য কারণে ঝিনাইদহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে মিলছেনা এক লিটার, দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল। তবে খোলা তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, অধিক মুনাফার জন্যই ব্যবসায়ীরা বোতলজাত সয়াবিন ভেঙে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছে। এদিকে রমজানকে সামনে রেখে খেজুর, শসা, বেগুন ও লেবুর চড়া দাম লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার মনিটরিং না থাকায় সয়াবিন তেলের বোতলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে ইচ্ছেমত দাম বাড়াচ্ছে নানা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের।
সরেজমিনে জেলা শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে গিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও আধা লিটার, এক লিটার ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে পাওয়া যেত। কিন্তু রোজা সামনে রেখে হঠাৎ করেই বাজার থেকে বোতলজাত তেল উধাও হয়ে গিয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, বোতলজাত সয়াবিন তেল ভেঙে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। খোলা সয়াবিন তেলের সঙ্গে কম দামের পামওয়েল মেশানো হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা।
নাজমুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলাম রমজানের বাজার একবারে করব। কিন্তু বাজারে কোনো সয়াবিন তেলের বোতল নাই। সবই খোলা তেল। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পারে। রোজার মাস এলেই ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য কেমন অমানবিক হয়ে ওঠে।
সয়াবিন তেলের সঙ্গে কমদামি পামওয়েল মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রির পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত কিনা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক একজন ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার জন্য নানা রকম কৌশল করে। এবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। কারণ তাতে পামওয়েল মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
আঞ্জুয়ারা বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, একদিন পরেই রোজা শুরু। গতকালও বেগুনের দাম কম ছিল। আজ বেগুনের দাম বাড়তি। ১ হালি লেবুর দাম ৬০/৭০ টাকা। যা দুদিন আগেও ৩০/৩৫ টাকা হালি ছিল। ধনিয়া পাতা, গাজর, শসার দামও বেড়েছে। বাজারে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই। লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভভ নয়।
এদিকে ভোজ্যতেলের সংকটের বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। নতুন কোনো বোতলজাত তেল আসেনি। যে কারণে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
খোলা সয়াবিন তেলে ভেজাল দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। তেলে ভেজাল দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোক্তারাও সচেতন। খুচরা পর্যায়ে এরকম হয় কিনা জানা নেই। তবে পাইকারি পর্যায়ে তেলে ভেজাল মেশানোর কোনো সুযোগ নেই।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রমজান মাসে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের মান নিশ্চয়ণসহ সার্বিক তদারকি জোরদার করা হবে। জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছি।
সবুজদেশ/এসএএস