ঝিনাইদহে সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়েছে পুলিশ
ঝিনাইদহের কিছু পুলিশ সদস্য সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। কিছুতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের সদস্যরা নানা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ থানা ফাঁড়িতে যোগদান করছে। কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা তদারকিতে পরিস্থিতি এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার আরও দুই পুলিশ কনসস্টেবল ৩৬ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ ধরা পড়েছে। এর আগে ১২০১ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলের চালানসহ র্যাবের জালে ধরা পড়েছিল সদর থানার এসআই সাজ্জাদুর রহমানসহ তিনজন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. রবিউল ইসলাম জানান, ৪ জানুয়ারি দুপুরে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিনাইদহ ভেটিরিনারি কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে থেকে আটক করা হয় কনস্টেবল সাকিল আহম্মেদ ও নিশান আলীকে। তিনি আরও জানান, তাদের কাছ থেকে মোটরসাইকেলে বিশেষ ভাবে লটকানো ৩৬ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। রোববার আদালতের মাধ্যমে দুজনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে র্যাব সদস্যরা সদর থানার এসআই সাজ্জাদুর রহমানসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১২০১ বোতল ভাতীয় ফেনসিডিল। জব্দ করা হয় যশোর গ-১১-০০৮১ নাম্বার একটি প্রাইভেট কার। র্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের ডিএডি নায়েব সুবেদার মে. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই সাজ্জাদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এসআই ইদ্রিস আলীকে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে লোক দেখানো পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। সাজ্জাদুর রহমান (৪৫) পোশাকের আড়ালে দীর্ঘ দিন ধরে মাদকের ব্যবসা করে আসছে। পুলিশ কনস্টেবল থেকে পর্যায়ক্রমে এসআই পদে তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। তার বাড়ি পাশের জেলা মাগুরা সদরের বাহারবাগ গ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ঝিনাইদহ জেলায় চাকরি করছেন। কিছুদিন অন্যত্র বদলি হলেও ২০১৮ সালে তিনি শৈলকুপার হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি (এসআই) পদে যোগ দেন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় এসআই পদে যোগদান করেন।
সূত্র জানায়, মামলার তদন্তকারী এসআই ইদ্রিস আলীও তার (সাজ্জাদুর রহমান) সঙ্গে কোটচাঁদপুর ও শৈলকুপা থানায় চাকরি করেছেন। ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদুর রহমান আগেই খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আটক এসআই সাজ্জাদুর রহমানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত সাজ্জাদুর রহমান ফেনসিডিলসহ আটক প্রাইভেট কারেরও বেনামি মালিক।
এদিকে আরও জানা গেছে, জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব পরবর্তী টানা তিন দিন ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসে পরিকল্পিত ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই সময় তৎকালীন পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসানকে জিম্মি করে নানা ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল কায়েসসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন এ জেলায় কর্মরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, দীর্ঘ দিন থেকে জেলায় কর্মরত বেশ কয়েকজন কনস্টেবল, এসআই এবং পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক অভিযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর ঘুরে ফিরে তারা নানা পদ এবং পদবি ধারণ করে এ জেলায় পোস্টিং পেয়ে থাকে। এদের একটি অংশ স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং মামলা বাণিজ্য করে বাড়ি গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে ঝিনাইদহ সদর থানায় কর্মরত এসআই জাহাঙ্গীর ও সদ্য ঢাকা ডিএমপিতে বদলি হওয়া এসআই শামিম হোসেন প্রতারণার মামলার বাদী জেলা শহরের ব্যবসায়ী রাজু মল্লিকের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাসুদ রানা নামের এক সেনাসদস্য এসআই জাহাঙ্গীরের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন। সময়মতো কাউন্সিলিংয়ের ফলে তিনি আত্মহত্যা করেননি। জেলা পুলিশে চিহ্নিত কয়েকজন বর্ণচোরা সদস্য কর্মরত রয়েছে, যারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে মাদক-স্বর্ণ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। বছরের পর বছর তারা রয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে।
সুত্র: যুগান্তর