ঢাকা ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে মদপানে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী নন্দিনির মর্মান্তিক পরিণতি

এক মর্মান্তিক ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। অতিরিক্ত মদ্যপানে অকাল মৃত্যু হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রীর। দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন ঝিনাইদহে মামাবাড়িতে এসে মদ্যপানে নন্দিনী সরকার (১৮) নামে এক মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নন্দিনী সরকার মানিকগঞ্জ জেলার গিলান্দ গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

নন্দিনী সরকারের চাচা গণেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রতিবছর পূজায় ভাতিজিসহ সপরিবারে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভান্ডারিয়া গ্রামে আসি। এবারও সপ্তমীর দিন এখানে এসেছিলাম। বিজয়া দশমীর দিনে বিকেলে নন্দিনী তার বান্ধবীদের সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনে যায়। এ সময় সে তাদের সঙ্গে মদ পান করে। বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২টার দিকে তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে ওই রাতই তাকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর শনিবার রাতে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। নন্দিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বলে জানান গণেশ চন্দ্র সরকার।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, শনিবার রাতে নন্দিনী নামে এক তরুণী মদ পানে অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান জানান, শৈলকুপায় মামাবাড়ি বেড়াতে এসে মদ্যপানে নন্দিনী নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে বলে জানান তিনি।

মামাবাড়িতে উৎসবের বদলে বিষাদ: যে রাতে সব শেষ!

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও পূজার ছুটিতে শৈলকুপার ভান্ডারীপাড়া এলাকায় তার মামা বিজয় সরকারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন নন্দিনি। উৎসবের আমেজে থাকার কথা থাকলেও, পরিস্থিতি নেয় এক ভয়াবহ মোড়।

নিহতের কাকা গণেশ চন্দ্র সরকার জানান, পূজার দিন রাতে অতিরিক্ত মদ্যপানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নন্দিনি। দ্রুত তাকে শৈলকুপা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে রেফার্ড করা হয়।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল রাত সাড়ে ৩টার সময় মেডিকেল শিক্ষার্থী তুলি (নন্দিনি সরকার) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মদ্যপানের ‘নেশা’ কেড়ে নিল স্বপ্নের জীবন!

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী, যিনি দেশের সেরা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— মেধাবী এই ছাত্রীর জীবনে এমন অন্ধকার নেমে এলো কেন? কারা ছিল তার সাথে? পূজার মতো পারিবারিক অনুষ্ঠানে কীভাবে তিনি অতিরিক্ত মদ্যপানের শিকার হলেন?

এই ঘটনায় নন্দিনির পরিবার গভীর শোক ও স্তম্ভিত অবস্থায় রয়েছে। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সমাপ্তি ঘটল এক নিমিষেই। পুরো ঘটনাটি এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে এটি ভাইরাল হয়ে উঠেছে। পুলিশ ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

নেটিজেনদের প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্ম কি তাহলে ভুলের পথে যাচ্ছে? এমন একটি মেধাবী প্রাণ এভাবে ঝরে গেল, এর দায় কার?

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

ঝিনাইদহে মদপানে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী নন্দিনির মর্মান্তিক পরিণতি

Update Time : ১০:৪৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

এক মর্মান্তিক ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। অতিরিক্ত মদ্যপানে অকাল মৃত্যু হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রীর। দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন ঝিনাইদহে মামাবাড়িতে এসে মদ্যপানে নন্দিনী সরকার (১৮) নামে এক মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নন্দিনী সরকার মানিকগঞ্জ জেলার গিলান্দ গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

নন্দিনী সরকারের চাচা গণেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রতিবছর পূজায় ভাতিজিসহ সপরিবারে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভান্ডারিয়া গ্রামে আসি। এবারও সপ্তমীর দিন এখানে এসেছিলাম। বিজয়া দশমীর দিনে বিকেলে নন্দিনী তার বান্ধবীদের সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনে যায়। এ সময় সে তাদের সঙ্গে মদ পান করে। বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২টার দিকে তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে ওই রাতই তাকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর শনিবার রাতে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। নন্দিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বলে জানান গণেশ চন্দ্র সরকার।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, শনিবার রাতে নন্দিনী নামে এক তরুণী মদ পানে অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান জানান, শৈলকুপায় মামাবাড়ি বেড়াতে এসে মদ্যপানে নন্দিনী নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে বলে জানান তিনি।

মামাবাড়িতে উৎসবের বদলে বিষাদ: যে রাতে সব শেষ!

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও পূজার ছুটিতে শৈলকুপার ভান্ডারীপাড়া এলাকায় তার মামা বিজয় সরকারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন নন্দিনি। উৎসবের আমেজে থাকার কথা থাকলেও, পরিস্থিতি নেয় এক ভয়াবহ মোড়।

নিহতের কাকা গণেশ চন্দ্র সরকার জানান, পূজার দিন রাতে অতিরিক্ত মদ্যপানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নন্দিনি। দ্রুত তাকে শৈলকুপা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে রেফার্ড করা হয়।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল রাত সাড়ে ৩টার সময় মেডিকেল শিক্ষার্থী তুলি (নন্দিনি সরকার) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মদ্যপানের ‘নেশা’ কেড়ে নিল স্বপ্নের জীবন!

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী, যিনি দেশের সেরা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— মেধাবী এই ছাত্রীর জীবনে এমন অন্ধকার নেমে এলো কেন? কারা ছিল তার সাথে? পূজার মতো পারিবারিক অনুষ্ঠানে কীভাবে তিনি অতিরিক্ত মদ্যপানের শিকার হলেন?

এই ঘটনায় নন্দিনির পরিবার গভীর শোক ও স্তম্ভিত অবস্থায় রয়েছে। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সমাপ্তি ঘটল এক নিমিষেই। পুরো ঘটনাটি এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে এটি ভাইরাল হয়ে উঠেছে। পুলিশ ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

নেটিজেনদের প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্ম কি তাহলে ভুলের পথে যাচ্ছে? এমন একটি মেধাবী প্রাণ এভাবে ঝরে গেল, এর দায় কার?

সবুজদেশ/এসএএস