ঢাকা ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই দুই কোটি নিয়ে উধাও!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:২৭:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • ২৫৮ বার পড়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি ভুইফোড় এনজিও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে হা-হুতাশ বড়ছে। টাকার শোকে অনেকে কাহিল। কেও কেও সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেনা করে ‘সিরাক বাংলাদেশ’ এনজিওতে টাকা লগ্নি করেছিলেন।

তাদেরই একজন হচ্ছে শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার। তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে ক্ষ্রদ্র ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন অফিসের ভিতরে লাইট জ¦ললেও অফিসের প্রধান ফটকে তালা। পরে জানতে পারেন এনজিও উধাও।

শুধু মৌসুমী আক্তারই না, এরকম শত শত স্বল্প আয়ের মানুষ হা হুতাশ করছেন অফিসের সামনে দাড়িয়ে। তাদের ভাষ্য, জামানত হিসেবে আনুমানিক দুই কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছে এনজিওটির প্রতারক সদস্যরা।

অভিযোগ উঠেছে, পৌর এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে এনজিওর নামে এমন আর্থিক লেনদেন করলেও নজরদারী ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ এ ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও শুধু সমিতির নাম ঠিকানা নিয়েই বিদায় করেন তাদের।

কবিরপুরের মৌসুমী আক্তার বলেন, প্রবাসী আকবর আলীর বাসায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসেই তাদের এক নারী সদস্যসহ ১০/১২ জন পাড়ায় পাড়ায় দ্রুত ঋণ দেওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঋণের সুবিধা ছিল অন্য এনজিও থেকে অনেক সহজ। এ কারনে তিনি তার স্বামীর ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা রাখেন তিনি। কিন্ত সোমবার জানতে পারেন এনজিওটি টাকা নিয়ে উধাও।

৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের মসলেম মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম, নাদপাড়া গ্রামের বজলু মোল্যা ও চরমৌকুড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, তারা প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জামানত রেখেছিলেন সিরাক বাংলাদেশে। কিন্ত তারা লোন না দিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে।

সাতগাছি গ্রামের ফিরোজ বিশ্বাস জানান, তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দেন। কিন্ত লোন না দিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি। তিনি আরো বলেন, তাদের মত স্বল্প আয়ের কম পক্ষে ৩’শ সদস্য এ প্রতারনার শিকার হয়েছেন। ‘

সিরাক বাংলাদেশ’ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। সিরাক বাংলাদেশ। ক্ষুদ্রঋণ দান ও কুঠির শিল্প প্রকল্প। যার সনদ নং০০৩৫৬-০০৮৯৪-০০০৯১। ঋণের পাশ বইয়ে দেখা গেছে ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’’ এবং কিছু শর্তের কথা।

বাসার মালিক প্রবাসী আকবর আলীর কন্যা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাসা সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ভাড়া নেয়। তাদের সাথে চলতি মাসের ৫ তারিখে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, সিরাক বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিস থেকে তারা তাকে টেলিফোনে জানান তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নেই। শৈলকুপাতে যারা এ কাজটি করেছে তারা প্রতারক চক্র।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরাক বাংলদেশ নামের এনজিও’র কোন গ্রাহক তাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, শৈলকুপাতে সিরাক বাংলাদেশ নামের কোন এনজিও ঋণ কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধিত নেই।

Tag :

ঝিনাইদহে শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই দুই কোটি নিয়ে উধাও!

Update Time : ০৬:২৭:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি ভুইফোড় এনজিও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে হা-হুতাশ বড়ছে। টাকার শোকে অনেকে কাহিল। কেও কেও সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেনা করে ‘সিরাক বাংলাদেশ’ এনজিওতে টাকা লগ্নি করেছিলেন।

তাদেরই একজন হচ্ছে শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার। তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে ক্ষ্রদ্র ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন অফিসের ভিতরে লাইট জ¦ললেও অফিসের প্রধান ফটকে তালা। পরে জানতে পারেন এনজিও উধাও।

শুধু মৌসুমী আক্তারই না, এরকম শত শত স্বল্প আয়ের মানুষ হা হুতাশ করছেন অফিসের সামনে দাড়িয়ে। তাদের ভাষ্য, জামানত হিসেবে আনুমানিক দুই কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছে এনজিওটির প্রতারক সদস্যরা।

অভিযোগ উঠেছে, পৌর এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে এনজিওর নামে এমন আর্থিক লেনদেন করলেও নজরদারী ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ এ ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও শুধু সমিতির নাম ঠিকানা নিয়েই বিদায় করেন তাদের।

কবিরপুরের মৌসুমী আক্তার বলেন, প্রবাসী আকবর আলীর বাসায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসেই তাদের এক নারী সদস্যসহ ১০/১২ জন পাড়ায় পাড়ায় দ্রুত ঋণ দেওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঋণের সুবিধা ছিল অন্য এনজিও থেকে অনেক সহজ। এ কারনে তিনি তার স্বামীর ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা রাখেন তিনি। কিন্ত সোমবার জানতে পারেন এনজিওটি টাকা নিয়ে উধাও।

৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের মসলেম মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম, নাদপাড়া গ্রামের বজলু মোল্যা ও চরমৌকুড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, তারা প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জামানত রেখেছিলেন সিরাক বাংলাদেশে। কিন্ত তারা লোন না দিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে।

সাতগাছি গ্রামের ফিরোজ বিশ্বাস জানান, তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দেন। কিন্ত লোন না দিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি। তিনি আরো বলেন, তাদের মত স্বল্প আয়ের কম পক্ষে ৩’শ সদস্য এ প্রতারনার শিকার হয়েছেন। ‘

সিরাক বাংলাদেশ’ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। সিরাক বাংলাদেশ। ক্ষুদ্রঋণ দান ও কুঠির শিল্প প্রকল্প। যার সনদ নং০০৩৫৬-০০৮৯৪-০০০৯১। ঋণের পাশ বইয়ে দেখা গেছে ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’’ এবং কিছু শর্তের কথা।

বাসার মালিক প্রবাসী আকবর আলীর কন্যা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাসা সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ভাড়া নেয়। তাদের সাথে চলতি মাসের ৫ তারিখে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, সিরাক বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিস থেকে তারা তাকে টেলিফোনে জানান তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নেই। শৈলকুপাতে যারা এ কাজটি করেছে তারা প্রতারক চক্র।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরাক বাংলদেশ নামের এনজিও’র কোন গ্রাহক তাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, শৈলকুপাতে সিরাক বাংলাদেশ নামের কোন এনজিও ঋণ কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধিত নেই।